রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ ।। ৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবক শুরু বরিশাল জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়ায় ২৯ এপ্রিল (সোমবার) জামিয়ার সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ নতুন শিক্ষাবর্ষের সবক শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামিয়ার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, ইখলাস ও নিয়তের গুরুত্ব ইসলামে অপরিহার্য। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে সতর্ক করেছেন।

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বার্তায় আরো বলেন, জামিয়ার সকল উস্তাদ, কর্মকর্তাসহ যিম্মাদারগণের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে আপনাদেরকে চলতে হবে। আপনাদেরকে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা ও চলাফেরায় পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। জামিয়ার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও আইন পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে কোন শিথিলতা করা যাবে না। যথারীতি দরসে সকল ছাত্রকে হাজির থাকতে হবে এবং দরসের বাইরের সময়ের উত্তম ব্যবহার করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে অত্র জামিয়ার শাইখুল হাদিস ও শিক্ষা-সচিব মাওলানা মুজাম্মিল হোসাইন খান বলেন, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা সবার জন্য অপরিহার্য। ইলমে নববীর এই শিক্ষার শিক্ষক হলেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন। কাজেই ওহীভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমেই আলোকিত ও আদর্শিক মানুষ তৈরি করতে কওমি মাদরাসা এবং ইসলামি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারণ ইসলামী শিক্ষাই হলো জাতির মেরুদণ্ড। কাজেই ইসলামি শিক্ষাকে সর্বস্তরে চালু করা এবং এ শিক্ষা দেয়া প্রত্যেকের দায়িত্ব। তিনি ইলমে দীনের এই ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখতে দীনি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রদের চারটি বিশেষ কাজ করার জন্য ইমাম বুখারী তার রুবায়িয়্যাতে উল্লেখ করেছেন।  বিষয় চারটি হলো ১. রেজায়ে মাওলা। ২. ইলম অনুযায়ী আমল। ৩. বক্তৃতার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেযা। ৪. লেখনির মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রচার করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা মুফতি আব্দুল কাদের কাসেমী  বলেন, ইলমে দীন অর্জন করার আসল উদ্দেশ্য হলো রেজায়ে মাওলা বা আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাই দুনিয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং আল্লাহকে রাজি খুশি করার উদ্দেশ্যে ইলমে দীন অর্জন করতে হবে। এবং দ্বীনী ইলম অর্জনের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ছাত্রদের জন্য একটি বড়ো ফেতনা হলো মোবাইল-ফোন। এই মোবাইল ফোন- ছাত্রদের জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছ। সুতরাং প্রতিটি তালিবুল ইলমকে নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যতদিন পর্যন্ত তালিবুল ইলম থাকবো। ততদিন পর্যন্ত মোবাইল-ফোন ব্যবহার করবো না। ফারাগাতের আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে না নেয়ার সংকল্প করতে হবে। তাহলেই সফলতা ছাত্রদের পদচুম্বন করবে।

জামিয়ার উস্তাজুল হাদিস ও সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া ছাত্রদের প্রশংসা করে বলেন, আপনারা দ্বীনের বৃহৎ পরিসরে খেদমত করার মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েই দুনিয়াবী শিক্ষা ও খ্যাতির সম্ভাবনাকে পরিত্যাগ করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে সফলতা আসতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে পূর্ণ মনোযোগ ও কঠোর অধ্যাবসায়ের সাথে দরসে নিয়মিত হাজির থাকতে হবে এবং অন্য সময়ে কিতাব মুতালায়া করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইলম অর্জনের জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। একাগ্রতার সাথে যদি ইলম অর্জন করি তাহলে ইলেমের মাঝে বরকত হবে। রাসূল সা. জাবালে হেরায় অবস্থান করেছেন একাগ্রতা ইনহিমাকের সাথে তিনি আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।

সাথে উস্তাদ ও কিতাবের প্রতি ইহতেরাম অত্যন্ত প্রয়োজন আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. কিতাবের এতো ইহতেরাম করতেন যে তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে হাশিয়া মোতালায়া করতেন।

জামিয়ার উস্তাজুল হাদিস মাওলানা মুফতি সাইফুল্লাহ আল-মানসুর বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হলে যোগ্য আলেম হয়ে আপনাদেরকে গড়ে ওঠতে হবে। এই জন্য পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইলমে ফিক্বাহ’র মৌলিক জ্ঞানসহ অন্যান্য সকল বিষয়েও পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। ইলমে দুর্বলতা থেকে গেলে এটা উপকারীর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ বিষয়ে সকলকে যত্নবান ও সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের সংকট ও দুর্দিনে কওম আপনাদের নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে। আর আপনারা যোগ্য আলেম রূপে গড়ে ওঠতে সক্ষম হলে তবেই কওমের পীপাসা নিবারণ করতে পারবেন।মাদ্রাসার কানুন পড়ে শুনেন জামিয়ার মুহাদ্দিস মুফতি মফিজুর রহমান।

ইফতেতাহি দরস অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রকিবুল হাসান খান ও মাওলানা মুফতি মামুনুর রশিদ ও মাওলানা মুফতি তালহা হোসাইন মাওলানা এনায়েতুর রহমান খান এবং মাওলানা মুফতি আব্দুর রাকিব প্রমুখ।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ