আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তাইওয়ানের অন্যতম প্রধান ইসলামী স্থাপনা ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব তাইপে’। আগস্ট ১৯৪৮ সালে একটি জাপানি স্থাপত্যরীতিতে তৈরি বাড়িতে নামাজ আদায় শুরু হয় এবং ১৯৪৯ সালে মাত্র তিন শ স্কয়ার মিটার জায়গার বাড়িটিকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়।
মূলত ১৯৪৫ সালে জাপান তাইওয়ান দ্বীপপুঞ্জ চীনের কাছে হস্তান্তর করলে ‘চায়নিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন’ (সিএমএ) মুসলিম ঝেং হাউরেন ও চ্যাং জিচুনকে তাইওয়ানে ‘সিএমএ’র কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন এবং ২৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ তাইওয়ানে সিএমএর কমিটি গঠিত হয়। এরপর ঝেং হাউরেন ও চ্যাং জিচুন তাইপেতে মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠায় সাধারণ মুসল্লিরা সহযোগিতা করেন।
১৯৪০ সালে তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বড় পরিসরে মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাইওয়ানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ে গংচাও জেনারেল বাই চংজির সরকারের কাছে একটি আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ নির্মাণের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, এটা করা প্রয়োজন যেন মুসলিম রাষ্ট্রের অতিথিরা ইসলামী রীতি অনুসারে ইসলামী স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারেন এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে সরকার ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা একাধিক বৈঠক করেন এবং আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ নির্মাণে সম্মত হন। ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালে তাইপে মসজিদ নির্মাণ কমিটি গঠিত হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল ছয় মিলিয়ন তাইওয়ানি মুদ্রা ব্যয়ে ছয় শ মুসল্লির সংকুলান হয় এমন একটি মসজিদ নির্মাণ করা।
মসজিদের নকশা তৈরি করেন প্রখ্যাত স্থপতি ইয়াং চু-চেং। মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকার দুই হাজার ৪৭৪ বর্গমিটার জায়গা প্রদান করে। মসজিদ নির্মাণের জন্য ‘ব্যাংক অব তাইওয়ান’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামে চার মিলিয়ন ইয়েন ঋণ প্রদান করে। মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেন। তাঁদের মধ্যে ইরানের সাবেক রাজা পাহলভি, জর্দানের প্রয়াত রাজা, সাবেক তুর্কি প্রধানমন্ত্রী মেন্দেলাস, ইরাকের সাবেক যুবরাজ আবদুল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়া স্থানীয় ও বিদেশি বহু মুসলিম মসজিদ নির্মাণে অর্থ সহায়তা করেন। তাইপে গ্র্যান্ড মস্কের উদ্দেশ্য শুধু মুসলমানদের নামাজের স্থান বৃদ্ধি করাই ছিল না, বরং এর রাজনৈতিক অভিলাষও ছিল। তা হলো তাইওয়ানে ভ্রমণকারী মুসলিম অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ১৩ এপ্রিল ১৯৬০ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট চে চেং মসজিদ উদ্বোধন করেন।
নির্মাণের পর সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ ফয়সাল, জর্দানের বাদশাহ হুসাইনসহ বহু মুসলিম নেতা মসজিদটি পরিদর্শন করেন। পশ্চিম এশিয়ার মসজিদ নির্মাণশৈলী ও আরবীয় স্থাপত্যরীতির সমন্বয়ে ‘তাইপে গ্র্যান্ড মস্ক’ নির্মিত।
মসজিদ ভবনে আছে এক গম্বুজবিশিষ্ট প্রার্থনাকক্ষ, অজুখানা, একটি মিলনায়তন ও একটি প্রাঙ্গণ। এর মূল অবকাঠামোটি কংক্রিটে তৈরি এবং এর খিলান, দরজার চৌকাঠ ও দেয়াল মোজাইক প্যাটার্নে নকশাকৃত। স্তম্ভগুলো উন্নতমানের পাথর দ্বারা আবৃত এবং প্রধান দরজা ও জানালাগুলো নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত কাচের তৈরি। মসজিদের ডান ও বাঁ দিকের মিনারগুলো পারসিক স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। আবার অভ্যন্তরীণ নকশা তুর্কিরীতিতে করা হয়েছে। অর্থাৎ তাইপে গ্র্যান্ড মসক মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্তের স্থাপত্যরীতির সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
১৯৬০ সাল থেকে ‘তাইপে গ্র্যান্ড মস্ক’ তাইওয়ানিজ মুসলমানের প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২৯ জুন ১৯৯৯ তাইপে শহর কর্তৃপক্ষ শহরের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে মসজিদটিকে তালিকাভুক্ত করেছে। ফলে মুসলমানদের প্রাত্যহিক প্রার্থনা, বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষ তা পরিদর্শনে আসে। তাইওয়ানে মুসলমানের বৃহত্তম সংগঠন ‘সিএমএ’-এর প্রধান দপ্তর অবস্থিত।
ধর্মীয় বিধি-বিধান পরিপালনের পাশাপাশি তাইপে গ্র্যান্ড মস্ক ১৯৯৫ সাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। তথ্যসূত্র : তাইপে মস্ক ডটওয়ার্গ ও উইকিপিডিয়া
-এসআর