মুফতি সাদেকুর রহমান
এতেকাফের দিনগুলোর আমল সমূহ:- ১. প্রত্যেক এতেকাফকারী তার কাজের জন্য নিত্যদিনের একটি রুটিন তৈরি করে নিবে।
যেমন ফজরের পর দৈনিক কতটুকু তিলাওয়াত করবে, অতঃপর অমুক অমুক ওজিফা আদায় করবে। উদ্দেশ্য হল পুরো চব্বিশ ঘণ্টার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও হেফাজত করা।
২. এতেকাফের দিনগুলোতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়াও সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও অন্যান্য নফলসমূহের প্রতি যত্নশীল হওয়া।কারণ এ মাসে নফল ফরজের সমতুল্য। সুতরাং মাগরিবের সুন্নতের পর ছয় রাকাত আউয়াবিন, এশার পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, এশার সুন্নত আদায়ের পর দু রাকাত নফল,সাহরীর খাওয়ার আগে কিংবা পরে তাহাজ্জুদের চার থেকে বার রাকাত,বাদ ফজর ইশরাকের চার রাকাত,সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে চাশতের নামাজ , সূর্য হেলে যাওয়ার পর ২/৪ রাকাত ও সালাতুত তাসবিহ আদায়ের প্রতি ইহতেমাম করবে।
৩. এতেকাফ অবস্থায় অবসর সময়গুলোতে নফল নামাজ, তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তেগফার, দুরুদ শরীফ পাঠ করবে ও কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করবে।
৪. সাধ্যের চেয়ে বেশি ইবাদত করবে না। ইবাদত করে ক্লান্ত হয়ে গেলে কিছু সময় বিশ্রাম করবে। ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাভাব নিয়ে ইবাদত করবে না বরং কিছু সময় বিশ্রাম ও আরাম করে উদ্যম ও একাগ্রচিত্তে ইবাদতে নিমগ্ন থাকবে।
৫. লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক এতেকাফকারীকে ২১ তারিখের রাত থেকে ২৯ তারিখ রাত পর্যন্ত প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলোকে হেফাজত করা উচিত। যদি পুরো রাত জাগ্রত থাকা সম্ভব না হয় তাহলে সিংহভাগ সময়ই জাগ্রত থাকা উচিত। যাতে এ বরকতময় রজনীর ফজিলত ও বরকত লাভ করতে পারে।
৬. লাইলাতুল কদরের নামে ঐ রাতে বিশেষ নফল নামাজ বিশেষ কিছু সুরা দিয়ে পড়া কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
৭. কতিপয় লোক অনির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এ ধরণের নামাজের অগণিত ফজিলত ও সওয়াব বর্ণনা করে। যা কোন নির্ভরযোগ্য হাদীস কিংবা বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়।
৮. প্রচলিত লাইলাতুল কদর অর্থাৎ ২৭ তারিখ রাতের পর অধিকাংশ মানুষই ইবাদত প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। এটা মারাত্মক ভুল ও বড় আফসোসের বিষয়। কেননা লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা ২৯ তারিখেও আছে। এছাড়া রমজানের এক একটি মুহুর্ত অনেক মুল্যবান। হাদীস শরীফে রমজানের শেষদিনগুলোতে এবং শেষ রাতগুলোতে অধিক ক্ষমার সুসংবাদ এসেছে। এ কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত পূর্ণ ধৈর্য্য ও সবরের সাথে ইবাদতে মগ্ন থাকা উচিত।
৯. তাকবীরে উলার সাথে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া।
১০. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী, চার কুল সহ অন্যান্য তাসবীহ -তাহলিল আদায় করা।
১১. এতেকাফকারীর জন্য জরুরি যে, এতেকাফের দিনগুলোর গুরুত্ব বুঝে সে দিনগুলোতে মসজিদে খুব ইবাদত করা। বাহ্যত যেমনি এতেকাফে বসেছে তেমনি অভ্যন্তরীনভাবেও দুনিয়াবি সকল ব্যস্ততা থেকে নিজেকে অবসর করে এবাদতে নিমগ্ন হওয়া। বিশেষত মোবাইল থেকে যথাসাধ্য নিজেকে দূরে রাখা।
এতেকাফকারীর জন্য বিশেষ সতর্কবাণী :- বছর জুড়ে বিশেষকরে রমজানে সকল মুসলমানের জন্য হালাল খাবারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতেকাফকারীর জন্য ও তার খাবার, ইফতার, পোশাকাদির ব্যাপারে হালালের প্রতি অধিক খেয়াল রাখা উচিত। কেননা সকল ইবাদতই চাই সেটা নামাজ হোক কিংবা রোজা কিংবা কোরআন তেলাওয়াত সবকিছুই কবুল হওয়া হালাল উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। আর ইতেকাফের উদ্দেশ্য হল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, এটা লাভ হবে সকল শর্ত মানার দ্বারাই।
এতেকাফকারীর খাবার -দাবারের ব্যবস্থা কারীর যদি অধিংকাংশ বা পুরো উপার্জনই হারাম হয় তাহলে সে খাবারের ব্যবস্থা করবে না, কারন এতে সাওয়াবের পরিবর্তে এতেকাফকারীর আমল নষ্ট করার কারণে উল্টা ব্যাবস্থাকারি গুনাহগার হবে। জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া-১/৩৬,৩৭
মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরীপাড়া ঢাকা
-এটি