রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন অফিস সংলগ্নস্থানে অবস্থিত শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এদিন বিকেল থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যার দিকে নিজেরাই ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা। এর আগে শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।
আলটিমেটাম শেষে শুক্রবার বিকেলে শহরের ভেদভেদী বাজার থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ‘মার্চ ফর ফ্যাসিবাদী আইকন’ কর্মসূচি শুরু করা হয়।
মিছিলটি সার্ভার স্টেশনের সামনে এসে ৩ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। প্রশাসনের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে নিজেরাই শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্যটি ভাঙার কাজ শুরু করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এনসিপি) সার্চ কমিটির সদস্য মো. ইমাম হোসাইন ইমু বলেন, সারা দেশের কোথাও ফ্যাসিবাদীর মূর্তি বা ভাস্কর্য নেই, কিন্তু আমাদের রাঙামাটিতে রয়ে গেছে। এই মূর্তি অপসারণের জন্য আমরা দীর্ঘ ৯ মাস প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, কথা বলেছি।
কিন্তু তারা বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গত ৩ দিন আগেও আমরা প্রশাসনকে এই ফ্যাসিবাদের মূর্তি অপসারণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের নির্লিপ্ততার কারণে আজ রাঙামাটির আপামর ছাত্র-জনতা এই মূর্তি অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের জেলা আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান রোমান বলেন, আমরা ৩ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই আমরা এই মূর্তি অপসারণের কাজ শুরু করেছি।
এই মূর্তি অপসারণের মাধ্যমে রাঙামাটি কলঙ্কমুক্ত হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটায় এক সংবাদ সম্মেলন করে শুক্রবার ‘মার্চ ফর ফ্যাসিবাদী আইকন’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলো প্লাটফর্মটি।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর নানান পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাস্কর্যটি ত্রিপল দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছিলাম। দুইদিন আগে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা নামের একটি প্লাটফর্ম থেকে আমাকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিলো ভাস্কর্যটি ভাঙার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে। আমি তাদের বলেছি, যেহেতু একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে, সেহেতু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এটি ভাঙা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আবার এই ভাস্কর্যের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলমান আছে। এই অবস্থায় আমি যদি এটি ভাঙি তাহলে তারা আলামত নষ্টের অভিযোগ করতে পারে। তাই আমি তাদের বলেছি, এটা আমার পক্ষে অসম্ভব, তবে আপনারা ভাঙলে আমার বলার কিছু নাই। এরপর আজ সন্ধ্যায় শুনেছি, তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে সেটি ভাঙছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জেলা সার্ভার স্টেশন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও রাঙামাটি সদর সেনা জোন সংলগ্ন স্থানে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় শেখ মুজিবের বিশাল এই ভাস্কর্য। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় এটি নির্মিত হয়েছিলো।
শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় এই রিপোর্ট লেখার সময়ও বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙার কাজ করছিলো ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় মাইকে তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
এসএকে/