|| হাসান আল মাহমুদ ||
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার আজ ১৫৮ বছর চলছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস মতে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর ভারতবর্ষের মানুষের মাঝে ইসলাম ও দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তারের লক্ষ্যে মাওলানা কাসিম নানুতাবির (১৮৩২-৮০ খ্রি.) নেতৃত্বে দেওবন্দের সাত্তা মসজিদে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সূচনা হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে গড়ে ওঠেছে দারুল দেওবন্দ অনসরণে অসংখ্য কওমি মাদরাসা। ২০২২ সালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশেই রয়েছে (বোর্ডের অধীন) ১৯ হাজার ১৯৯টি।
দারুল উলুম দেওবন্দে লেখাপড়া করেছেন দেশের খ্যাতনামা অনেক আলেমও। তাঁদের মাধ্যমে এ শিক্ষার প্রসার ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু দেওবন্দের ইতিহাস, ঐতিহ্য, অবদান, শিক্ষা-চেতনা অনেক নতুন প্রজন্মের কাছে যেন অধরাই রয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষদের কাছে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা-চেতনাকে কিভাবে আরও বিকশিত করা যায়, ছড়িয়ে দেয়া যায়, প্রতিষ্ঠা দিনকে কেন্দ্র করে সেমিনার, সভা করে জাতীয়ভাবে আলোচনায় রাখা যায় কি না? এসব নিয়ে কী ভাবছেন দেওবন্দের বাংলাদেশি সন্তানেরা?
কথা হয় দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ১৯৯১-৯২ সালে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্নকারী আলেম মিরপুর আরজাদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া’র সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠা দিবস মূল লক্ষ নয়। দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ সন্তান হিসাবে দৃষ্টিভঙ্গি লালন করি, আমরা প্রতিষ্ঠা দিবসকে পালন করি না। তবে, দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস, অবদান, ঐতিহ্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য আলোচনা সভা, সেমিনার করার প্রয়োজন আছে। প্রতিষ্ঠা দিবসকে কেন্দ্র করে নয়, সার্বিকভাবেই হওয়া দরকার।
‘দারুল উলুম দেওবন্দ নিয়ে যতো বেশি আলোচনা হবে, ততো বেশি নতুন প্রজন্ম ও দেশ-জাতি জানতে পারবে’।– মত দেন মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া
কথা হয় দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসারী দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচরের মাদারীপুরের মুহতামিম মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদ ‘র সঙ্গে।
তিনি বলেন, আজ ৩০ মে ২০২৪, ১৮৬৬ সনের এ দিনে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে জাতীয়ভাবে আমরা আসলেই তেমন কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না।
‘বর্তমানে সারা বাংলাদেশে নৈতিকতার যে মহা অবক্ষয়, যা প্রতিটি ও দেশ-রাষ্ট্র ও প্রশাসন সবকিছুকে ভাবিয়ে তুলেছে, এ অবস্থার পিছনে কারণ কী? তা হলো নৈতিক শিক্ষার অভাব।’- মন্তব্য করেন তিনি।
মাওলানা ফরিদী মত দেন, ‘নৈতিক শিক্ষার বিকাশ ছাড়া আদর্শ জাতি গড়ে তোলা যায় না, সেটা এ জাতিকে যদি ভালো করে বুঝাতে হয়, তাহলে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলাম, বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার দাবি রাখে।
তিনি বলেন, ‘যদিও দারুল উলুম প্রতিষ্ঠা হয়েছে আজ থেকে ১৫৮ বছর আগে। কিন্তু এখনো সে প্রয়োজনীয়তা তখনকার তুলনায় আরও বেশি ব্যাপক রূপে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টা জাতীয়ভাবে তুলে ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিভাবে তুলে ধরা যায় জাতীয়ভাবে? প্রশ্ন রাখলে এ আলেম বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে এখনো কারো সঙ্গে কথা হয়নি, আপনি বিষয়টা যেহেতু আজকে আলোচনায় এনেছেন, তাই, পরামর্শের মাধ্যমে যে কোনো কর্তৃপক্ষের দ্বারা ভালো একটা প্রোগ্রাম হাতে নেয়া যেতে পারে’।
এদিকে, ২০১০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ ফারেগীন আলেম মিরপুর মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়ার মুহতামিম মুফতী মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী বলেন, আজ ৩০ মে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার দিন। এ দিনকে কেন্দ্র করে কোনো সভা সেমিনার হলে মন্দ হত না।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে কাছে দেওবন্দকে পরিচিত করানোর নানা উপায় হাতে নেওয়া দরকার আমাদের।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার, দেশের মসজিদগুলোতে খতিব সাহেবগণ যদি দারুল উলুম দেওবন্দ নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলেও সাধারণ লোকদের মাঝেও এ চেতনার বিকাশ ঘটানো যায়।
হাআমা/