শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রমজানে কুরআন চর্চার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

রামাযান মাস মহিমান্বিত কুরআন নাযিলের বরকতময় মাস। এ মাসের আগমনে কুরআনের চর্চা বেড়ে যায় অধিকমাত্রায়। কুরআনচর্চার নিমিত্তে এ মাসে তারাবিহ নামাযে পবিত্র কুরআন একবার খতম করা সুন্নাত। রামাযান মাসে রাসুল (সা.) জিবরিল (আ.)-এর সঙ্গে কুরআনের দাওর করতেন। আল-কুরআনের তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ও মৌলিক ইবাদত। অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনেও তিলাওয়াতের সমান সওয়াব লাভ করা যায়।

রমজান মাস যাতে মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং মানদণ্ড হিসেবে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ‘মানুষের হেদায়তের জন্য রামাযান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। যাতে রয়েছে হেদায়তের সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য।’

সহিহ আল-বুখারী শরিফে বর্ণিত আছে,ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন : “ আল্লাহর রসূল , আল্লাহর সালাত ও সালাম, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উদার ছিলেন এবং তিনি রমজানে সবচেয়ে বেশি উদার ছিলেন যখন জিব্রাইল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন ।

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রামাযান মাসে হতেন অধিক দানশীল। যখন জিবরিল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতি রাতে কুরআনের দাওর করতেন। রাসুল (সা.) ছিলেন কল্যাণকর কাজে প্রবাহমান বায়ূর চেয়েও অধিক বদান্য।
ইমাম ইবনে রজব আল-হাম্বলী (রহ.) বলেন, উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা রামাযান মাসে কুরআনের দরস দেওয়া, দরসের জন্য সমবেত হওয়া ও কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির নিকট কুরআন শোনানো মুসতাহাব প্রমাণিত হয়। তবে অর্থ না বুঝে কুরআনের নিছক তিলাওয়াতপূর্বক বারবার কুরআন খতম করা সালাফের নীতি ছিল না। এ সম্পর্কে আয়িশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, মুসলিম ইবনে মিখরাখ থেকে বির্ণত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়িশা (রাযি.)-কে প্রশ্ন করলাম, রাতের বেলায় কয়েকবার আল-কুরআন খতম করার ব্যাপরে আপনার মতো কি? তিনি উত্তর দিলেন, তারা কুরআন তিলাওয়াত করেও করেনি। আমি রামাযান মাসে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কিয়ামুল লাইল করতাম। তিনি সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পাঠ করতেন। যখন সুসংবাদ সংবলিত কোনো আয়াত আসতো, তিনি দু‘আ করতেন এবং আগ্রহী হতেন। ভয়-ভীতি সংবলিত কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রর্থনা করতেন।

আল-কুরআন একটি প্রভাব বিস্তারকারী কিতাব আল-কুরআন একটি প্রভাবশালী আসমানি কিতাব। যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। নাযিল হবার সময়কাল থেকে অদ্যাবধি এটি সমানভাবে ক্রিয়াশীল। মুমিনের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে আল-কুরআন বলেন,আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম বাণীসম্পন্ন একটি কিতাব নাযিল করেছেন। যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও বারবার পঠিত। যারা আল্লাহকে ভয় করে কুরআনের প্রভাবে তাদের ত্বকের পশম খাড়া হয়ে যায় ও অন্তর নরম হয়।

অমুসলিমদের ওপরও এ কুরআন সমানভাবে ক্রিয়াশীল। হাদিস ও সিরাতের বিভিন্ন গ্রন্থে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। কুরআন ও রাসুলের সাথে শত বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা আল-কুরআনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি।

মক্কার কুরাইশ নেতারা দিনের বেলায় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিরোধিতায় মগ্ন থাকলেও রাতের বেলায় চুপিসারে তাঁর কুরআনের তিলাওয়াত শুনে নিজেদের আত্মা শীতল করতো। এ প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাক (রহ.)-এর বর্ণনাটি .ইমাম যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, আবু জাহাল, আবু সুফয়ান ও আখনাস ইবনে শরিক একদিন বিচ্ছিন্নভাবে রাসুল (সা.)-এর রাত্রিকালীন নামাযের তিলাওয়াত শোনার নিমিত্তে তাঁর ঘরের চারপাশে অবস্থান নেয়। সকাল বেলা ফিরতি পথে কাকতালীয়ভাবে তাদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয়ে যায়। এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত থাকার জন্য তারা একে অপরকে ভর্ৎসনা করে এবং এ কাজের পুনরাবৃত্তি না করার শপথ গ্রহণ করে নিজ নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। কেননা এতে তাদের অধীনস্ত অনুসারীদের মনে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও তারা বিচ্ছিন্নভাবে (গোপনীয়ভাবে) আবারো কুরআন শুনতে অবস্থান নেয় এবং সকাল বেলা পুনরায় তাদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ ঘটে যায়। তারা গত রাতের মতো আবারো ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরে যায়। তৃতীয় দিনেও একই ঘটনা ঘটে। এবার তারা চূড়ান্ত ওয়াদা করে বাড়ির পথ ধরে। তারা পারস্পরিক আলোচনায় আল-কুরআনের অলৌকিকতা ও তার অপরিসীম প্রভাবের কথা স্বীকার করে।
লেখক- গবেষক, কলামিস্ট।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ