শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ২৫ নভেম্বর ‘আলেমদের নেতৃত্বেই কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব’ বইমেলায় ‘সঠিক নিয়মে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ বাংলা’-এর মোড়ক উম্মোচন সিলেটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সমাবেশ শনিবার সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলেম রাজনীতিবিদরা খালেদা জিয়াকে পেয়ে সেনাকুঞ্জ গর্বিত: প্রধান উপদেষ্টা লক্ষ্মীপুর মারকাযুন নূরে ১১ মাসে হাফেজ হল ১১ বছরের শিশু আফসার যেসব অভ্যাস নীরবে মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে বৈষম্য ও অন্যায় নির্মূলে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই: মজলিস আমীর আওয়ামীলীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান খেলাফত মজলিসের

সেহেরিতে মাইকে ডাকাডাকি, কী বলছেন গবেষক আলেমরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হুসাইন আহমাদ খান ||

পবিত্র রমজানে ইফতার ও সেহেরি অন্যতম ইবাদত। এ দুটি ইবাদতের সঠিক সময় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে বিভিন্ন ধ্বনি। বিশেষ করে সেহেরির জন্য আরবে আজান হয় আর আমাদের দেশে বিশেষ শব্দে ডাকা হয়। মাইকে উচ্চ আওয়াজে ডাকাডাকির এই শব্দগুলো কেমন হবে? কতটা সময় ধরে ডাকা যাবে? এ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন অঙ্গনে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। কেউ দাবি তুলছেন মাইকে এসব ডাকাডাকির রুসম একেবারে বন্ধ হওয়ার। কিন্তু দেশের গবেষক আলেমগণ কী বলছেন এ বিষয়ে?

দেশের অন্যতম প্রধান মুফতি, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘শেষ রাতে সেহেরির জন্য মাইকে ডাকাডাকির বিষয়টিকে ইসলাম কীভাবে দেখে?’ তিনি বলেন, সেহেরির সময় ঘুমন্ত মানুষকে জাগানোর কথা হাদিসে আছে। তবে সে পদ্ধতিটি ছিল তাহাজ্জুদের আজান। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে কেউ যদি আজান না দিয়ে ভিন্নকোনো শব্দে মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য ডাকে তাহলে এতে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না।

‘তবে এখন শেষ রাতে সেহেরির জন্য মাইকে ডাকাডাকির বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ‘কেউ বলছে মোবাইলে এলার্ম যেহেতু আছে তাই মাইকে ডাকার প্রয়োজন নেই।’ আমার মনে হয় এটিও একটা বাড়াবাড়ি। ডাকা যাবে অবশ্যই। তবে কীভাবে ডাকতে হবে? সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ’ বলেন, এই গবেষক আলেম

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে অনেক এলাকায়, বিশেষ করে শহরের মসজিদগুলোতে যার যখন মন চায় মাইকে সাইরেন বাজায়, গজল গায়, ওয়াজ ছেড়ে দেয়, তিলাওয়াত করে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসব। এটা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এতে মানুষ বিরক্ত হয়। কষ্ট পায়। আর হাদিসে কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, বাসাবাড়িতে অনেকেই তাহাজ্জুদে দাড়ায়, অনেকে অসুস্থতার কারণে ঘুমায়। কিন্তু অতিরিক্ত মাইকের আওয়াজের ফলে তারা কষ্ট পায়। তাছাড়া মসজিদে যারা এতেকাফে বসে তারাও বারবার মাইক চালু করার কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে পারে না। সময়ের শেষে দেখা যায়, যারা পালা করে অতিমাত্রায়, আবেগে ডাকাডাকি করছে তারাও ঠিক মতো সেহেরি খেতে পারে না বা তাহাজ্জুদ পড়তে পারে না। অন্যরাও পারে ন। তাই এ কাজের অনুমতি কোনোভাবেই ইসলাম দিতে পারে না।

‘হাদিসে আজান দিয়ে ডাকার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুপাতে যদি ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে আজান পরিমান সহনীয় শব্দে ডাকা যেতে পারে। যেমন, সেহের একঘণ্টা আগে একবার ডাকা হলো। আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে একবার সতর্ক করা হলো। আর সময় শেষ হলে বলে দেয়া হলো।’ মত দেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ

গবেষক আলেম মাওলানা মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীনের মতে সেহেরির সময় খাওয়ার জন্য মানুষকে জাগিয়ে তোলা সুন্নত। আরবে এর প্রচলন হলো আজানের মাধ্যমে। অর্থাৎ রমজানে তাহাজ্জুদের আজান শুনে মানুষজন জেগে ওঠে। সেহেরির সময় শেষ হলে ফজরের আজান হয়। তবে আমাদের উপমহাদেশে তাহাজ্জুদের আজানের প্রচলন নেই।

তিনি বলেন, সেহেরির সময় মানুষকে জাগিয়ে তোলার বিষয়টিকে যেহেতু ইসলাম সাধুবাদ জানায় তাই এই কাজটি সুবিন্যস্তভাবে করা যেতে পারে। যেমন আমাদের অঞ্চলে আজানের প্রচলন নেই, তবে বিভিন্নভাবে ডাকাডাকির প্রচলন আছে। সহনীয় মাত্রায়, প্রয়োজন অনুযায়ী কেউ যদি সেহেরি খেতে অন্যজনকে জাগিয়ে তোলে আমার মতে তার সওয়াব হবে। শরিয়তে এটা জায়েজ। এতে নিষেধাজ্ঞার কিছু দেখি না।

এদিকে আরেক গবেষক আলেম মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের মতে, সময়, পরিস্থিতি, উপযোগিতা ও অভ্যাসের বড় একটি পরিবর্তন হয়েছে; গত ১০-১৫ বছরে। কিন্তু মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ঘুম-জাগরণ, সচেতনতা-উদাসীনতার স্বাভাবিক প্রবণতাগুলো পুরোপুরি বদলে যায়নি। এখনো মানুষ বিস্মৃতি কিংবা বে-খেয়ালিতে ভালো কাজ ছেড়ে দেয়। দেখাদেখি অথবা আওয়াজ শুনে নেক কাজে জড়িয়ে যায়। এসব দেখে-শুনে মনে হয়, সাহরির সময়ে সীমিত পরিসরে মাইকের আহ্বান/সতর্কতার বিষয়টি চালু থাকতে পারে।

‘এক ঘন্টা আগে থেকে শেষ সময় পর্যন্ত খুব অল্প কথায়, অল্প সময়ে তিন/চারবার সাহরির সময়/ কতক্ষণ বাকি আছে/ শেষ সময় স্মরণ করিয়ে দিলে মানুষের উপকার হবে। এক মিনিট করে সর্বোচ্চ চারবার। শেষ রাতে মসজিদের মাইকে লম্বা-চওড়া কথাবার্তা, গজল-নাশিদ দেওয়া উচিত হবে না। অবশ্য ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং গ্রাম এলাকার মধ্যে কিছুটা ফারাক করা যেতে পারে। গ্রামে সময়-সহযোগিতার দরকারটা বেশি পড়ে এবং মাইকের আওয়াজ সেখানে সাধারণত অসহনীয় ঠেকে না।’ বলেন, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ

তিনি উল্লেখ করেন, এখানে দুটি প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। ‘এক. শেষরাতে মানুষকে কষ্ট না দেওয়া। দুই. সাহরির সময়/শেষ সময় নিয়ে সচেতন করা এবং রোজা রাখার কথা মনে করিয়ে দেওয়া।’ এ-দুটি বিষয়ের সমন্বয় করতে চাইলে একঘন্টা কিংবা ৪৫ মিনিটের চেয়ে বেশি আগে মাইকে আওয়াজ দেওয়া ঠিক হবে না। ঘনঘন বেশি বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। অপরদিকে মনে রাখার মতো ব্যাপার হলো, এ-দেশের বহু সাধারণ মানুষ আসলে এতটা সচেতন ও প্রস্তুত রোজাদার হয়ে উঠেন নি। অনেকের বাসায় সাহরি-ইফতারের ক্যালেন্ডারটিও নেই। কারো কারো পরিস্থিতি এমন যে নেকির আওয়াজ ও পরিবেশে সে নেকির সঙ্গে থাকে, আর ছেড়ে রাখলে সে গাফেল হয়ে যায়। এজন্য তুলনামূলক অস্বস্তিমুক্ত পন্থায় সাহরির ডাকাডাকি চালু থাকতে পারে। যারা প্রস্তুত দ্বীনদার-রোজাদার তারা তো মাশাআল্লাহ ভালো; কিন্তু সমাজে এমন বহু মুসলিম আছেন, নেকির পথে চলতে গেলে যাদের জন্য আওয়াজের দরকার হয়, আবহাওয়ার দরকার হয়, পরিবেশের দরকার হয়, দেখাদেখির দরকার হয়। ডাকাডাকিরও দরকার হয়। তাদের জন্য আওয়াজের উপায়টা খোলা থাকা দরকার।

সবশেষে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে কিন্তু আওয়াজ ও আবহ একটি বড় ঘটনা। এক আওয়াজ থেকে পিছিয়ে আসলে আরো আওয়াজ থেকে পিছিয়ে আসতে হবে। বিপরীতে 'অন্য আওয়াজগুলো' স্পেসটা দখল করতে পিছপা হবে না। কল্যাণের আওয়াজটি যেন নরম ও স্বস্তিকর হয়-শুধু সেদিকটিতে খেয়াল রাখা দরকার। হুজুগ আর আবেগে ভেসে যাওয়া ঠিক হবে না; জুলুম হয়ে যাবে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ