আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগোর দাপ্তরিক নাম টোগোলেজ রিপাবলিক। এর পশ্চিমে ঘানা, পূর্বে বেনিন, উত্তরে বুরকিনা ফাসো এবং দক্ষিণে ঘানা উপসাগর। লোমে দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। টোগোর মোট আয়তন ৫৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮০ লাখ। মুসলমানরা দেশটির তৃতীয় বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী।
সৌদিভিত্তিক গণমাধ্যম আরব নিউজে টোগোতে মুসলমানের সংখ্যা ১২ থেকে ২২ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ইসলামপ্রচারক সংস্থা ‘আল-মুস্তাওদাউ আল-দাআবি’র মতে দেশটিতে মুসলমানের হার ৩০ শতাংশের বেশি। টোগোর বেশির ভাগ মুসলিম সুন্নি এবং তারা মালেকি মাজহাবের অনুসারী।
ইউরোপীয় ইতিহাস গবেষকদের মতে, খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে ষষ্ঠদশ শতাব্দীর মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টোগোতে একাধিক উপজাতি এসে বসবাস শুরু করে। ষষ্ঠদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দী পর্যন্ত টোগো ছিল ইউরোপীয়দের দাস ব্যবসার কেন্দ্র। তারা টোগোকে ‘স্লেভ কোস্ট’ বা দাসদের সৈকত বলত। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি এই অঞ্চলকে টোগোল্যান্ড নামে একটি আশ্রিত রাজ্য ঘোষণা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর টোগো কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকেই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।
মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, খুব সামান্য পরিমাণে হলেও টোগোতে মানুষ বসবাস শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর বহু আগে। পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশ যেমন নাইজার, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, গাম্বিয়া, ঘানা ইত্যাদিতে যে সময় ইসলাম পৌঁছেছিল টোগোতেও একই সময় ইসলাম পৌঁছেছিল। মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই সেখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছিল।
বিশেষত বারবার ও তুরায়েগ মুসলিম ব্যবসায়ীরা সাব-সাহারান অঞ্চলে যাতায়াত করত। তারা আফ্রিকার স্বর্ণ ও লবণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও আলেমরাও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চল ভ্রমণ করেন এবং তারা বাণিজ্য পথগুলোতে অসংখ্য মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
আফ্রিকান যাযাবর গোষ্ঠী ফুলানি ও হাউসা টোগোতে ইসলাম প্রচারে বিশেষ অবদান রাখেন। টোগোর কোটোকোলি উপজাতি অত্র অঞ্চলের বাণিজ্য পথগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। তারা খ্রিস্টীয় ১৮ শতকে ইসলাম গ্রহণ করে। বর্তমানে এই সম্প্রদায়ের প্রায় দুই লাখ সদস্যের প্রায় সবাই মুসলিম। টোগোতে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘরে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে।
যখন সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে একাধিক ইসলামী রাজ্যের উত্থান হয়েছিল। ঘানা, সেনেগাল ও নাইজেরিয়ার উত্তরে পৃথক পৃথক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার আগে টোগোর উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যার একটি উনিশ শতকের শুরুর ভাগ পর্যন্ত টিকে ছিল।
টোগোতে ইসলাম একটি ক্রমবর্ধমান ধর্ম। দেশটিতে একাধিক মুসলিম সংগঠন ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা প্রচারে কাজ করছে। ফেডারেশন অব টোগো মুসলিমস দেশটির সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন। টোগোর মুসলিমরা শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখানে বেশ কিছু আধুনিক ইসলামী স্কুল আছে। ফেডারেশন অব টোগো রাজধানী লোমেতে দুটি স্কুল, লগিতে একটি ইসলামিক সেন্টার ও সোনকোতে একটি মুসলিম একাডেমি পরিচালনা করে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-এর সহায়তায় ফেডারেশন একটি মুসলিম একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছে।
যেখানে পাঁচ শ শিক্ষার্থী প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। এ ছাড়া ফেডারেশন টোগোর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু ছোট ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে।
টোগোর মুসলিম অধ্যুষিত প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই মসজিদ আছে। রাজধানী লোমেতে মসজিদের সংখ্যা ৪০টি। দেশটির প্রতি দুই মসজিদের একটিতে জুমার নামাজ হয়। বর্তমানে টোগোর ৯টি টেলিভিশন স্টেশনের মধ্যে চারটিতেই মুসলিমরা উপদেশমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ পায়।
এছাড়া মুসলমানদের একাধিক নিজস্ব রেডিও স্টেশন, দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকী রয়েছে। ‘জাবালে নুর’ টোগোর জনপ্রিয় ইসলামী রেডিও স্টেশন। টোগোর অন্য ধর্মাবলম্বী ও সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক ভালো। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদেও বহু মুসলিম কর্মরত আছে।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ, ইসলামিক ওয়েব দাওয়াহ ডট সেন্টার ও উইকিপিডিয়া