বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫


তাবলিগের পৃষ্ঠপোষকতায় হজরত মাদানী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহাম্মদ উমারা হাবীব ||

দাওয়াত ও তাবলিগ ইসলাম প্রচারের অপরিহার্য অংশ। এই কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফরজ। এজন্য শরিয়তে এই কাজের নির্দিষ্ট কোনো পন্থা বলা হয়নি যেন সবাই শরিয়তের সীমার ভেতরে থেকে আপন আপন কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে শামিল হতে পারে।
সব যুগেই দাওয়াত ও তাবলিগের এই মহান মেহনত আলেমদের দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে। দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতিসন্তান হজরতজি মাওলানা ইলিয়াস রহ. যখন দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের জন্য চলমান পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন তখনও তাকে উলামায়ে দেওবন্দ ভরপুর সহযোগিতা সমর্থন করেছেন, এখনও সর্বতোভাবে করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও করবেন ইনশাআল্লাহ।

হজরতজি মাওলানা ইলিয়াস রহ. ১৯২৬ সনের দিকে দিল্লির নিকটবর্তী একদম অনুন্নত অঞ্চল মেওয়াতে দাওয়াত ও তাবলিগের এই মেহনত শুরু করেন। তখন উপমহাদেশের উলামায়ে ইসলামের ইমাম ছিলেন হজরত মাদানী রহ। তাবলিগ দীনের আবশ্যিক মেহনত আর মাওলানা ইলিয়াস রহ. নিজের স্নেহাস্পদ হওয়ায় হজরত মাদানী রহ. দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে পূর্ণ সমর্থন সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। ফলে ১৯৩৩ সনের প্রচণ্ড শীতে যখন মেওয়াত থেকে ২০০ জনের একটি জামাত বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করা হচ্ছিল হজরত মাদানী রহ. তখন দিল্লির জামে মসজিদে তাদের উদ্দেশে বিদায়ি হেদায়েত দেন। বয়ানে আবেগ উচ্ছ্বাসে তিনি বলেন, ‘তোমরা যে কাজের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছ, এতে বাতিল খতম হবে, ভারত থেকে ব্রিটিশের জুলুম শেষ হবে, লালকেল্লায় উড়তে থাকা ইউনিয়ন পতাকা পড়ে যাবে।’

১৯২৪ সনে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ‘শুদ্ধি সংগঠন’ আন্দোলন রুখতে উলামায়ে দেওবন্দ তাবলিগের কাজে পূর্ণ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দারুল উলুম দেওবন্দ মাসাধিকাল ছুটি দিয়ে সকল ছাত্র উস্তাদ তবলিগের মেহনতে নামেন। কয়েক বছর পর হজরত মাদানী রহ. প্রস্তাব করেন, মাওলানা ইলিয়াস রহ. আমাদের আপনজন, জমিয়তের তাবলিগ বিভাগটি তাঁর ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। তাই করা হয় এবং তখন থেকেই জমিয়তও সর্বতোভাবেই তাবলিগের এই মেহনতের সাথে জোরালো সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে লেগে আছে।

হজরত মাদানী রহ. দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতকে জোরদার করতে প্রায়ই তাঁর ছাত্র ভক্ত মুরিদ ও খলিফাদের মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর কাছে পাঠাতেন। তারা বিভিন্ন মেয়াদে তাবলিগের সফর করতেন।

মিরাঠের মাওলানা হাকিম মুহাম্মদ ইসহাক ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের শূরা সদস্য। একবার হজরত মাদানী রহ. তাঁকে চিঠি লিখলেনÑ ‘একথা জেনে আশ্চর্য হলাম যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের তাবলিগ জামাত মিরাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাতায়াত করে কিন্তু আপনি, আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন তাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন না।...আপনার নিকট আশা রাখি, ভবিষ্যতে এই বিষয়ে পূর্ণ চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এবং এদের সাহায্য সহযোগিতা ও উৎসাহ বাড়াতে সক্রিয় হবেন।’

১৯৪১ সনে নভেম্বরে নুহ অঞ্চলে তাবলিগের প্রথম ইজতেমা হয়। হজরত মাদানী রহ. ২৫/৩০ হাজার লোকের এই ইজতেমা উদ্বোধন করেন। জুমার ইমামতি করেন।


মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর সাথে হজরত মাদানী রহ.-এর সীমাহীন অন্তরঙ্গতা ছিল। হজরতজি হজরত মাদানী রহ.-এর উপস্থিতি সমর্থন সহযোগিতাকে তাবলিগের এই মেহনত কবুল হওয়ার আলামত মনে করতেন। হজরতজি মাওলানা ইলিয়াস রহ. এই ইজতেমার পর আনন্দে মাওলানা মনজুর নোমানী রহ.-এর কাছে পত্র লিখেনÑ ‘হজরত মাদানী রহ. যখন ইজতেমা উদ্বোধন করে মনের দরদ ঢেলে এই কাজের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তখন আমার বিশ্বাসÑ আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই কাজ কবুল করে নেওয়া হয়েছে।’

হজরত মাদানী রহ.-এর পূর্বাপর ধারাবাহিকতায় উলামায়ে দেওবন্দ এখনও পূর্ণ সহযোগিতা সমর্থন করে যাচ্ছেন। তাই নবীর সত্যিকার ওয়ারিশ হিসেবে নবীওয়ালা কাজে আলেমদের পরামর্শ, সহযোগিতা, সমর্থনকে সৌভাগ্য মনে করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আলেমদের সাথে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : তরুণ লেখক 

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ