রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ২০ পৌষ ১৪৩১ ।। ৫ রজব ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল বেফাকের মজলিসে শূরার বৈঠক সেভেন সিস্টার্সকে বাঁচাতে ভারত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে: সারজিস ইসলামে নারী শিক্ষার বিকল্প নেই: মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী ‘ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে শেষ করে দিয়েছে’ কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাহে রজবের ফজিলত ও বিধান বরিশালে ৩ দিন ব্যাপী নূরানী মুআল্লিমদের জোড় ১৪ জানুয়ারি প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা নতুন শিক্ষাবর্ষের সকল পাঠ্যপুস্তক নিরীক্ষণ করবে খেলাফত আন্দোলন সাদপন্থীদের বিচার দাবিতে ১০ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ ‘হাতে রক্তের দাগ নিয়ে সাদপন্থীদের ইজতেমা করার অধিকার নেই’

২০২৪ সাল জুড়ে ইসলামি অঙ্গণের সাফল্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

সদ্য বিদায় দিয়েছে ২০২৪। এসেছে ২০২৫। নতুন বছর। নতুন সাল গণনা। ছব্বিশের সবচে বড় ঘটনা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। এদিকে ২০২৪ সাল জুড়ে ইসলামি অঙ্গনে নানা পরিবর্তন ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সরব ছিল। দেশের হাফেজদের বিশ্বজয়, অন্তর্বর্তী সরকারে আলেম উপদেষ্টা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব, ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলির মধ্যে সংকট দূরীকরণ, কাছাকাছি আসা, বণ্যায় আলেমদের ব্যাপক সেবাসহ শিক্ষামূলক সাফল্য ইত্যাদি সব মিলিয়ে ছব্বিশের বছরটি একদিকে যেমন ইসলামী চিন্তাধারায় গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, অন্যদিকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও নতুন ইতিবাচক কল্যাণমূলক আবহ সৃষ্টি করেছে। এবার জেনে নেওয়া যাক ২০২৪ সাল জুড়ে ইসলামি অঙ্গণের সাফল্যগাঁথার আখ্যান। 

আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় সাফল্য হাফেজদের বিশ্বজয়:

২০২৪ সালের বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক কুরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় অসাধারণ সাফল্য বয়ে আনেন দেশের হাফেজরা। হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ, হাফেজ আনাস মাহফুজ, হাফেজ বশির আহমাদ এবং হাফেজ আনাস বিন আতিক—এরা সকলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়া হাফেজ আবু রায়হান, হাফেজ তানভির আহমাদ, হাফেজ আম্মার বিন মাসুম, হাফেজ মুশফিকুর রহমান ও হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম উল্লেখযোগ্য, যাদের সাফল্যে বাংলাদেশ আবারও বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে। বিশ্ব দরবারে দেশের পতাকা সমুচ্চ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথম আলেম উপদেষ্টা

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট দেশের সরকার ব্যবস্থায় প্রথমবারের মতো আলেম উপদেষ্টা পদ সৃজিত হয়। এ পদে ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে দেওয়া হয়। তাঁর এই পদে নিয়োগের ঘটনাটি দেশের ইসলামী সমাজের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব নিয়োগ

২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবরে দেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ পান শীর্ষ আলেম মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক। মুহাক্কিক আলেম হিজসাবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে ইসলামি অঙ্গণে। বলা হয়, খতিব উবায়দুল হক রহ. এর পরে জাতীয় মসজিদে একজন যোগ্য-উপযুক্ত পেয়েছে দেশ। তাঁর নেতৃত্বে মসজিদে নতুন দিশা ও শান্তির পরিবেশ ফিরে আসে। ইসলামী প্রতি জুমায় তাঁর বয়ান-আলোচনায় সমকালীন নানা বিষয়ের দিকনির্দেশনা পাচ্ছে মানুষ। সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে তাঁর বাস্তবিক দিকনিরর্দেশনা পথ পায় দেশের নেতৃবৃন্দও। সমাজে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের যুগান্তকারী ভূমিকা

২০২৪ সালের জুলাই মাসে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। এতে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও ধর্মীয় সমাজে নতুন এক বিপ্লবের সূচনা তৈরী করে। গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের গুলিতে ৭১ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী শহীদ হন। নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এমন অবদান অমর হয়ে থাকবে যুগ যুগ।

নানা সময়ে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি

২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে অসংখ্য আলেম মুক্তি পান। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা হারুন ইজহার , মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানিসহ হেফাজতের আরো অনেক নেতৃবৃন্দ।

ইসলামিক রাজনৈতিক অঙ্গণে ঐক্যের সুবাতাস

গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর ইসলামিক রাজনৈতিক অঙ্গণে ঐক্যের সুর বেজে উঠে।  এসময় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেতশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ সকল ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যের ঐক্যেবর বোঝাপড়া তৈরী হয়। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব দূর করে কাছাকাছি আসে দলগুলো। একতা বজায় রেখে সকল ইসলামিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ঘটলে সামনের জাতীয় নির্বাচনে নতুন দিগন্ত তৈরী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে নতুন অবয়বে ইসলামি বইমেলা

২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো ব্যাপক জায়গা জুড়ে ও শান শওকতের সাথে ইসলামি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রচেষ্টা চালানোর পরে ইসলামী বইমেলা এবারের বছর বিশেষভাবে সফল হয়। ২৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বইমেলায় ইসলামী চিন্তাধারা, কুরআন, হাদিস, তাফসিরসহ অন্যান্য ইসলামিক বিষয়াবলি নিয়ে নতুন বই প্রকাশিত হয়। এই মেলা মুসলিম সমাজে ইসলামী সাহিত্য ও শিক্ষা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়। এই বইমেলার ফলে মুসলিম সমাজের তরুণদের মধ্যে ইসলামি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যায় আলেমদের ব্যাপক সেবা, আলোচনায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের পরে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ভয়াবহ বন্যায় সৃষ্টি হয়। এসময় দেশের আলেমসমাজ এগিয়ে আসে। তাঁদের উদ্যোগে গঠিত সেবাসংস্থাগুলোও ব্যাপক সেবায় অংশ নেয়। ব্যাপক সহায়তা প্রদান করার কারণে শায়খ আহমাদুল্লাহ’র আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আলোচনায় আসে। ফাউন্ডেশনটি ১৩০ কোটি টাকা দান করে এবং ১০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন সাহায্য প্রদান করে। এবং শত শত পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সহ অটো রিক্সা কিনে দেয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ফাউন্ডেশনটি ইসলামী চিন্তাধারা অনুযায়ী মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থেকেছে বছর জুড়ে।

মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফেরা ও মাহফিল শুরু

২০২৪ সালের অক্টোবরে দেশের জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারি দেশে ফিরেন। এর আগে ২০২০ সালে স্বৈরাচার সরকারের হস্তক্ষেপে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। কয়েকটি মাহফিল মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি ফের মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। সম্প্রতি তিনি ফের দেশে ফিরে প্রথম মাহফিল করেন চট্রগ্রামের পেকুয়ায়। তাঁর মাহফিলগুলোতে লাখো মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলীগ জামাতের মহাসম্মেলন

২০২৪ সালে দিল্লির মাওলানা সাদের বাংলাদেশর অনুসারীরা ২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা ভন্ডুলের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত ও বিতর্কিত মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের আলেমসমাজ মাঠে নামেন। এসময় ২০২৪ সালের ৫ই নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে একটি মহাসম্মেলন আয়োজন করেন দেশের উলামা-মাশায়েখ। এতে দেশের শীর্ষ আলেমগণ অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে লক্ষাধিক মুসলিম জনতার সমাবেশ ঘটে। তাবলিগ জামাত শূরায়ি নেজামের পক্ষে উলামা-মাশায়েখ আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী ময়দানের এ মহাসম্মেলনটি ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি করে।

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থীদের নৃশংস হামলা

২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ব ইজতেমায় আবারও তাবলীগ জামাতের সাদপন্থী গ্রুপ শূরায়ে নেজাম অনুসারীদের উপর রাতে হঠাৎ হামলা চালায়। এই হামলায় শূরায়ে নেজামের ৩ জন মুসল্লি নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনার পর থেকে সাদপন্থীদের আসল রূপ সকলের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। সরকার সাদপন্থীদের কাকরাইল মসজিদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ