মুফতি সাদেকুর রহমান ।।
এতেকাফ আল্লাহর এক অনন্য অফুরন্ত দান। এর মাধ্যমে মুমিন বান্দা মহান আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং তার মেহেরবান মালিকের কাছে নিজের পূর্ণ গোলামী, বিনয়- নম্রতা ও অসহায়ত্বকে পেশ করতে পারে। তার রহমতের দুয়ারে রহমতের ভিখারি হয়ে বিরামহীন কড়া নাড়তে পারে। তাই এতেকাফ ছিল প্রিয় নবী সা এর প্রিয় আমল।
তিনি নিজে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতেন। মদীনায় হিজরতের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি বছরই নবিজি এতেকাফ করেছেন। অবশ্য জিহাদের সফরে থাকায় এক বছর এতেকাফ করতে পারেননি তাই পরবর্তী বছর বিশ দিন এতেকাফ করেছেন। আরেক বছর বিশেষ কারণে রমজানে এতেকাফ না করায় শাওয়ালে কাজা করেছেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিন এতেকাফ করেছেন।
১হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা) ইরশাদ করেন এতেকাফকারী সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং সে ঐসব নেকীর সওয়াবও লাভ করে যা এতেকাফ করার কারণে সে করতে পারেনি।(সুনানে ইবনে মাজাহ -১৭৮১)
২. রাসুল (সা) বলেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন এতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। যার দূরত্ব আসমান জমিনের সমান। (কানযুল উম্মাল -২৪০১৯)
৩. রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করবে, তার জন্য দুটি হজ ও দুটি ওমরার সাওয়াব রয়েছে।(বায়হাকী- ৫৮৬)
৪. রাসুল সা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সাওয়াবের প্রত্যাশায় এবং ইবাদত মনেকরে এতেকাফ করবে তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(মুসনাদে দাইলামি)
৫.হযরত আয়েশা রা থেকে বর্ণিত যে, নবী সা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমজান মাসে শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। তাঁর ওপাতের পর তাঁর স্ত্রীগন এতেকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী -২০২৬)
৬.হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হযরত জিবরাঈল আ প্রতিবছর নবিজীকে একবার কুরআন শুনাতেন কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুইবার শুনালেন। নবিজি প্রতিবছর দশদিন এতেকাফ করতেন তবে ওফাতের বছর বিশ দিন এতেকাফ করেছেন। ( সুনানে আবু দাউদ -২৪৬৩। সুনানে ইবনে মাজাহ -১৭৬৯)
৭.হযরত আনাস রা থেকে বর্ণিত ,নবী সা রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। এক বছর এতেকাফ করেননি তাই পরবর্তী বছর বিশ দিন এতেকাফ করেছেন। ( সুনানে তিরমিজী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
উক্ত হাদীসগুলো থেকে এতেকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রমাণিত হয়। এ বিষয়টিও প্রতিয়মান হয় যে, রাসুল সা একজন সফল, আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হওয়ায় হাজারো কাজে সদা ব্যস্ত থাকা সত্বেও নিয়মতি এতেকাফ করেছেন। তাই আমাদের উচিত এই এতেকাফের প্রতি গুরুত্বারোপ করা।নানা ব্যাস্ততার ভেতরেও তা আনজাম দেওয়া। আল্লাহ সকলকে তাওফীক দান করুন। আমিন
লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরীপাড়া ঢাকা