শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাদেকুর রহমান ।।

১.জোরপূর্বক কেউ কোনো কিছু খাইয়ে দিলে। ২. রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় গোসল কিংবা কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে গলার ভিতরে পানি প্রবেশ করলে। নাকে পানি দেওয়ার সময় উপরের দিকে শ্বাস টানার ফলে মস্তিষ্কে কিংবা কণ্ঠনালীতে পানি পৌঁছে গেলে।
তাই রোযা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না।

লাকিত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-بالغ في الاستنشاق، إلا أن تكون صائما. (অযু-গোসলের সময়) ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোযা অবস্থায় নয়।’-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৩ সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৮৫

সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন, ‘রোযা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাযা করতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৩৮০ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৮৪৪-৯৮৪৭; ফাতাওয়া শামী ২/৪০১ ফাতাওয়া আলমগীরী ১/ ২০৩।

৩. ইচ্ছাকৃত কংকর, পাথরের টুকরা, মাটি অথবা কাগজের টুকরো গিলে ফেললে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও ইকরিমা রাহ. বলেন, ‘(পেটে) কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। কোনো কিছু বের হওয়ার দ্বারা রোজা ভাঙ্গে না।’-সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা’লীক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০ ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২০৩।

৪. দাঁতের ভেতর আটকে থাকা বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে, যদি তা বুট পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি মুখ থেকে বের করে আবার খেয়ে ফেলে তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই বুট পরিমাণের চেয়ে কম হোক বেশি হোক। আলমগীরী ১/২০২ রদ্দুল মুহতার ৩/৩৬৮।

৫. অপরের থুথু গিলে ফেললে অথবা নিজের থুথু বের করে হাতে রেখে আবার তা খেয়ে ফেললে। ৬.দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত গিলে ফেললে, যদি তা থুথু বরাবর বা তার চেয়ে বেশি হয়। আলমগীরী ১/২০৫। ৭. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে অথবা মুখে বমি আসার পর ইচ্ছাকৃত তা গিলে ফেললে আলমগীরী ১/২০৪।

৮. স্ত্রীকে স্পর্শ, চুম্বন বা আলিঙ্গন করার ফলে বীর্যপাত হলে। আলমগিরি ১/২০৫।

৯.ভুলে কোন কিছু আহার করে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় আহার করলে। ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২০৬।
১০. সুবহে সাদিক হয়নি মনে করে সাহরি খেল অথবা স্ত্রী সঙ্গম করল তারপর জানতে পারল যে ঐ সময় সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছিল। রদ্দুল মুতহার ৩/৩৮০। তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

আউন রাহ. থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. রাত্র বাকি আছে ভেবে সাহরী খেলেন। তারপর জানতে পারলেন, তিনি সুবহে সাদিকের পর সাহরী করেছেন তখন তিনি বললেন, ‘আমি আজ রোযাদার নই।’ (অর্থাৎ আমাকে এ রোযার কাযা করতে হবে)।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯

আলী ইবনে হানযালা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রোজার মাসে ওমর রা.-এর নিকট ছিলেন। তার নিকট পানীয় পেশ করা হল। উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে ভেবে তা পান করে ফেলল। এরপর মুয়াযযিন আওয়াজ দিল, আমীরুল মুমিনীন! সূর্য এখনো ডুবেনি। তখন ওমর রা. বললেন, ‘যারা ইফতারি করে ফেলেছে তারা একটি রোযা কাযা করবে। আর যারা ইফতারি করেনি তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬ আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১

১১. হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য।

হাদীস শরীফে কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকাকে রোযার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জান। রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট মেশকের চেয়েও বেশি প্রিয় (আল্লাহ তাআলা বলেন,) রোযাদার আমার জন্য পানাহার করা থেকে এবং কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকে।-সহীহ বুখারী ১/২৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭২; ফাতাওয়া শামী ২/৩৯৯

১২.রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাস শুরু হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। পরে তা কাযা করতে হবে। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহায় মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন-

أليس إذا حاضت لم تصل ولم تصم قلن بلى، قال : فذلك من نقصان دينها. মহিলারা তো ঋতুস্রাবের সময় রোজা রাখতে পারে না এবং নামাযও পড়তে পারে না। এটা তোমাদের দ্বীনের অসম্পূর্ণতা।-সহীহ বুখারী ১/৪৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৪০; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১০০

১৩.পেটের ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোজা ভেঙ্গে যাবে, যদি দওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে পরে সে রোজা কাজা করে নিতে হবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২

১৪. নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে।

১৫.মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরীপাড়া ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ