রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ ।। ৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


মাত্র ৬ মাসে হাফেজ হলেন ৯ বছরের শিশু যোবায়ের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবিব মুহাম্মাদ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি 

পবিত্র কুরআন মুখস্থ করতে তথা হাফেজ হতে সাধারণত তিন বছর সময় লাগে। কিন্তু মাত্র ৬ মাসে হিফজ সম্পন্ন করে বিস্ময় সৃষ্টি করলেন ৯ বছরের শিশু মুহাম্মাদ যোবায়ের রহমান ওহী। তিনি সদর লক্ষ্মীপুরের মটকা মসজিদ সংলগ্ন তাহফিজুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসার ছাত্র।

বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে কুরআনের হাফেজ বানাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই ২০১৪ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। তখন যোবায়ের মাত্র ২ বছরের শিশু। তবে বাবাকে হারালেও বাবার স্বপ্ন বৃথা যেতে দেননি ছোট্ট শিশু যোবায়ের। যেনতেনভাবে নয়। বরং বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমে। 

এই কীর্তি অর্জনকারী যোবায়ের রহমানের  বাড়ি সদর লক্ষ্মীপুর বাগবাড়ির সোনাপুর ইউনিয়নে। তার বাবা একজন প্রবাসী এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মায়ের নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। 

এই অসাধ্যকে কীভাবে সাধ্য করলেন সেই প্রশ্নের উত্তরে শিশু যোবায়ের রহমান আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি একজন হাফেজ হবো। বাবাকে হারালেও বাবার স্বপ্ন হারাতে চাইনি। সেই স্বপ্ন পূরণে আমি ছিলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সবাই ঘুমালেও আমি না ঘুমিয়ে সবক পড়তাম। ভোর রাতে আগে আগে  উঠে যেতাম।  সময় নষ্ট না করে পরিশ্রম করতাম। ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য তা সহজ করে দিয়েছেন। তবে এই সফলতা আমার একার নয়। আমার শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক সকলের দোয়া,আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টায় আমি তা অর্জন করতে পেরেছি। 

যোবায়ের আরো জানান, তিনি শুধু হাফেজ নয়, ভবিষ্যতে হতে চান একজন প্রকৃত আলেম। নিবেদিত করতে চান নিজেকে দ্বীন ইসলামের খেদমতে। তার সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

তাহফিজুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সালেমুদ্দিন বলেন, যোবায়ের একজন বিনয়ী ও মেধাবী শিক্ষার্থী। তার বাবা না থাকলেও আমরা তাকে বিশেষ তত্ত্বাবধানে রেখেছি। হিফজ শুরুর প্রথম দিনেই সে এক পারা সবক শুনিয়েছে। তার সদিচ্ছা, শিক্ষকদের প্রচেষ্টা  এবং প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতায় আজকে সে এই বিস্ময়কর  ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে  আজ গর্ব বোধ করছি। তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। 

ছেলের এমন কীর্তিতে উচ্ছাসিত স্বামী হারানো যোবায়ের রহমানের মা। তিনি বলেন, আমার ছেলের এই সফলতায় আমি ভীষণ আনন্দিত। বাবা না থাকলেও বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারায় আমি প্রশান্তি অনুভব করছি। আল্লাহর কাছে আমি পরম কৃতজ্ঞ। সাধারণত ১৫/১৬ পারা হলে শয়তানের ধোকায় পড়ে  বাচ্চারা পড়তে চায় না । আল্লাহর খাস মেহেরবানী এবং শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতায়  আমার ছেলে সেই পথ অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।  এজন্য আমি সকলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ।

জানা যায়, তাহফিজুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসার পথ চলার বয়স মাত্র দুই বছর। এরই মাঝে তা সফলতার সাথে এগিযে যাচ্ছে। চলতি বছরে হাফেজ যোবায়েরসহ আরো ৫ জন শিক্ষার্থী হিফজ সম্পন্ন করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক  বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ