মুফতি এহসানুল হক।।
চার ও তিন রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায, বিতির এবং চার রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাতে মুআক্কাদা যথা যোহরের পূর্বের চার রাকাত ও জুমার পূর্বের ও পরের চার রাকাত সুন্নাতের ১ম বৈঠকে তাশাহহুদের পর কেহ যদি দরুদ শরীফ পড়ে ফেলে বা اللهم صل على محمد পর্যন্ত পড়ে ফেলে তাহলে এই ভুলের কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়।
পক্ষান্তরে চার রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা যথা আসর ও ইশার ফরযের পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত ও চার রাকাত বিশিষ্ট নফল নামাযের ক্ষেত্রে ১ম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ ও দুআয়ে মা'সূরা পড়ে ফেললে সেজদায়ে সাহু তো ওয়াজিব হবেই না। বরং তাশাহহুদের পর দরুদ শরীফ ও দুআয়ে মা'সূরা পড়ে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাড়ানো (মুস্তাহাব) উত্তম।
তেমনিভাবে তৃতীয় রাকআতে দাঁড়ানোর পর 'সানা, তাআওউয (আউযুবিল্লাহ) ও তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ) পূর্ণ পড়ে সূরা ফাতেহা শুরু করা উত্তম।
তবে কেহ যদি সুন্নাতে গাইরে মুআক্কাদার তাশাহুদের পর দরুদ ও দুআ এবং ৩য় রাকাতের শুরুতে সানা, তাআউওয ও তাসমিয়া না পড়ে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।
অনেক মুসল্লী সঠিক মাসআলা না জানার দরুন সুন্নাতে মুআক্কাদার মত চার রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাতে গাইরে মুআক্কাদার ক্ষেত্রেও ১ম বৈঠকে দরুদ শরীফ পড়ে ফেললে সেজদায়ে সাহু দেয়। যা ভুল পন্থা।
ইমাম শা'বী (১০৩) কে তাশাহহুদের পর দুরুদ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,
ﻋَﻦِ اﻟﺸَّﻌْﺒِﻲِّ، ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﻦْ ﺯَاﺩَ ﻓِﻲ اﻟﺮَّﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ اﻷُْﻭﻟَﻴَﻴْﻦِ ﻋَﻠَﻰ اﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﺳَﺠْﺪَﺗَﺎ ﺳَﻬْﻮٍ.
মুসান্নাফু ইবনি আবী শায়বা: ৩০২২
ইবনু আবেদীন শামী র. (১২৫০) ও আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী র. ( ১০৮৮) সুন্নাতে মুআক্কাদা ও গাইরে মুআক্কদায় পার্থক্য করে আরো স্পস্ট লিখেন-
ﻭَﻻَ ﻳُﺼَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻰ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻓِﻲ اﻟْﻘَﻌْﺪَﺓِ اﻷُْﻭﻟَﻰ ﻓِﻲ اﻷَْﺭْﺑَﻊِ ﻗَﺒْﻞَ اﻟﻈُّﻬْﺮِ ﻭَاﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ) ﻭَﻟَﻮْ ﺻَﻠَّﻰ ﻧَﺎﺳِﻴًﺎ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ اﻟﺴَّﻬْﻮُ، ﻭَﻗِﻴﻞَ ﻻَ ﺷُﻤُﻨِّﻲٌّ (ﻭَﻻَ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﺢُ ﺇﺫَا ﻗَﺎﻡَ ﺇﻟَﻰ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﻣِﻨْﻬَﺎ) ﻷَِﻧَّﻬَﺎ ﻟِﺘَﺄَﻛُّﺪِﻫَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻬَﺖْ اﻟْﻔَﺮِﻳﻀَﺔَ (ﻭﻓﻲ اﻟﺒﻮاﻗﻲ ﻣِﻦْ ﺫَﻭَاﺕِ اﻷَْﺭْﺑَﻊِ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻰ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ) - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - (ﻭَﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﺢُ) ﻭَﻳَﺘَﻌَﻮَّﺫُ ﻭَﻟَﻮْ ﻧَﺬْﺭًا ﻷَِﻥَّ ﻛُﻞَّ ﺷَﻔْﻊٍ ﺻَﻼَﺓٌ.
وفي رد المحتار:أَمَّا إذَا كَانَتْ سُنَّةً أَوْ نَفْلًا فَيَبْتَدِئُ كَمَا ابْتَدَأَ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى، يَعْنِي يَأْتِي بِالثَّنَاءِ وَالتَّعَوُّذِ لِأَنَّ كُلَّ شَفْعٍ صَلَاةٌ عَلَى حِدَةٍ اهـ لَكِنْ قَالَ شَارِحُهَا: الْأَصَحُّ أَنَّهُ لَا يُصَلِّي وَلَا يَسْتَفْتِحُ فِي سُنَّةِ الظُّهْرِ وَالْجُمُعَةِ، وَكَوْنُ كُلِّ شَفْعٍ صَلَاةً عَلَى حِدَةٍ لَيْسَ مُطَّرِدًا فِي كُلِّ الْأَحْكَامِ، وَلِذَا لَوْ تَرَكَ الْقَعْدَةَ الْأُولَى لَا تَفْسُدُ خِلَافًا لِمُحَمَّدٍ.
রাদ্দুল মুহতার আলা হামিশিদ্দুররিল মুখতার- ২/৪৫৬-৪৫৭ (যাকারিয়া বুকডিপো)
যার সারকথা হল যে, চার রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাতে মুআক্কাদার প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরীফ পড়বেনা, ভুলে পড়ে ফেললে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে।
কারণ সুন্নাতে মুআক্কাদাগুলো "মাশরুইয়্যাত ও গুরুত্ব"র দিকদিয়ে ফরয ও ওয়াজিব সাদৃশ্য। আর চার রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও নাওয়াফিলের প্রতি দু'রাকআত ভিন্ন ভিন্ন সালাতের মত। তাই দু'রাকআত নফল যেভাবে পড়তে হয় সেভাবেই চার রাকাত নামায এক সালামে পড়তে হবে।
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফাতওয়াগ্রন্থ ফাতওয়া হিন্দিয়্যাতে আছে-
ﻭَﻓِﻲ اﻷﺭﺑﻊ ﻗَﺒْﻞَ اﻟﻈُّﻬْﺮِ ﻭَاﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﻻَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻰ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻓِﻲ اﻟْﻘَﻌْﺪَﺓِ اﻷُْﻭﻟَﻰ ﻭَﻻَ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﺢُ ﺇﺫَا ﻗَﺎﻡَ ﺇﻟَﻰ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﺑِﺨِﻼَﻑِ ﺳﺎﺋﺮ ﺫﻭاﺕ اﻷَْﺭْﺑَﻊِ ﻣِﻦْ اﻟﻨَّﻮَاﻓِﻞِ. ﻛَﺬَا ﻓِﻲ اﻟﺰَّاﻫِﺪِﻱِّ.
ফাতওয়া হিন্দিয়্যাহ: ১/১১৩ (যাকারিয়া বুকডিপো)
ইবনু নুজাইম আল মিসরী আল হানাফী র.(৭৯০) আল বাহরুর রায়েক (যাকারিয়া বুকডিপো) ২/৪৯ তেও এমনটিই ব্যক্ত করেছেন।
ড. ওয়াহবা মুস্তফা আযযুহায়লী আলফিকহুল ইসলামী ও আদিল্লাতুহু ২/১০৬৮ পৃষ্ঠায় এক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের মত ব্যক্ত করে লিখেন-
ﻳﻘﺘﺼﺮ اﻟﻤﺘﻨﻔﻞ ﻓﻲ اﻟﺠﻠﻮﺱ اﻷﻭﻝ ﻣﻦ اﻟﺮﺑﺎﻋﻴﺔ اﻟﻤﺆﻛﺪﺓ (ﻭﻫﻲ اﻟﺘﻲ ﻗﺒﻞ اﻟﻈﻬﺮ ﻭاﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ) ﻋﻠﻰ اﻟﺘﺸﻬﺪ، ﻭﻻ ﻳﺄﺗﻲ ﻓﻲ اﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﺑﺪﻋﺎء اﻻﺳﺘﻔﺘﺎﺡ ﻋﻠﻰ اﻷﺻﺢ. ﺃﻣﺎ اﻟﺮﺑﺎﻋﻴﺔ اﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ (ﻏﻴﺮ اﻟﻤﺆﻛﺪﺓ)، ﻓﺈﻧﻪ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻲ اﻟﻘﻌﻮﺩ اﻷﻭﻝ اﻟﺘﺸﻬﺪ ﻭاﻟﺼﻼﺓ اﻹﺑﺮاﻫﻴﻤﻴﺔ ﻭﻳﺄﺗﻲ ﺑﺎﻻﺳﺘﻔﺘﺎﺡ ﻭاﻟﺘﻌﻮﺫ ﻓﻲ اﺑﺘﺪاء اﻟﺜﺎﻟﺜﺔ، ﺃﻱ ﻓﻲ اﺑﺘﺪاء ﻛﻞ ﺷﻔﻊ ﻣﻦ اﻟﻨﺎﻓﻠﺔ.
দারুল ইফতা দেওবন্দের ফাতওয়া নম্বর ৬০৭২৫ তে লেখা হয়েছে-
سنت موٴکدہ اور غیر موٴکدہ میں یہ فرق ہے کہ سنت موٴکدہ میں دوسری رکعت کے قعدہ میں بعد تشہد درود شریف اور تیسری رکعات کے شروع میں ثناء نہیں پڑھی جاتی اور غیرموٴکدہ سنت اور نوافل میں بعد تشہد کے درود شریف اور تیسری رکعت کے شروع میں ثنا کا پڑھنا مستحب ہے۔
সুতরাং উল্লেখিত পর্যালোচনার মাধ্যমে সুস্পস্ট জানা গেলো যে, চার রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে ১ম বৈঠকের তাশাহহুদের পর দরুদ শরীফ ও দুআয়ে মা'সূরা পড়া এবং তৃতীয় রাকআতের শুরুতে সানা, তাআউওয ও তাসমিয়া পড়া মুস্তাহাব (উত্তম) ।
বি:দ্র: জুমার পরবর্তী চার রাকাত মুআক্কাদায় কেহ যদি তাশাহুদের পর দরুদ পড়ে ফেলে তাহলে সেজদায়ে সাহু দেয়া জরুরী নয়; বরং ৪ রাকাত বিশিষ্ট নাওয়াফেলের মত দরুদ শরীফ পড়ার অবকাশ আছে। কারণ বা'দাল জুমার সুন্নাত যদিও মুআক্কাদা কিন্তু চার রাকাত পড়া মুআক্কাদ নয়। চার রাকাত নাকি দুই রাকাত তাতে মতপার্থক্য আছে।
মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী র. তার প্রসিদ্ধ ফাতওয়াগ্রন্থ আহসানুল ফাতওয়া-র ৪/৪৯০ পৃষ্ঠায় লিখেন-
سنن غیر مؤکدہ میں دو رکعت پر درود شریف اور دعا پڑھنا اور تیسری رکعت کے شروع میں ثنا پڑہنا افضل ہے، سنن مؤکدہ میں درود شریف نہ پڑھے، اگر سہوا پڑھ لیا تو سجدۂ سہو واجب ہوگا، البتہ جمعہ کے بعد کی سنتوں کے قعدۂ اولی میں درود شریف پڑھنا جائز ہے، اس سے سجدۂ سہو نہی، اس لئے کہ یہ چار رکعت اگرچہ مؤکدہ ہیں مگر چارو کو ایک سلام سے پڑھنا مؤکد نہیں۔
ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻭَﻻَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺇﻟَﺦْ) ﺃَﻗُﻮﻝُ: ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻲ اﻟْﺒَﺤْﺮِ ﻓِﻲ ﺑَﺎﺏِ ﺻِﻔَﺔِ اﻟﺼَّﻼَﺓِ: ﺇﻥَّ ﻣَﺎ ﺫَﻛَﺮَ ﻣُﺴَﻠَّﻢٌ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻗَﺒْﻞَ اﻟﻈُّﻬْﺮِ، ﻟِﻤَﺎ ﺻَﺮَّﺣُﻮا ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﻧَّﻪُ ﻻَ ﺗَﺒْﻄُﻞُ ﺷُﻔْﻌَﺔُ اﻟﺸَّﻔِﻴﻊِ ﺑِﺎﻻِﻧْﺘِﻘَﺎﻝِ ﺇﻟَﻰ اﻟﺸَّﻔْﻊِ اﻟﺜَّﺎﻧِﻲ ﻣِﻨْﻬَﺎ، ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻓْﺴَﺪَﻫَﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻭَاﻷَْﺭْﺑَﻊُ ﻗَﺒْﻞَ اﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺑِﻤَﻨْﺰِﻟَﺘِﻬَﺎ. ﻭَﺃَﻣَّﺎ اﻷَْﺭْﺑَﻊُ ﺑَﻌْﺪَ اﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﻐَﻴْﺮُ ﻣُﺴَﻠَّﻢٍ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻛَﻐَﻴْﺮِﻫَﺎ ﻣِﻦْ اﻟﺴُّﻨَﻦِ، ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﻢْ ﻳُﺜْﺒِﺘُﻮا ﻟَﻬَﺎ ﺗِﻠْﻚَ اﻷَْﺣْﻜَﺎﻡَ اﻟْﻤَﺬْﻛُﻮﺭَﺓَ اﻩـ ﻭَﻣِﺜْﻠُﻪُ ﻓِﻲ اﻟْﺤِﻠْﻴَﺔِ، ﻭَﻫَﺬَا ﻣُﺆَﻳِّﺪٌ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﺤَﺜَﻪُ اﻟﺸُّﺮُﻧْﺒُﻼَﻟِﻲُّ ﻣِﻦْ ﺟَﻮَاﺯِﻫَﺎ ﺑِﺘَﺴْﻠِﻴﻤَﺘَﻴْﻦِ ﻟِﻌُﺬْﺭٍ. رد المحتار، باب الوتر والنوافل: ٢/١٦، دار الفكر.
আরো দেখুন:
তাবয়ীনুল হাকায়িক: ১/১৯৬
মারাকিল ফালাহ: ১৪৭
ফাতওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ: ৪/১৭৬(১৭৪০)
ফাতওয়া মাহমূদদিয়া: ৪/৩৩৪
কিতাবুল ফাতাওয়া: ২/৩৪০
ফাতওয়া রাহীমিয়া: ২/১৯০
আহসানুল ফাতওয়া: ৩/৪৯০
ফাতওয়া হক্কানিয়া: ৩/২৫৪
আপকে মাসায়েল আওর উনকে হাল: ২/৩৪৪
ফাতওয়া ফকীহুল মিল্লাত: ৪/২০৬
লেখক: মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
-এটি