বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ২১ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
সাহিত্য-সাংবাদিকতায় বাড়ছে কওমি তরুণদের আগ্রহ ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন চায় সাধারণ আলেম সমাজ একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতিকে শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান কোরআনের হাফেজের বাবা-মাকে নুরের মুকুট পরানো হবে: মাওলানা লোকমান মাযহারী ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ৩৩ ডিসিকে ওএসডি আল্লাহ ও নবীর অবমাননায় শাস্তির দাবিতে ১৫০ আলেমের বিবৃতি কওমি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নির্মাণে সম্মানজনক ১২ পেশা কুমিল্লায় বেতুয়া হুজুরের বাড়ির ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল ২১ ফেব্রুয়ারি ‘পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচিত করার উদ্দেশ্যেই চরমোনাই মাহফিল প্রতিষ্ঠা’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইমামরা প্রশিক্ষণের আওতায় আসছে: ধর্ম উপদেষ্টা

আলেমদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না : আজহারী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||মো. আব্দুল মান্নান||

খবরদার! আলেমদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে নিজেদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবেন না। যারা ইসলামের কথা বলে, কুরআনের কথা বলে তারা ধর্মব্যবসায়ী নয়। আমরা ধর্মের কথা প্রচার করি। যেটা দেশের জন্য ও জনগণের জন্য ভালো সেটাই প্রচার করি। আমাদের বলে মৌলবাদী। আমরা আসল কথা বলি।  ভালো কথা বলি। দেশপ্রেমের কথা বলি। জনগণের কথা বলি। ইসলামের কথা বলি, দেশের সমৃদ্ধির কথা বলি। এজন্য আমাদের বলে মৌলবাদী। জেনে রাখবেন, এদেশের আসল পরিচয় ইসলাম। ধৈর্য এমন এক গাছ, এই 
গাছের চারদিকে কাঁটা কিন্তু এর ফল সুমিষ্ট। আপনারা ১৬ বছর ধৈর্য ধরেছেন; ফল দিয়েছেন  আল্লাহ। বিপদ আসবে, জুলুম আসবে। ধৈর্যধারণ করতে হবে। ফলাফল পেয়ে যাবেন।

গতকাল (শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সূরা আহযাবের ৩৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর করার সময় তিনি এসব কথা বলেন বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। আল ইসলাম ট্রাস্ট, ময়মনসিংহ-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই মাহফিল বেলা ২টায় শুরু হয়। 

 আয়াতের শানে নুযুল বলতে গিয়ে আজহারি বলেন, আম্মাজান উম্মে সালামা (রা.)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন। আয়াতের আলোকে মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, নারী-পুরুষকে আল্লাহ তায়ালা সমান মর্যাদা দান করেছেন। আমলের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ দান করলে যে সাওয়াব, একজন মহিলা দান করলেও সেই পরিমান সাওয়াব। একজন পুরুষ রোজা রাখলে যে সাওয়াব হয় একজন মহিলা রোজা রাখলেও সেই সাওয়াব আল্লাহ তায়ালা দিয়ে থাকেন। আমলের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয়ই সমান। তিনি বলেন, আল্লাহর আদেশের সামনে সারেন্ডার করার নামই হলো ইসলাম। ইসলাম মানলেও হবে বা না মানলেও হবে- বিষয়টি এমন নয়। ইসলাম পূর্ণরূপে মানতে হবে। মুসলমান সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কথার সামনে কোন কথা বলে না। নত থাকে। 

বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারির  ময়মনসিংহে আগমন উপলক্ষে বিভাগজুড়ে আনন্দ ও  উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে। কাছে থেকে প্রিয় বক্তাকে দেখতে ও তার বয়ান শুনতে অনেকে আগের রাতে মাঠে এসে অবস্থান নেন। 

আলোচনায় উপস্থিত শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মিজানুর রহমান  আজহারি বলেন, আল্লাহর আইন দিয়ে যদি আপনাকে কোন আদেশ করা হয়, মানবেন না? অবশ্যই মানবেন। যখন ইবরাহীম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা সারেন্ডার করতে বললেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি সারেন্ডার করলেন। ‘আসলামতু বিরাব্বিল আলামীন। আমান্না, ওয়া আতা'না।’ এটাই হলো মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করলেই ইজ্জত। ইসলামের মধ্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সম্মান রেখেছেন। এর বাইরে সম্মান খুঁজলে সম্মান পাওয়া যাবে না। 
তিনি আরও বলেন, ইসলাম বিরোধী কোন মতবাদ আমরা মানি না, মানবো না। ‘ইন্নাল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত…’ এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বাস এত গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক, পার্টনারশিপ এগুলো টিকে বিশ্বাসের উপর। মানুষের মুখে বাগধারা প্রচলিত আছে, 'বিশ্বাসে মিলে বস্তু, তর্কে বহুদূর।' দেখা যায়, কক্সবাজারের গাড়িতে উঠে যাত্রী দেয় ঘুম। কারণ, ড্রাইভারের উপর তার বিশ্বাস আছে যে, তাকে অন্য কোথাও নিবে না। কক্সবাজারেই পৌঁছাবে। বাচ্চাকে নিয়ে বাবা খেলাধুলা করে। উপর দিকে ফিঁকে মারে। বাচ্চা ভয় পায় না। সে জানে আব্বু তাকে নিচে ফেলে মেরে ফেলবে না। বিমান অনেক উপর দিয়ে যায়। যেখান থেকে পড়ে গেলে মরা ছাড়া আর উপায় নেই। তবু যাত্রীরা ভয় না পেয়ে বরং আরামে ঘুমায়। কেননা, পাইলটের প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে যে, তিনি মেরে ফেলবেন না। এজন্য আল্লাহ তায়ালাকেও মুমিনরা না দেখে এভাবে বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের যত কষ্টই দেন না কেন তিনি বান্দার মঙ্গলের জন্যেই সব কিছু করেন। এজন্য আল্লাহ তায়ালাকে না দেখে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। এজন্য আমরা আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করবো। 'আল্লাহর নাম যতই জপি ততই মধুর লাগে, নামে এত মধু আছে কে জানিত আগে।' 

মাহফিলে তিনি ঈমানে মুফাসসালের ৬টি বিষয়ের উপর বয়ান করেন। তিনি বলেন, ঈমান ছাড়া নেক আমলের কোন দাম নেই। ঈমান হলো সফলতার চাবিকাঠি। ক্বাদ আফলাহাল মুমিনূন। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১)  ঈমান বিজয়ের পূর্ব শর্ত হলো, ‘ওয়ালা তাহিনু ওয়ালা তাহযানু ওয়া আনতুমুল আ'লাওনা ইন কুনতুম মুমিনীন।’ অর্থাৎ তোমরা চিন্তা করো না, নিরাশ হয়ো না, ভেঙে পড়ো না। বিজয় তোমাদের হবেই যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯) 

আজহারী বলেন, বিশ্বাস হলো, সবচেয়ে দামী। তোমরা নামাজ যত্নের সাথে আদায় কর। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা মুবারক ফুলে যেত। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, হে নবী, আপনার আগের গুনাহও মাফ, পরের গুনাহও মাফ। তাহলে কেন এত দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকেন? জবাবে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি কি শুকরিয়া আদায় করবো না? আমি কি শোকরগোজার বান্দা হবো না- ওয়াল ক্বানিতীনা ওয়াল ক্বানিতাত। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৩৫) বান্দাকে আল্লাহর অনুগত হতে হবে। মক্কার ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান আস সুদাইস মুনাজাতে অনেক কান্নাকাটি করেন। আমাদেরকেও কাঁদতে হবে। ওয়াস সাদিকীনা ওয়াস সাদিকাত। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৩৫) মিথ্যার সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকতে পারবে না। বস ফোনে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায়? বাসায় থেকে বলেন যে, জ্যামে স্যার। এরকমভাবে মিথ্যা আশ্বাস না দেই। মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা রায় এগুলো আমরা চাই না। আল্লাহ সত্যবাদী। তিনি সত্যকেই পছন্দ করেন। নবীজীও সত্যবাদী। জিন্দেগীতে তিনি কোন মিথ্যা কথা বলেননি।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, নবীজী (সা.) বলেন, হে আমার জাতির লোকেরা, আমি যদি বলি পাহাড়ের পাদদেশে শত্রু লুকায়িত আছে। তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে? তারা বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করবো। কেননা, আমরা তোমাকে জীবনেও মিথ্যা বলতে শুনিনি। ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু কূনূ মায়াস সাদিকীন।’ আমরা কাদের সাথে থাকবো? সত্যবাদী নাকি মিথ্যাবাদীর সঙ্গে? আমরা খবর পড়বো কার? মিথ্যাবাদীর নাকি সত্যবাদীর? ওয়াস সাবিরীনা ওয়াস সাবিরাত। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৩৫) 'ধৈর্য্যধারণ করার শক্তি দাও গো মেহেরবান, আমায় দাও গো মেহেরবান, বুকের ভেতর ব্যথার নদী বইছে অবিরাম।' বিপদ আসলে সবার আগে শেয়ার করবো আল্লাহর সাথে। ওয়াসবির আলা মা ইয়াকুলূনা ওয়াহজুরহুম হাজরান জামিলা। (সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত : ১০)

তিনি বলেন, ‘আবতার’ বলে আমাদের নবীজীকে গালি দিত। আমাদেরকেও গালি দেয় নাকি দেয় না? রাজাকার রাজাকার বলে গালি দেওয়ার দিন শেষ। আমাদেরকে বলে মৌলবাদ। আমরা আসল কথা বলি। ভালো কথা বলি। দেশপ্রেমের কথা বলি। জনগণের কথা বলি।  ইসলামের কথা বলি। দেশের সমৃদ্ধির কথা বলি। এজন্য আমাদের বলে মৌলবাদী। আলেমদের বলে ধর্মব্যবসায়ী। খবরদার! আলেমদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলবেন না। আমরা ধর্মের কথা প্রচার করি। যেটা দেশের জন্য ও জনগণের জন্য ভালো সেটাই প্রচার করি। যারা ইসলামের কথা বলে, কুরআনের কথা বলে তারা ধর্মব্যবসায়ী নয়। খবরদার আলেমদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না, নিজেকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবেন না। এদেশের আসল পরিচয় ইসলাম। এসব গালিগালাজ হজম করার আহ্বান জানিয়ে আজহারি বলেন, আপনারা ধৈর্য্যধারণ করুন। ধৈর্য এমন এক গাছ যার চারদিকে কাঁটা কিন্তু এর ফল সুমিষ্ট। আপনারা ১৬ বছর ধৈর্য ধরেছেন, ফল দিয়েছেন আল্লাহ। বিপদ আসবে, জুলুম আসবে। ধৈর্যধারণ করতে হবে। ফলাফল পেয়ে যাবেন। আলেমদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে নিজেদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়ে দাঁড় করাবেন না। এদেশের আসল পরিচয় ইসলাম। ধৈর্য্যশীলদের আল্লাহ পছন্দ করেন। ‘ক্বাদ আফলাহাল মুমিনূন’ অর্থাৎ অবশ্যই মুমিনরা সফল। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১)

তিনি আরও বলেন, নামাজ পড়ার সময় এমনভাবে পড়বেন, মনে করবেন এটাই আমার শেষ নামাজ। খুশু খুজুর সাথে নামাজ পড়বেন। ওয়াল খাশিয়িনা ওয়াল খাশিয়াত। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৩৫) সবমিলিয়ে এই আয়াতের আলোকে তিনি মুমিন মুমিনাতের মোট ১০টি গুণ নিয়ে আলোচনা করেন। 

বিকাল সাড়ে তিনটায় মুনাজাতের মাধ্যমে আলোচনা শেষ করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারি।

ড. মিজানুর রহমান আজহারি বেলা ২টায় মাহফিলের মঞ্চে ওঠেন। এ সময় আয়োজক কমিটি আল ইসলাম ট্রাস্ট, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল করীম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা কামরুল আহসান ইমরুল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, সহসাধারণ সম্পাদক মাহবুব ফরাজী, শম্ভুগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি মাওলানা মফিদুল ইসলাম, মহানগর উলামা শাখার সুরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 


এর আগে স্বাগতঃ বক্তব্য রাখেন মাহফিলের সভাপতি শায়খুল হাদীস হাফেজ মাওলানা নূরুল ইসলাম কাসেমি। ঐতিহাসিক এ মাহফিলে আমন্ত্রিত মুফাসসির হিসেবে যোগদান করেন এটিএন বাংলার আলোচক ও সোবহানবাগ মসজিদ, ধানমন্ডির খতীব শাইখ শাহ ওয়ালী উল্লাহ, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তাফসীরকারক ও রূপায়ণ টাউন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন, কুমিল্লার মাওলানা মনিরুল ইসলাম মজুমদার প্রমুখ। এসময় দেশ বরেণ্য আমন্ত্রিত উলামায়ে কেরাম, বিশিষ্টজন, কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক সাংবাদিক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা ও লাখো জনতা উপস্থিত ছিলেন। মহিলাদের জন্য জেলা স্কুল মাঠে আলাদা ব্যবস্থা ছিল। 

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ