নুরে আলম বিশেষ প্রতিনিধি
কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা, কারাবন্দী ওলামায়ে কেরামকে মুক্তিদান এবং সকল হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার করা, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম বিরোধী ভাবধারা দূরীকরণ, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং শিক্ষাঙ্গণে হিজাব ও পর্দার অধিকার বহাল রাখাসহ ১২ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের নতুন কমিটি।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে-বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আকাবির হাজারাতের বিচক্ষণতার ফলেই আজ কওমী শিক্ষা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইসলামী শিক্ষার প্রসার, দাওয়াতের ব্যাপকতা মূলত এই কওমী মাদরাসাগুলোর ফসল। ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতের কাজে কোথাও অপূর্ণতা বা বাড়াবাড়ি দৃষ্টিগোচর হলে তার সমাধানে কওমী হক্কানী ওলামায়ে কেরাম সর্বদা সময়োচিত ভূমিকা পালন করেছেন। ওলামায়ে কেরাম এ জাতীয় যে কোনো সমস্যা সমাধানে আরও সচেতন ও সতর্ক থাকবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
বেফাকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে আজকের মজলিসে উমূমীর সভায় ১২ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে- ১. ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষাসহ দেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি মসজিদে এবং প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে মকতব প্রতিষ্ঠা করা। ২. প্রতিটি পুরুষ কওমী মাদরাসার উদ্যোগে বয়স্কদের দীনি শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচী এবং প্রতিটি মহিলা মাদরাসায় বয়স্ক মহিলাদের দীনি শিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচী চালু করা। ৩. নির্ধারিত যেকোনো ফরয নামাযের পর প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মসজিদে সাধারণ মুসল্লিদের মাত্র দশ মিনিট নিত্য প্রয়োজনীয় জরুরি মাসআলা-মাসায়েল প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। দেশের প্রতিটি মসজিদে এই কর্মসূচী চালু করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। ৪. ব্যাপকভাবে দাওয়াত ও তাবলীগী কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে সাধারণ মুসলমানদের কাছে ইলম ও আমলের এবং অমুসলিমদের কাছে ঈমান-ইয়াকীন তথা ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নিয়মিত ব্যবস্থা করা। ৫. দেশের সব কওমী মাদরাসার শিক্ষকদের আদর্শ যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেই সাথে দরসিয়াত, হেফজ ও মক্তব শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান বাড়ানো। ৬. আল হাইয়াতুল উলয়ার অধীনে সকল বোর্ডের ফযীলত পর্যন্ত নেসাবে সমন্বয় করে ছেলেদের ১৬ বছর এবং মেয়েদের ১৪ বছরের নেসাব আগামী বছর থেকেই চালু করা। ৭. মক্তব ৩য় শ্রেণিতে বেফাকের অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৮. বেফাকভুক্ত সকল মাদরাসায় বেফাক কর্তৃক প্রকাশিত সকল বই পাঠ্য করা, এ বিষয়টি পরিদর্শনের আওতায় আনা। ৯. প্রতি জেলায় কেন্দ্রীয়/বৃহৎ মাদরাসায় প্রতি মাসে একবার করে ইসলাহী মজলিস অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া, তাতে অন্যান্য মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের অংশগ্রহণ করা। ১০. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা। ১১. কারাবন্দী ওলামায়ে কেরামকে মুক্তিদান এবং সকল হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার করা। ১২. জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম বিরোধী ভাবধারা দূরীকরণ, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং শিক্ষাঙ্গণে হিজাব ও পর্দার অধিকার বহাল রাখা।
উল্লেখ্য , শনিবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। যাত্রাবাড়ী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ৩ হাজার উমূমী সদস্যের সম্মেলনে মজলিসে শুরার পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা পেশ করা হলে মজলিসে উমূমীর সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটির অনুমোদন হয়। আল্লামা মাহমুদুল হাসান সভাপতি, মাওলানা সাজিদুর রহমান সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং মাওলানা মাহফুজুল হক মহাসচিব নির্বাচিত হন।
হুআ/