বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫


নবীজির তরিকাতেই একমাত্র সফলতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা আব্দুর রহমান (মুম্বাই) ||

শনিবার বাদ ফজর বয়ান
নবী করিম সা. এই জাতিকে বহুত বড় কাজ দিয়ে গেছেন। আর তা হলো সমস্ত মানুষের কাছে এই দিনকে পৌঁছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। নবীজি এই দীনকে সবার কাছে পৌঁছিয়েছেন। অথচ তিনি সময় পেয়েছেন মাত্র ২৩ বছর। নবীজি তাঁর দাওয়াত নিয়ে সফর করেছেন হিজাজের মধ্যে। আর সর্বোচ্চ সফর করছেন তাবুক পর্যন্ত। রাসুল সা. এই গণ্ডির মধ্যে থেকে দাওয়াত দিয়ে বিশাল একটি জামাত তৈরি করছিলেন, যাদের সিফাত ছিলÑ দিনের বেলায় ঘোড়ার মধ্যে সওয়ার থাকতেন। আর রাতের বেলায় নামাজে, মুনাজাতে রোনাজারি করতেন। দিনের বেলায় মানুষের কাছে যেতেন আর রাতের বেলায় রোনাজারিতে থাকতেন। রাসুল সা.-এর এর সিফাতও তাই ছিল। সাহাবায়ে কেরাম মেহনত করে তাবিয়িদের জামাত বানিয়েছেন। তারা তাবে তাবিয়িনের জামাত বানিয়েছেন। তারা সালিহিনদের জামাত বানিয়েছেন। এমন করে আমাদের পর্যন্ত এই কাজ পৌঁছেছে। সাহাবায়ে কেরামের যে কাজ ছিল আমাদেরও সেই একই কাজ।

মেরে ভাই!
আমরা যে এই ইজতেমায় একত্রিত হয়েছি আমাদেরও উদ্দেশ্য যে, সাহাবাদের মতো আমাদের মাঝেও কীভাবে দীন আসে, আমার পুরো পরিবারের মাঝে দিন আসে আর পুরো পৃথিবীর মাঝে এই দীন ছড়িয়ে পড়ে। এই কাজটাকে আল্লাহ এতো সহজ করেছেন যে, শহরে বসবাস করে, সেও করতে পারে। যে মানুষ গ্রামে বসবস করে সেও এই কাজ  করতে পারে। মোটকথা, সবাই এই কাজটাকে করতে পারে। এতো সহজ করেছেন যে, গ্রামের দুর্বল মানুষ সহিহ বুঝ নিয়ে কাজটাকে করলে পুরা গ্রামটা সহিহ হয়ে যাবে। কোনো স্কুল বা কলেজে সহিহ বুঝ নিয়ে এই কাজ করতে পারলে পুরো স্কুল বা কলেজ পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রথম কাজ হলো ভালোভাবে কাজটাকে বুঝতে হবে। তারপর কাজটাকে করতে হবে। আমরা এই মজলিসে যারা আছি তারা ভালোভাবে কাজ বুঝে করবো ইনশাআল্লাহ।

মেরে দোস্ত!
বোঝার কথা হলো, সমস্ত দুনিয়ার সফলতার জন্য এই দীনকে পাঠিয়েছেন এবং পাক্কা দীনদার হয়ে দীন নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে। এভাবে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কাজ করবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হবে। আর কেউ যদি বেদীন হয়ে যায়, তার দুনিয়া-আখেরাত আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করবেন। ‘যারা দীনদার ছিল তাদের আল্লাহ তায়ালা সফল করেছেন। আর যারা বেদীন ছিল তাদের অনেক ক্ষমতা ছিল, তারপরও তাদের কাউকে বাতাস দ্বারা, কাউকে বিভিন্ন আজাব দ্বারা ধ্বংস করেছেন। এই জন্য আমাদের দিলের মধ্যে এই কথার একিন থাকতে হবে যে, দীনের মাঝে সফলতা আর বেদীনের মাঝে কোনো সফলতা নেই। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে এই কথা পরিষ্কার করে বলেছেন যে, সফলতা রাখছেন দীনের মধ্যে।  

মেরে মুহতারাম দোস্ত!
পুরা সফলতা কখন পাবেন, পুরা দিন যখন তার জিন্দেগির মধ্যে হাকিকতে সাথে আসবে। আর যে মসিবত আসে তা তোমাদের গোনাহের কারণে আসে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মধ্যে বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তোমরা দীনের মধ্যে পুরাপুরি মধ্যে দাখিল হয়ে যাও এবং শয়তানের অনুসরণ করো না। যা করতে বলছি তা তোমরা করো এবং যা থেকে নিষেধ করেছি তা থেকে বাঁচো’। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তিনি মুসলমান হওযার আগে অন্য ধর্মের ছিলেন। সেখানে উট খাওয়া হারাম ছিল। পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর তিনি উট খাওয়া থেকে বেঁচে থাকতেন তার শানে আয়াত নাজিল হয়।

মেরে ভাই!
আজকে যে আমরা দাওয়াত দিচ্ছি, তার উদ্দেশ্য হলো সমস্ত গোনাহের পরিবেশ থেকে বাঁচা। এখন আমাদের অবস্থা হলো আজকে যারা চার ওয়াক্ত নামাজ পড়ে তারা বলে যারা তিন ওয়াক্ত পড়ে তার চেয়ে তো আমি ভালো। এমন যারা এক ওয়াক্ত পড়ে তারা বলে যারা নামাজ না পড়ে তাদের থেকে আমরা ভালো। আর যারা মাঝে মাঝে নামাজ পড়ে, তারা বলে যারা একেবারেই পড়ে না তাদের থেকে তো আমরা ভালো। কিন্তু দুনিয়ার ব্যাপারে যারা লাখোপতি তারা চিন্তা করে কীভাবে কোটিপতি হওয়া যাবে। দীনের ব্যাপারে আমরা নিচের দিকে দেখি অথচ দুনিয়ার ব্যাপারে আমারা আমাদের থেকে উপরওয়ালাদের দেখি!

লাখোপতি কোটিপতিকে দেখে আর কোটিপতি মিলিয়নপতিকে দেখে। হাদিসের মধ্যে তো এমন আছে, ‘তোমার থেকে যারা বেশি দীনদার তাদের দেখ। এমনকি তোমরা সাহাবায়ে কেরামকে দেখো’। আল্লাহ তোমাদের জন্য উত্তম নমুনা করে  রাসুল সা.-এর জিন্দেগি অনুসরণ করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘কেউ যদি কাউকে অনুসরণ করতে চায়, সে যেন নবীজি এবং সাহাবাদের অনুসরণ করে। আর দাওয়াত ও তাবলিগের উদ্দেশ্য হলো রাসুল সা. ও তাঁর সাহাবাদের অনুসরণ। রাসুল সা. যে বুনিয়াদের ওপর রেখে গেলেন, তা হলো লা ইলাহা ইল্লাহ। সাহাবা কেরামগণ বলেন, ‘প্রথমে আমরা ঈমান শিখছি তারপর কুরআন শিখছি।’

সর্বপ্রথম হলো আমাদের এই কথার ওপর একিন হতে হবে, রাজত্ব হোক, মাল-আসবাব হোক, সেটার মধ্যে না কোনো উপকার আছে, না কোনো সফলতা আছে। সব ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তায়ালা আসবাবের মধ্যে কোনো কামিয়াবি রাখেন নাই। কামিয়াবি একমাত্র আল্লাহর হাতে। সমস্ত দুনিয়ার ক্ষমতা আসবাবসহ আল্লাহর সামনে মাকড়শার জালের মতো। আল্লাহ ফরমান, ‘যারা খুব ক্ষমতার অধিকারী ছিল তাদের এতো ক্ষমতা ছিল যে তারা পাহাড় কেটে ঘর বানাতো। জিন্দেগি বানানো একমাত্র তরিকা হলো রাসুলের তরিকা অনুসরণ করা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একমাত্র সফলতা হলো রাসুল এর তরিকার মধ্যে। মানুষ তত দিন আল্লাহওয়ালা হতে পারবে না, যতদিন রাসুলের তরিকা তার জিন্দেগিতে না আনতে পারবে। আর যে আল্লাহর হয়ে যাবে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ হয়ে যাবে। আমলের জন্য হলো লা ইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর তরিকা আনতে হবে। রাসুল যেমন দাওয়াতের মধ্যে সময় লাগিয়েছেন, তেমনিভাবে ইবাদতের মধ্যে লাগিয়েছেন। ইবাদতকে মেহনত করে বানাতে হবে, এমন বানাতে হবে যেন ইবাদত দ্বারা আল্লাহর কাছ থেকে সমস্ত কিছু হাসিল করতে পারি। এরপর হলো নামাজ, তার সাথে সাথে রোজা। নামাজ পড়লে কী হবে। নামাজ পড়লে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক হবে। রোজা যদি সহিহ হয়ে যায়, তার মাঝে তাকওয়া হবে। এর দ্বারা তার ধারণার বাহিরে রিজিক হাসিল হবে। ঈমান ও ইবাদত আল্লাহর বড় হক। যেমনিভাবে মা-বাবার প্রতি হক, স্বামী-স্ত্রীর হক, এমনিভাবে সবার প্রতি সবার হক, দুনিয়াটা হলো হক আদায় করার জায়গা। সবাই সবার হক আদায় করবে তখন দুনিয়াটা বেহেশতের নমুনা হয়ে যাবে।

মেরে দোস্ত ও বুজুর্গ! 
রাসুল সা. উম্মতকে ঈমানের ভিত্তির ওপর উঠিয়েছেন। যখন উম্মত এক হবে, আর নেক হবে, তখন দুনিয়ার মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে। শরীরের মধ্যে একেক অঙ্গের কাজ ভিন্ন কিন্তু তারা সবাই মিলে রয়েছে। তাই, এক ভাই অপর ভাইয়ের সাথে মিলে থাকবো, তোমার জন্য যা ভালোবাসবে তোমার ভাই এর জন্য তা পছন্দ করবে। রাসুল সা. উম্মতকে ইনসাফের ওপর উঠিয়েছেন। এই ইনসাফের সাথে যদি আমরা চলতে থাকি, তাহলে দুনিয়াতে দীন ছড়িয়ে পড়বে। দুনিয়াটা হলো জরুরত পুরা করার জায়গা। কিন্তু খায়েশাত পুরা করার জায়গা না। খায়েশাত পুরা করার জায়গা হলো জান্নাত।

মুহতারাম ভাই ও দোস্ত!
মানুষের প্রয়োজন মিটে চার জিনিস দ্বারা। এক- বাসস্থান, দুই- চলার বাহন, তিন- থাকার জন্য ঘর এবং চার- বিবাহ। খায়েশাত পুরা করার জন্য দুনিয়া বানান নাই, খায়েশাত পুরা করা হবে জান্নাতে। জান্নাতে কেউ বুড়া হবে না। জান্নাতে কেউ মৃত্যুবরণ করবে না, নওজোওয়ান থাকবে সবাই। সবার বয়স হবে ৩৩। আখলাক হবে রাসুল সা.-এর মতো। লম্বা হবে আদম আ.-এর মতো ১০০ জন পুরুষের শক্তি হবে। সবাইকে ৭০ হাজর হুর দেবেন। এমন হুর যার এক আঙ্গুলি যদি দুনিয়ার বুকে বের করে দেন, তাহলে দুনিয়ার সূর্যের আলো তার আলোর সামনে বিলীন হয়ে যাবে।

এমন সুন্দর করে হুরকে আল্লাহ বানাইছেন জান্নাতবাসীর জন্য। জান্নাত হবে এমন জান্নাত, যাতে নিয়ামতে পরিপূর্ণ থাকবে। পানির নদী হবে, দুধের নদী হবে,  শরাবের নদী হবে। আল্লাহ তায়ালার সাথে দিদার হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মেহমানদারি করাবেন।

এই জন্য ভাই আমাদের আখলাক বানাবো। তোমার সাথে যে খারাপ ব্যবহার করে, তুমি তার সাথে ভালো ব্যবহার করো। জুলুম করলে, তার সাথে সুন্দর আচরণ করো। যে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখো। হাদিসে এসেছে, ‘তাকওয়া ও পরহেজগারির কারণে জান্নাতে যাওয়া যাবে।’

আখলাকের কারণে পাল্লা ভারী হবে। নবীজি দুনিয়া থেকে আখেরাতমুখী করছেন। এই জন্য সমস্ত আনসার মিনাতে গেলেন যে, ইয়া রাসুল সা. আমরা কিসের ওপর বায়আত হবো। তোমরা আমার কথা শুনবে আর মানবে আর দীনের প্রতি খুরুজ করবে। সৎ কাজে আদেশ করবে। আমি যখন মদিনায় চলে আসবো, যেভাবে তোমাদের বিবি-বাচ্চাদের হেফাজত করো, সেভাবে আমাকে হেফাজত করবে। তখন তারা বললো, আমরা করবো তার বিনিময়ে আমরা কী পাবো? তখন রাসুল সা. বললেন তোমরা জান্নাত পাবে।

মেরে ভাই! 
মানুষ যে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে তার কারণ হলো, দীনকে ছেড়ে দেওয়া। আর যখন দীন সবার মাঝে চলে আসবে, তখন সবার জন্য সব কিছু সহজ হবে। দুনিয়ার মধ্যে যে উন্নত হচ্ছে, তা মানুষের মেহনত। তেমনিভাবে দিন আগে বাড়বে মেহনত দ্বারা। ইসলামের মধ্যে বৈরাগ্যতা নাই। ব্যক্তি একবার সে ঘরে থাকবে, আবার সে আল্লাহর রাস্তায় থাকবে। রাসুলের মেহনতে কী হলো দেখেন। ইসা আ. এর পর পৌনে চারশ বছর কোনো নবী ছিল না। তাদের সাথে অঙ্গতা মূর্খতা ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলাফল কী হলো যে, রাসুল সা.-এর ২৩ বছর মেহনতে সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে গেল। এমন পরিবেশ বনলো যে, যদি কোনো বিধর্মী আসতো, সে ঈমান আনতো। 
মদিনায় কোনো বেনামাজি ছিল না। তারা শতভাগ আখেরাতকে চাইতেন। মদিনাবাসীর দ্বারা শতভাগ দীন জিন্দা হয়েছিল। খুশির সাথে যেভাবে আমরা দুনিয়ার ব্যাপারে খরচ করি, তেমনিভাবে দীনের ব্যাপারে খরচ করি।

আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ দীন ছড়িয়ে রেখেছেন। এই সমস্ত দুনিয়াতে মেহনত করতে হবে, যাতে আবার দুনিয়াতে সাহাবাদের জামানার মতো জামানা তৈরি হয়ে যায়। আজকে আমাদের পুরা মজমার সবাই নিয়ত করবো, আমরা যারা আল্লাহর রাস্থায় যাবো, তারাও মেহনত করবো। আর যারা ঘরে ফিরবো তারাও মেহনত করবো। যে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে বনতে না পারবে, সে এলাকায় এসে বনতে পারবে না। আর আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে বনলে, ঘরে এসেও বনতে পারবে। আমার যে জায়গায় এক চিল্লা, দুই চিল্লা ও তিন চিল্লায় যাবো,  সেখানে আমরা তাদের আল্লাহর রাস্তায় বের করাবো। আমরা চার মাস ভালোভাবে লাগাবো। এলাকায় এসে ভালোভাবে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ

অনুবাদ ও অনুলিখন: মুফতি সারোয়ার হোসেন

কেএল/


সম্পর্কিত খবর