আওয়ার ইসলাম ডেস্ক:।।
★ পরস্পর ঝগড়াঝাটিতে দুইটি বড় ক্ষতি
وَ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡہَبَ رِیۡحُکُمۡ وَ اصۡبِرُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ সূরা আনফালের ৪৬ নম্বর আয়াতে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যে,নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে অনেক বড় বিপদ ডেকে আনে।
ঈমানদারদেরকে পরস্পরে মারামারি ঝগড়াঝাটি করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে যে, যদি তারা পরস্পরে লড়াই করে তাহলে দুইটি ক্ষতি হবে।
আর তা হল, ঈমানদার কাপুরষ ও ভীতু হয়ে পড়বে। কেননা যখন একতা আর ঐক্য থাকে তখন প্রত্যেকেই একা হওয়া সত্ত্বেও পুরো দলের শক্তি নিজের মধ্যে অনুভব করে। কিন্তু যখন নিজেদের মধ্যেই হানাহানি হয় তখন কেউ কারো সহযোগী হয় না। দুই, সমীহ শক্তি শেষ হয়ে যাবে, শত্রুর চোখে তোমরা তুচ্ছ ও নীচু হয়ে পড়বে।
★ বিপদাপদে স্থির থাক
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَکُوۡا وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ لَمۡ یَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لَا رَسُوۡلِہٖ وَ لَا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَلِیۡجَۃً ؕ وَ اللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ সূরা তাওবার ১৬ নম্বর আয়াতে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যে, বিপদে ধৈর্য্যধারণ করা উচিত। বিপদ ও মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। এগুলো হচ্ছে পরীক্ষা সরূপ।
এজন্যই কুরআনুল কারিমে মুমিন বান্দাদের সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমাদেরকে এভাবেই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহতো এখনও তোমাদেরকে পরীক্ষা করেননি যে, কারা তোমাদের মধ্য হতে জিহাদ করেছে এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ ছাড়া অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করেনি? আর আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।
★ যাকাত প্রদান না করার শাস্তি
وَ الَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَ الۡفِضَّۃَ وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ
یَّوۡمَ یُحۡمٰی عَلَیۡہَا فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ فَتُکۡوٰی بِہَا جِبَاہُہُمۡ وَ جُنُوۡبُہُمۡ وَ ظُہُوۡرُہُمۡ ؕ ہٰذَا مَا کَنَزۡتُمۡ لِاَنۡفُسِکُمۡ فَذُوۡقُوۡا مَا کُنۡتُمۡ تَکۡنِزُوۡنَ
সূরা তাওবার ৩৪,৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
সেদিন জাহান্নামের আগুনে ঐগুলিকে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর ঐগুলি দ্বারা তাদের ললাটসমূহে, পার্শ্বদেশসমূহে এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে, আর বলা হবেঃ এটা হচ্ছে ওটাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ কর।
★ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হেদায়েত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়
فَلَا تُعۡجِبۡکَ اَمۡوَالُہُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُہُمۡ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُعَذِّبَہُمۡ بِہَا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ تَزۡہَقَ اَنۡفُسُہُمۡ وَ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ
সূরা তাওবার ৫৫ নম্বর আয়াতে এ কথা বলা হচ্ছে যে, ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি পরীক্ষার কারণ। আল্লাহ তাআলা সম্পদ ও সন্তানের ব্যাপারে এ আদেশ দিচ্ছেন যে, যদি হালাল সম্পদ ভালো কাজে খরচ কর তাহলে এটা তোমাদের কল্যান বৃদ্ধি ও আখেরাতে কাজে আসবে অন্যথায় এগুলো তোমার উভয় জগতে ধ্বংস টেনে আনবে।
অনুরূপভাবে যদি সন্তানের সুশিক্ষা ও আখেরাতমুখীর চিন্তা করা হয় তাহলে এই সন্তানই হবে চোখের শীতলতা ও মুক্তির উপায় হবে কিন্তু যদি পরকালীন চিন্তা এবং শিক্ষা থেকে দূরে রাখা হয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়ার আরাম আয়েশ নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে এই সন্তান নিয়ে চোখে শুধু অন্ধকার দেখবে। আখেরাতে বিপদের পাহাড় দাঁড়িয়ে যাবে।
★ ঈমানদারের সাথে আল্লাহর ওয়াদা
وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُہُمُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
وَعَدَ اللّٰہُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ وَ رِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
সূরা তাওবার ৭১,৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আর মু’মিন পুরুষরা ও মু’মিনা নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু। তারা সৎ বিষয়ের শিক্ষা দেয় এবং অসৎ বিষয় হতে নিষেধ করে, আর নামাজে গুরুত্ব দেয় ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলে, এসব লোকের প্রতি আল্লাহ পাক অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাবান।
আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনা নারীদেরকে আল্লাহ এমন জান্নাতের ওয়াদা দিয়ে রেখেছেন যেগুলির তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।
আরও (ওয়াদা দিয়েছেন) উত্তম বাসস্থানসমূহের, ঐ স্থায়ী জান্নাতে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় নিয়ামত, এটা হচ্ছে অতি বড় সফলতা।
★ আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ না করার পরিণতি
وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ عٰہَدَ اللّٰہَ لَئِنۡ اٰتٰىنَا مِنۡ فَضۡلِہٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَ لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ
فَلَمَّاۤ اٰتٰہُمۡ مِّنۡ فَضۡلِہٖ بَخِلُوۡا بِہٖ وَ تَوَلَّوۡا وَّ ہُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
فَاَعۡقَبَہُمۡ نِفَاقًا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ اِلٰی یَوۡمِ یَلۡقَوۡنَہٗ بِمَاۤ اَخۡلَفُوا اللّٰہَ مَا وَعَدُوۡہُ وَ بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ
সূরা তাওবার ৭৫,৭৬,৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেঃ আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে (প্রচুর সম্পদ) দান করেন তাহলে আমরা অনেক দান খয়রাত করব এবং খুব ভাল কাজ করব।
কার্যতঃ যখন আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ প্রদান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পণ্য করতে লাগল এবং (আনুগত্য করা হতে) মুখ ফিরিয়ে নিল, আর তারাতো মুখ ফিরিয়ে রাখতেই অভ্যস্ত।
অতঃপর তাদের শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে নিফাক (সৃষ্টি) করে দিলেন, যা আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে এ কারণে যে, তারা আল্লাহর সাথে নিজেদের ওয়াদার খেলাফ করেছে; আর এ কারণে যে, তারা মিথ্যা বলেছে। সূত্র: দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ
-এটি