রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির ফুলপুরে জমিয়তের কমিটি গঠন

বড়দের জীবন: নেত্রকোণা জেলার একজন সুতারপুরী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাহিদুল ইসলাম

বন্ধুরা! ইতিপূর্বে তোমরা বড় বড় মনীষীদের, আকাবিরদের জীবনী জেনেছ, পড়েছ। নতুন করে একজন মনিষীর, আকাবিরের জীবনী শোনাবো। যিনি হলেন মারহুম মাগফুর হযরত মাওলানা মিছবাহুজ্জামান সূতারপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

হযরত মাওলানা মিছবাহুজ্জামান (সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার সুতারপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তার জন্মগ্রহণের নির্দিষ্ট দিন এবং সময় জানা যায়নি। শুধু এতটুকু জানা যায় যে, বাংলা ১৩২৬ সনে আশ্বিন মাসে এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ের ১২ দিন পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জনাব ইজ্জত আলী, মাতার নাম আমিনা। তিনি তার পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। হযরতের জন্য গ্রহণের ৫/৭ বছর পর তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার ইন্তেকালের পর শৈশবকাল মাতা এবং বড় ভাইদের তত্ত্বাবধানে অতিবাহিত হয়।

শিক্ষা দীক্ষা: তিনি শুনই মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। সেখানে কায়দা, আমপাড়া পড়েন। অতঃপর তিনি তার গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রূপচন্দ্রপুর মক্তব খানায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

অতঃপর তাঁর শিক্ষা জীবনের মুরুব্বী কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানাধীন চাঁনপুর নিবাসী হযরত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সাহেব রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর পরামর্শে এবং তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল থানার সিংদা গ্রামের মাদ্রাসায় জনাব মাওলানা ইসমাঈল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট কাফিয়া, কুদুরী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

সেকালে আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা খুবই কম ছিল। বিশেষ করে উঁচু পর্যায়ের ক্বওমি মাদ্রাসা একেবারেই বিরল ছিল। তাই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের আদেশে কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত হযরত নগর আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে সুনামের সাথে লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। সে যুগে এই মাদ্রাসার শিক্ষার গুণগতমান খুবই উন্নত ছিল। স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষক ও বুজুর্গ সেখানে পাঠদান করতেন।

তন্মধ্যে মুজাহিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আতহার রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা আহমদ আলী খাঁন সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর অন্যতম খলিফা হযরত মাওলানা ইব্রাহিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখযোগ্য।

হযবতনগর মাদ্রাসার হেড মাওলানা কিশোরগঞ্জ হযরতের মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর আত্মীয় হযরত মাওলানা ইব্রাহিম সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ইছলাহে নফসের (আত্মসুদ্ধির) জন্য হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর দরবারে চলে গেলে উক্ত সময়ে উল্লেখিত মাদ্রাসায় হযরত মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট বিভিন্ন কিতাব পড়েন। তিনি হযবতনগর মাদ্রাসায় হযরত মাওলানা আহমদ আলী খাঁন সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট বিশ্ব বিখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি সাহেব এর লিখিত প্রসিদ্ধ কিতাব মসনবী শরীফ অধ্যায়ন করেন।

কর্ম জীবন: তিনি ছিলেন আজীবন শিক্ষক। তিনি শিক্ষকতা তথা দ্বীনী তালিমের কাজকেই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। হযবতনগর মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা অবস্থায় তিনি হযরত মাওলানা আতহার আলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সঙ্গে ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপন করে তার হাতে বায়াত হন।

হযবতনগর মাদ্রাসায় লেখাপড়া সমাপ্ত করার পর তিনি স্বীয় মুর্শিদ হযরত মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নির্দেশে কিশোরগঞ্জ জেলার রামপুর গ্রামের মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। কিছুদিন পর স্বীয় শাইখের নির্দেশে ওই মাদ্রাসা ছেড়ে কিশোরগঞ্জ জেলার হাতড়াপাড়া মাদ্রাসায় দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত হন। অতঃপর মায়ের আদেশে শায়খের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন।

অতঃপর পুনরায় শাইখের নির্দেশে নেত্রকোণা মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তার জীবনের দীর্ঘ সময় উলূমে নববী (নববী জ্ঞানের) প্রচার প্রসারে অতিবাহিত হয়। তিনি জামিয়া মিফতাহুল উলূমে প্রায় ৫০ বছর ব্যপী সুদীর্ঘ শিক্ষকতা কালে মরহুম হযরত মাওলানা মঞ্জুরুল হক রহমাতুল্লাহ আলাইহি মুহতামিম থাকাকালীন মাদ্রাসার বিভিন্ন দায়িত্ব যথা নাজেমে মাতবাখ, নাজেমে দারুল একামা, নাজেমে কুতুবখানা ও নায়েবে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মুরুব্বিদের অনুরোধে দুই দফায় প্রায় সাড়ে তিন বছর অত্যন্ত সফলতার সাথে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে বার্ধক্যের কারণে শিক্ষকতার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি অত্র মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কমিটি মজলিসের শুরার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন যেমন দক্ষ ও যোগ্য তেমনি তাঁর ব্যক্তিত্বও ছিল বিশাল ও গুরু গম্ভীর। খোদা প্রদত্ত এমন ব্যক্তিত্বের কারণে কেউই তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস পেত না।

কৃতিময় জীবন:
হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের অধিকারী। ৫০ বছরের অধিক তার শিক্ষকতার জীবনে রয়েছে অসংখ্য অগণিত ছাত্র। যারা জাতীয় ও সামাজিক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফতী, মুহতামিম, ইসলামী রাজনীতিবিদ ও লেখক।

হযরত সুতারপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি জামিয়া মিফতাহুল উলুম-এ সুদীর্ঘকাল শিক্ষকতা করার পাশাপাশি নেত্রকোনা শহরস্থ চকবাজার মসজিদে 40 বছরের অধিক ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। এ মসজিদ কেন্দ্রিক তাঁর দাওয়াত, তাবলীগ ও ইসলাহে উম্মতের জন্য রয়েছে সীমাহীন অবদান। তিনি ছিলেন দল মত নির্বিশেষে নেত্রকোনা জেলার সকল শ্রেণীর মানুষের পরম শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি।
তার কাছে আগমন করত সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষ। কেউ তাঁর কাছে আসতো শরয়ী সমস্যার সমাধান নিতে বা স্বীয় অন্যায়ের অনুতপ্ত হয়ে তার হাতে হাত রেখে তওবা করার জন্য।

কেউবা তাঁর শরণাপন্ন হত বিপদগ্রস্ত কিংবা রোগাক্রান্ত হয়ে তার পরামর্শ এবং দোয়া নেওয়ার জন্য। তাঁর কীর্তিময় জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান হলো "আশরাফুল উলূম" সুতারপুর মাদ্রাসা। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এলম ও আমলের সমান্বয় ঘটিয়ে উলামায়ে দেওবন্দের উত্তরসূরি খাঁটি ওয়ারিসুল আম্বিয়া গড়ে তোলার মানষে কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে তথা স্বীয় গ্রামে ১৪০৮ হিজরীতে প্রতিষ্ঠা করেন "আশরাফুল উলূম" সুতারপুর মাদ্রাসা।

হযরতের ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের বরকতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দিনান্তর মাদ্রাসাটি উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে ২.১৭ একর জমির উপর স্থাপিত মাদ্রাসায় প্রায় এক হাজার ছাত্র দ্বীনি ইলম শিক্ষা লাভ করছে। শিক্ষা দীক্ষা ও আমল আখলাকের ব্যাপারে মাদ্রাসার সুনাম সুখ্যাতি বৃহত্তর মোমেনশাহী অঞ্চল অতিক্রম করে সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। প্রতি বছরই অত্র মাদ্রাসার বিভিন্ন ক্লাসের শতাধিক ছাত্র বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকায় স্থান লাভ করা সহ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে আসছে। শিক্ষা দীক্ষা এবং ফলাফলের বিবেচনায় এই মাদ্রাসাটি দেশের তালীম তরবিয়ত সমৃদ্ধ উন্নত মানের মাদ্রাসা সমূহের অন্তর্ভুক্ত।

রাজনৈতিক জীবন: মুজাহিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উস্তাদ এবং শায়েখ। আর তিনি ছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানী। তিনি মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র এবং সে রাষ্ট্রের সংবিধান কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক হওয়ার জন্য আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।

হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ এবং শায়েখ হযরত মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত নেজামে ইসলাম পার্টির একজন বলিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এ দেশে ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে যখনই ইসলামী আন্দোলন গড়ে উঠেছে তিনি সে সকল ইসলামী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলার দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেত্রকোনা জেলার সভাপতি পদে ও অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০০১ ইং সনে হাইকোর্ট থেকে সকল প্রকার ফতোয়া নিষিদ্ধ এরায় প্রদান করা হলে এর প্রতিবাদে এবং এ দেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। তিনি নেত্রকোনা জেলা শাখার এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।

এছাড়া নেত্রকোণা শহরে বিভিন্ন সময় যখনই কোন ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তখনই তিনি নাহি আনিল মুনকার (অসৎ কাজে নিষেধ করা) শরীয়তের এ হুকুম পালনার্থে ওলামায়ে কেরাম এবং তাওহীদী জনতাকে সাথে নিয়ে শরীয়ত বিরোধী এ সকল কাজের প্রতিবাদ করেছেন এবং প্রতিরোধ গড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

আধ্যাত্বিক জীবন: হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত অবস্থায় হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বিশিষ্ট খলিফা মুজাহিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আজহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

হযরতের ইন্তেকালের পর তাঁর প্রধান খলিফা জামিয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ এর আমরণ প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা আহমদ আলী খাঁন সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপন করেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর বিশিষ্ট খলীফা বড় মসজিদের ইমাম ও খতীব হযরত মাওলানা আব্দুল হক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম তাঁকে খেলাফত প্রদান করেন।

ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য:
হযরত সুতারপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পূর্ণ জীবন ছিল কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের আলোকে পরিচালিত। মুস্তাহাব আমলকেউ তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করতেন। শরীয়তের কোন অনুতম কাজও যেন তার থেকে প্রকাশ না পায় এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। এক কথায় বলা যায় তিনি ছিলেন পূর্ববর্তী বুযুর্গানে দ্বীনের উজ্জ্বল নমুনা। তার জীবন ছিল কোরআন ও হাদীসের আমলী দৃষ্টান্ত। নিম্নে তার কতিপয় বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো।

তাক্বওয়া: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন "সন্দেহে নিক্ষিপ্তকারী বস্তুকে ত্যাগ করে সংশয়হীন বস্তু গ্রহণ করো" । তিনি ছিলেন এ হাদীসের বাস্তব নমুনা। নেত্রকোনার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম এবং বুজুর্গ হওয়ার কারণে তাঁর দরবারে আগমন ঘটতো সমাজের সর্বস্তরের মানুষের। তারা মহব্বতের কারণে হাদিয়া স্বরূপ টাকা, খাদ্যদ্রব্য, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি পেশ করত। কিন্তু যাদের উপার্জন সন্দেহযুক্ত ছিল তাদের হাদিয়া তিনি গ্রহণ করতেন না। কেউ তাঁর নিষেধ ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেখে গেলে তিনি তা গরীব-মিসকিনদেরকে দিয়ে দিতেন। নিজের এবং পরিবারের কাউকে ভোগ করতে দিতেন না।

হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মাথার কাছ থেকে জানতে পারেন যে তাঁর দাদা শেষ বয়সে দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন। দাদার ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছোট সন্তানদেরকে নিয়ে পিত্রালয়ে চলে যান। প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা তাঁর পিতার মিরাস নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেন। তিনি এ কথা জানার পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত স্বীয় অংশ এবং তাঁর ভাইদের অংশ থেকে তাদের অংশ বের করে এর মূল্য নির্ধারণ করেন এবং তাদের ন্যায্য পাওনা জীবিত আত্মীয়-স্বজনকে বুঝিয়ে দেন।

জামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষকতার শেষ সময়ে বার্ধক্যের কারণে সবকটি ক্লাস নিতে তার কষ্ট হতো। যার ফলে তখনকার মুহতামিম মরহুম মাওলানা আব্দুল খালেক সাহেবকে বলেন যে, তাঁকে তিনটে ক্লাস প্রদান করে মাদ্রাসা থেকে প্রদত্ত ভাতা কমিয়ে দিতে। তখন মুসতামিম সাহেব তাকে তিনটি ক্লাস প্রদান করে আশ্বস্ত করেন যে, আমি পরিচালনা পরিষদের মিটিংয়ে আলোচনা করে পূর্ব প্রদত্ত বেতন অনুমোদন করিয়ে নিব। পরবর্তীতে কয়েক বছর পর তিনি জানতে পারেন যে, এ ব্যাপারটি পরিচালনা পরিষদের মিটিংয়ে আলোচনা করে অনুমোদন করা হয় নি। তখন তিনি মাদ্রাসা হতে প্রাপ্ত বিগত কয়েক বছরের ভাতা কে ৫ ভাগ করে দুইভাগ মাদ্রাসায় জমা দিয়ে দেন।

ইবাদত: তিনি ছিলেন ইবাদত পাগল। তাহাজ্জুদ, ইসরাক, চাস্ত, সালাতুল আওয়াবীন, নফল নামাজ, তিলাওয়াতে কোরআন, মোনাজাতে মাকবুল ইত্যাদি অজিফা ছিল তার প্রত্যাহিত আমল। হাদিস শরীফে আছে, সর্বোৎকৃষ্ট আমল হল যা সর্বদা করা হয়, পরিমাণের দিক দিয়ে যদিও তা কম হয়। মৃত্যু পর্যন্ত সদা সর্বদা তিনি উল্লেখিত আমল গুলো করে গেছেন এমনকি জীবনের শেষ সময়ের দুর্বলতার কারণে তার শক্তি সামর্থ্য হ্রাস পেয়েছিল।

খাদেমের সাহায্য ব্যতীত চলাফেরা করতে কষ্ট হতো। তখনো অধিকাংশ সময় সকল প্রকার নফল নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তেন। শীতকালে প্রচন্ড শীতের সময় গরম বিছানা ছেড়ে দিয়ে অজু এস্তেঞ্জা করে অসুস্থ দুর্বল শরীর নিয়ে মাওলা পাকের দরবারে দাঁড়িয়ে যেতেন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য। আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল শেষ জীবনে কখনো কখনো দুর্বলতার কারণে মাদ্রাসার নিজ কক্ষ থেকে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়তে যাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল বলে স্বীয় কক্ষেই কয়েকজনকে নিয়ে জামাত সহ নামাজ পড়ে নিতেন। আল্লাহ এ বান্দা শেষ রাতে খোদা প্রদত্ত শক্তিতে বলিয়ান হয়ে একাকী অজু এস্তেঞ্জা করে দীর্ঘক্ষণ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন।

রহমত, মাগফেরাত এবং দুযখ থেকে মুক্তির পয়গাম নিয়ে যখন মাহে রমজানের আগমন ঘটতো তখন তিনি সবকিছু ভুলে রমজানের রহমত, মাগফেরাত ও ফজীলত লাভের আশায় দিবা-নিশি এবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকতেন। রমজানের একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়ে যায় এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকের এ'তেকাফ করা ছিল জীবনের শেষ দুই বছর ব্যতীত সব সময়ের আমল। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন "তোমরা রমজানের শেষ দশকের রাতে শবে কদর তালাশ কর"। সেই বরকতময় রজনীর রহমত ও ফজিলত লাভের আশায় শেষ দশকের রজনী সমূহের মধ্যভাগে ১/২ ঘন্টা বিশ্রাম করে সারারাত নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কোরআন, জিকির ও দোয়ার মধ্যে কাটিয়ে দিতেন।

তাসহীহে নিয়ত (নিয়ত বিশুদ্ধ করন): নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, "সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তাই পায়। (আল-হাদীস)

এ প্রসঙ্গে হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বিশিষ্ট খলিফা ডাক্তার আব্দুল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, দ্বীন ও দুনিয়ার মধ্যে মূলত পার্থক্য হল দৃষ্টিভঙ্গির। তুমি যদি তোমার দৃষ্টি ভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে পারো তাহলে দুনিয়াই তোমার জন্যই দ্বীন হয়ে যাবে।
হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন উপরোক্ত হাদীসের নমুনা। সকল কাজের শুরুতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ত কে বিশুদ্ধ করে নিতেন। তিনি খানা খেতে বসেছেন খাবার তার সামনে উপস্থিত।

তিনি খানা সামনে রেখে নিয়ত করতেন আমি শুধু আমার মন এবং রিপুর আবেদনে খানা খাচ্ছি না, বরং আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনে, শরীরের হক আদায় এবং এবাদত করার জন্য শক্তি লাভ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খাচ্ছি। অনেক সময় দেখা গেছে খুলুক ও বদনা হাতে নিয়ে ইস্তেঞ্জা করার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিয়ত করছেন আমি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন শরীরের হক আদায় এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বাথরুমে যাচ্ছি। মোটকথা প্রার্থী এবং পরকালীন সকল কাজের শুরুতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ত বিশুদ্ধ করে নিতেন। আর এ ব্যাপারে তার রাহবার ছিল মুফতী ফয়জুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর লিখিত কিতাব "নিয়তের তরিকা"।

দাওয়াত ও তাবলীগ: দ্বীনের প্রচার প্রসারের কাজ এ উম্মতের উপর ফরজ। তিনি কর্মজীবনের শুরু থেকেই দ্বীনের প্রচার প্রসারে ব্যাপৃত ছিলেন।

বিশেষ করে এ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি চিল্লা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ ("হে নবী আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে ভীতি প্রদর্শন করুন") পালনার্থে ইন্তেকালের চার বছর পূর্বে বার্ধক্যের কারণে তার প্রতিষ্ঠিত সুতারপুর মাদ্রাসায় অবস্থানকালে মাঝেমধ্যে স্বীয় গ্রামবাসীকে ডেকে তাদের নামাজ এবং দ্বীনের উপর চলার জন্য দাওয়াত দিতেন, পরকালের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করতেন।

মাঝে মধ্যে তার বাড়িতে আশেপাশের গ্রামের মহিলাদের সমাবেত করে তাদের সামনে দ্বীনি আলোচনা করতেন ‌ এবং তার পরিবারের মহিলাদের মাধ্যমে তাদের কালিমা, সূরা, ক্বেরাআত, তাশাহুদ, অজু, নামাজ ইত্যাদি সংশোধন করতেন। নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তী মহল্লায় যে সকল মানুষ নিয়মিত নামাজ পড়তো না তিনি মাঝেমধ্যে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে নামাজের দাওয়াত এবং দ্বীনের উপর চলার জন্য দাওয়াত দিতেন।

বৈবাহিক জীবন: তিনি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানাধীন দিন্নগর গ্রাম নিবাসী জনাব হাজী আব্বাস আলী সাহেবের দ্বিতীয় কন্যার সাথে ১৩৫২ বাংলা সনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর শ্বশুর জনাব হাজী আব্বাস আলী সাহেব ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার এবং সুপরিচিত ব্যক্তি।

সন্তানাদি: তার তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ হযরতের প্রতিষ্ঠিত সুতারপুর মাদ্রাসার মুহতামিম। দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইউনুছ, নাজেমে তালিমাত, তৃতীয় ছেলে মুফতী ইলিয়াছ, ঢাকার এক মাদ্রাসার মুহাদ্দিস এবং মসজিদের ইমাম। তার বড় জামাতা অবসর। তার ছোট জামাতা সুতারপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার খেদমতে নিয়োজিত।

হযরতের আশা ছিল তার বংশের সকল সন্তানেরা যেন ক্বওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আলেম হতে পারে। আল্লাহ তাআলা তার আশা কবুল করেছেন। হযরত এর তিন ছেলে আলেম এবং তার পুত্র এবং দৌহিত্রদের মধ্যে হতে অনেকেই ক্বওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা সমাপ্ত করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন, বাকিরা ক্বওমি মাদ্রাসায় বিভিন্ন ক্লাসে অধ্যায়নরত।

শেষ কথা: হযরত মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় ওসিয়াত করেন যে অসুস্থতার কারণে যদি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে নামাজের ফেদিয়া প্রদান করার পূর্বে যেন তাকে দাফন করা না হয়, এবং তার লাশ যেন গাইরে মাহরাম মহিলারা না দেখে।

ইন্তেকাল: হযরত সুতারপুরী হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি জীবন সায়াহ্নে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে একটি হলো প্রশ্রাবের রাস্তায় গুস্তবৃদ্ধি, যার কারনে পেশাব করতে কষ্ট হতো। এ রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করছিলেন।

কিন্তু সুস্থতা লাভ হচ্ছিল না। ২০ শাবান ১৪২৭ হিজরী রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন। ২১ শাবান অপারেশনের জন্য মোমেনশাহী শহরে এক ক্লিনিকে ভর্তি হন। ২৫ শাবান ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে হাসপাতাল ত্যাগ করে মাদ্রাসায় প্রত্যাবর্তন করেন।

মাদ্রাসায় ফিরে আসার পর তার শরীর আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। এদিকে রমজান শুরু হয়ে যায়, অত্যাধিক দুর্বলতার কারণে রমজানের রোজা রাখা এবং তারাবির নামাজ পড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। রমজানের কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যায়।

তিনি স্বীয় বিছানায় শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতেন। এরপর আস্তে আস্তে তাঁর বাকশক্তি লোপ পেতে থাকে। অবশেষে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

দুইদিন অচেতন অবস্থায় থাকার পর ১৪ রমজান ১৪২৭ হিজরী ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ইং রবিবার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তার প্রতিষ্ঠিত সুতারপুর মাদ্রাসার স্বীয় কক্ষে ৮৬ বছর বয়সে ভোর পাঁচটা ৫০ মিনিট সূর্য যখন তার আলোক বর্তিকা নিয়ে দুনিয়ার বুকে আগমন করছিল তখন দ্বীনের এ সূর্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে চিরদিনের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

হযরতের কাফন দাফন: হযরতের অসিয়ত ছিল হাফেজ আলম ব্যতীত কেউ যেন কাফন দাফনের কাজে অংশগ্রহণ না করে। হযরতের ওসিয়াত মোতাবেক তার দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইউনুছসহ তার নাতিরা গোসল ও কাফনের কাজ সম্পাদন করে তার লাশ ও সুতারপুর মাদ্রাসায় স্বীয় কক্ষে রাখেন।

হযরত এর মৃত্যুর খবর শুনে চতুর্দিক থেকে দলে দলে লোক তাদের প্রাণপ্রিয় মুরুব্বীকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে এবং জানাযায় অংশ নিতে মাদ্রাসায় সমবেত হন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ৩:০০ টায় হযরতের বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ সাহেব এর ইমামতিতে সুতারপুর মাদ্রাসার মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার পর তাঁর বাড়ির সম্মুখস্ত পুকুরের পূর্বপাড়ে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে অন্তিম স্বয়নে শায়িত করা হয়।

হে আল্লাহ! তার কবরকে আপনি জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন এবং আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তৌফিক দিন। আমিন!

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ