|| নাঈমুর রহমান নাঈম ||
বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগ। সবখানেই এখন দক্ষ ও যোগ্য মানুষের চাহিদা। তাই জীবনে এগিয়ে যেতে হলে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হয়। তাই শিক্ষার্থীরা আজকাল নানান প্রশিক্ষণ কোর্সে বা কর্মশালায় অংশ নিচ্ছে, যাতে তারা তাদের দক্ষতাকে শাণিত করতে পারে। বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যম। এসবের মধ্যে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ কর্মশালা বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আর এই প্রেক্ষাপটে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে রাজধানীর টিকাটুলিতে মাদরাসাতুত তাকওয়ায় আয়োজন করা হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী সাহিত্য ও সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
কর্মশালার পরিচালক মুফতি হানিফ আল হাদি-এর কাছে এই কর্মশালার সূচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, 'সাহিত্য সাংবাদিকতার এই কারিকুলাম সর্বপ্রথম তৈরি করেন আওয়ার ইসলামের সম্পাদক হুমায়ূন আয়য়ুব সাহেব। ২০০৭ সাল থেকে বেফাকের অধীনে এই কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছে। বেফাকের সাবেক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী রাহ.-এর পৃষ্ঠপোষকতা হুমায়ুন আয়য়ুব সাহেব তখন থেকে পরিচালনা করে আসছে। ২০১০ সালে আমাকে হুমায়ুন আইয়ুব সাহেব সহকারী হিসেবে নেন। এবং ২০১১ সাল থেকে আমার উপরেই কোর্সের মূল দায়িত্ব চলে আসে।'
তিনি আরো বলেন, 'আমাদের এ কোর্সে মূল টার্গেট কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় পারদর্শী করে তোলা। তবে অন্য অঙ্গনের কেউ যদি আসে এবং এখানকার পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারে তাহলে আমাদের কোন বাঁধা নেই।’
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণত বিভিন্ন লেখালেখি চর্চায় দক্ষ হয়। সাপ্তাহিক, মাসিক দেয়াল পত্রিকা, সাময়িকী, ম্যাগাজিন ইত্যাদি প্রকাশনার মাধ্যমে তারা নিজেদের মেধাকে কাজে লাগায়। তাই তাদের এই প্রতিভাকে আরও শাণিত করতেই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
সাহিত্য সাংবাদিকতা সম্পর্কে পরিচালক বলেন, 'সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মূল শক্তি হলো ভাষা। এই কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের ভাষাগত যোগ্যতা, শুদ্ধ উচ্চারণ, সঠিক বানান ও ব্যাকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মুফতি হানিফ বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা হলো বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ঘটনা দেখা, দক্ষ হাতে তা লিপিবদ্ধ করা এবং স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা। কিন্তু বর্তমান হলুদ সাংবাদিকতা ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকতার গুরুত্ব অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তাই সত্যিকার সাংবাদিক হতে হলে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ সাংবাদিকের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে বলে আমি মনে করি'।
এদিকে এই কর্মশালার শিক্ষার্থীদেরকে কোর্স নিতে আসার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা আওয়ার ইসলামকে জানায়, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাতৃভাষায় অত্যন্ত শুদ্ধভাবে কথা বলতেন। তাই আমরাও যেন মাতৃভাষাকে শুদ্ধভাবে শিখতে পারি এবং ইসলামের সঠিক বার্তা তুলে ধরে বাতিল শক্তির মোকাবিলা করতে পারি বলে এটাই এই কোর্স থেকে আমাদের প্রত্যাশা।'
কর্মশালার সহকারী পরিচালক মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ কাওসার জানিয়েছেন এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন:
- হযরত উবাইদুর রহমান খান নদভী, মহাপরিচালক, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
- মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের,সহ-প্রধান পরিচালক বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
- মাওলানা লিয়াকত আলী, সিনিয়র সহ-সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
- মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, বিশিষ্ট আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক
- জহির উদ্দিন বাবর, বার্তা সম্পাদক, ঢাকা মেইল ডটকম
- মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব, সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম
এই কর্মশালা শুধুমাত্র সাংবাদিকতা শেখানোর জন্য নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে কলম ধরতে শেখাবে, সত্যের পক্ষে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করবে।
আয়োজক ও প্রশিক্ষকগণ আশা করছেন, এই কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় দক্ষ হয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এবং দ্বীনের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে।
হাআমা/