সোমবার, ০৫ মে ২০২৫ ।। ২২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৭ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
লাল কেল্লার মালিকানা চেয়ে মোগল সম্রাটের ‘বংশধরের’ দাবি খারিজ ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সেনানীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার হীন অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে’ শাপলায় শহীদদের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশের দাবি ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ ৫ই মে ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস: আমাদের চোখ খুলবে কবে? স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ ‘২৫ মার্চের কালরাতকেও হার মানিয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যা’ কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিতে হবে : স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন সংক্ষুব্ধ মুফতি ফয়জুল করীম, আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

ভ্রমণেও আবগারি শুল্ক: বেকায়দায় হজ এজেন্সি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : ভ্রমণে আবগারি শুল্ক যুক্ত হওয়া এবং সৌদি আরবের এয়ারপোর্ট বিল্ডিং চার্জ (আইও )যোগ না করায় হজযাত্রীদের পেছনে হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে এবার। আর এ কারণে বেকায়দায় পড়েতে হজ এজেন্সিগুলো। তবে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আর ডলারের মূল্য কমায় খুব বেশি অর্থ গুনতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভুলে উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের এয়ারপোর্ট বিল্ডিং চার্জ (আইও ) তিন হাজার ৭৪৬ টাকা যোগ না করে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আর চলতি অর্থ বছর বাজেটে আবগারি শুল্ক বেড়েছে এক হাজার টাকা। এছাড়া সৌদি এয়ারলাইন্স জনপ্রতি ভাড়া বাড়িয়েছে ২৩৩ টাকা। সব মিলিয়ে হজযাত্রী প্রতি চার হাজার ৯৯৭ টাকা বেড়েছে প্যাকেজ ঘোষণার পর। তবে শেষ রক্ষা হয়েছে ডলারের মূল্য কমে যাওয়ায়। তারপরেও হজহযাত্রীদের এবার বর্ধিত অর্থ গুণতে হচ্ছে দুই হাজার ৮৬৭ টাকা। এতে বেকায়দায় পড়েছে হজ এজেন্সিগুলো।

পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ শুরু। এ উপলক্ষে ২৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। এরইমধ্যে গত ৪ জুলাই হঠাৎ করেই পূর্বঘোষিত প্যাকেজের মূল্য থেকে হজযাত্রী প্রতি দুই হাজার ৮৬৭ টাকা বাড়ানো হয়। এতে হজযাত্রী খরচ বেড়ে প্রতি এক লাখ ২৭ হাজার ৫৯০ টাকা ভ্রমণ খরচ হবে। ইতোমধ্যে উড়োজাহাজ ভ্রমণের দ্বিগুণ আবগারি শুল্কসহ অন্যান্য বাড়তি খরচ মিটিয়ে গত ১ জুলাই থেকে টিকিট কিনতে শুরু করেছেন হজযাত্রীরা।

জানা গেছে, এখন থেকে দেশের বাইরে যাতায়াতের জন্য উড়োজাহাজে ভ্রমণ করতে গেলেও প্রত্যেক ফ্লাইটে এক হাজার টাকার পরিবর্তে আবগারি শুল্ক দিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা। সার্কভুক্ত দেশ ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক হাজার টাকার শুল্ক হয়েছে দুই হাজার টাকা। আর ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার টাকা।

গত ৩০ জানুয়ারি চলতি বছরের হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এতে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া ধরা হয় এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা ২১ পয়সা। এরমধ্যে উড়োজাহাজের মূল ভাড়া (এক হাজার ৪৭৫ ডলার) এক লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। উড়ড়োজাহাজ ভ্রমণে মূল ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেদ্দা ডিপারচার ট্যাক্স এক হাজার ৭৫ টাকা, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৬৪৫ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা, এম্বারকেশন ফি’র ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে ৭৫ টাকা, এক্সাসাইজ ডিউটি এক হাজার টাকা, সৌদি সরকারের সিকিউরিটি চার্জ ৩২২ টাকা, ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন দুই হাজার ১২ টাকা ৫০ পয়সা এবং উড়োজাহাজ ভাড়ার ওপর উৎসে কর ৩৫৬ টাকা ২১ পয়সা। প্যাকেজ ঘোষণার সময় ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এক ডলার ৮০ টাকা ৫০ পয়সা এবং সৌদি রিয়াল ২১ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে ধরা হয়। তবে ঘোষিত প্যকেজে সৌদি আরবের এয়ারপোর্ট বিল্ডিং চার্জ (আইও ) তিন হাজার ৭৪৬ টাকা যোগ করেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। এছাড়া ঘোষিত প্যাকেজে এক্সাসাইজ ডিউটি ছিল এক হাজার টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে দ্বিগুণ করা হয়েছে।

এদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে ২৩৩ টাকা বাড়িয়ে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এবার ৪৫ দিনের প্যাকেজ দিয়ে হজ টিকিটের মূল্য ঘোষণা করেছে জনপ্রতি এক লাখ ২৭ হাজার ৮২৩ টাকা।

হজযাত্রী প্রতি বাড়তি এই উড়োজাহাজ ভাড়া প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ)শাকিল মেরাজ বলেন, ‘হজ প্যাকেজের সময় উড়োজাহাজের মূল ভাড়া ছিল  এক হাজার ৪৭৫ ডলার, এখনও সেই একই রেট-ই আছে। কোনও ধরনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি, কোনও চার্জও যু্ক্ত করেনি। হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় মূল ভাড়া যা ছিল সেটাই আছে। বরং হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ডলার প্রতি রেট ধরা হয়ছিল ৮০ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে, এখন সেটা হয়েছে ৮০ টাকা ২০ পয়সা। ডলারের মূল্যমান কমার কারণে কিছু খরচ কমেছে। আগে বিমানের মূল ভাড়া ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা ৫০ পয়সা এখন কমে সেটা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ২৯৫ টাকা।’

শাকিল মেরাজ বলেন, ‘উড়োজাহাজের মূল ভাড়ার সঙ্গে এজেন্ট কমিশন, বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের কিছু চার্জ যোগ হয়। এরমধ্যে রয়েছে, জেদ্দা ডিপারচার ট্যাক্স, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ, এম্বারকেশন ফি, এম্বারকেশন ফি’র ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স, উড়োজাহাজ ভাড়ার ওপর এক্সসাইজ ডিউটি, সৌদি সরকারের সিকিউরিটি চার্জ, ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন, উড়োজাহাজ ভাড়ার ওপর উৎসে কর।’

শাকিল মেরাজ আরও বলেন, ‘উড়োজাহাজ ভাড়া ক্ষেত্রে এ বছর আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। সৌদি আরব এশিয়ার দেশ হওয়ায় সেটা হচ্ছে দুই হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল এক হাজার টাকা। ফলে বিমান ভাড়া বাড়িয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ করলে, তা হবে অযৈাক্তিক।’

গত বৃহস্পতিবার হজ এজেন্সি মালিকেদের সংগঠন হাব এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে হজ প্যাকেজে পূর্ব ঘোষিত উড়োজাহাজ ভাড়া অনুযায়ী হজযাত্রী পরিবহনের আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, হজ প্যাকেজ অনুসারে ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা উড়োজাহাজ ভাড়া আদায় করেছেন। হজ ফ্লাইটের শেষ সময় হজযাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করার সুযোগ নেই। এ কারণে এ বর্ধিত বিমান ভাড়া এজেন্সি মালিকদের বহন করতে হবে। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হজযাত্রী প্রতি বর্ধিত বিমান ভাড়া পরিশোধ করা এজেন্সিদের পক্ষে কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ডলারের মূল্য ধরা হয় ৮০ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ বর্তমানে ডলারের মূল্য রয়েছে ৮০ টাকা ২০ পয়সা। এ কারণে উড়োজাহাজ ভাড়া না বাড়িয়ে বরং ঘোষিত মূল্য থেকে ৪৫০ টাকা কমানো উচিত উচিত।

এ প্রসঙ্গে হাব মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আগেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়, তা সারাদেশের মানুষ জানেন। এখন হঠাৎ করে খরচ বাড়ালে হজ যাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেকেই বাড়তি খরচ দিতে চাইবেন না। দিতে হবে এজেন্সি মালিকদেরই।’

শাহাদাত হোসাইন তসলিম আরও বলেন, ‘আইও চার্জ প্রতিবছরই দিতে হচ্ছে। এ বছর এই চার্জ যোগ না করে ভুল করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাদের ভুলের খেসারত আমাদের দিতে হবে কেনও?’ হাবের অর্থ সচিব মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, ‘হজ প্যাকেজ সরকারিভাবে ঘোষিত হয়, সে প্যাকেজ ঘোষণার সময় কেউ ভুল করেলে সে দায় কেনও হজ এজেন্সিদের নিতে হবে? এখন হজ ফ্লাইটের শুরুর সময় বাড়তি টাকা হজযাত্রীদের কাছ থেকে চাইলে জটিলতা তৈরি হবে।’

মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ বছর এমনিতেই নানা কারণে খরচ বেড়ে গিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় মোয়াল্লেম ফি বাবদ হজযাত্রীদের কাছ থেকে ২৩ হাজার ৪১৩ টাকা নিলেও এখন সেটা দিচ্ছে ২০ হাজার ৩৫১ টাকা হারে। হাজযাত্রী প্রতি এখানে প্রতি ৩ হাজার ৬২ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সব কিছুতে ব্যয় বাড়াতে হাজিদের ওপর চাপ বাড়ছে।’

এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। হাবের চিঠি এখন হাতে পাইনি। যদি কোনও অভিযোগ আসে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাড়া বেড়েছে, এমন কোনও তথ্য আমার কাছে নেই।’

-এজেড


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ