ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১২০টি মানব কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পর গত দুই দিনে উপত্যকাটির সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসব কঙ্কাল উদ্ধার করেন।
দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। তবে তারা এসে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কোনও কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহর থেকে অনেক ফিলিস্তিনি ফিরে এসে তাদের বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছুই অবশিষ্ট না পেয়ে হতবাক হয়ে গেছেন। তেমনই একজন ছয় সন্তানের জননী মানাল সেলিম। যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি একজন হেয়ারড্রেসার হিসেবে কাজ করতেন এবং তার বিয়ের পোশাকের একটি দোকান ছিল। তবে ফিরে এসে তিনি সেসবের কোনও কিছুই পাননি।
ধ্বংস হয়ে যাওয়া সবকিছু দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কয়েকটি ছিঁড়ে যাওয়া পোশাক বের করেন। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমরা থাকার জন্য কোনও জায়গা খুঁজে পাব। কিন্তু কিছু নেই। এটি আমার বাড়ি ছিল। ২৫ বছর ধরে একের পর এক ইটজুড়ে আমি এই বাড়ি তৈরি করেছিলাম। তিনি আরও বলেন, ‘এই ধ্বংসযজ্ঞ ভয়াবহ। এটি সর্বনাশের মতো।
এসব ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু ফিলিস্তিনির পচা গলা মরদেহ। গাজার সিভিল ডিফেন্স সদস্য হাইথাম হামস অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস(এপি)- কে বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা ১২০টি পচা মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এগুলো পুরোপুরি পচে গেছে কেবল কঙ্কালের অবশিষ্টাংশ রয়েছে।
এপির ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা একজন ব্যক্তির উরুর হাড়, একটি ছিঁড়ে যাওয়া শার্ট এবং এক জোড়া প্যান্ট বের করছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১৫ মাসের আগ্রাসনের পর রোববার (১৯ জানুয়ারি) বহুল কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায়। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতির প্রথমদিনে তিন নারী ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর বিনিময়ে ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
আরএইচ/