আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।।
আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে আামদেরকে এমন একটি ভূখন্ড দান করেছেন,যেখানে ঋতুর সংখ্যা ছয়টি। তবে পব্রিত কুরআনে দুটি ঋতুর কথা উল্লেখ রয়েছে। সূরা কুরাইশে গ্রীষ্ম এবং শীতকালের কথা বলা হয়েছে। সিরিয়া ছিল ঠান্ডা ও সবুজ দেশ তাই কুরাইশগণ গ্রীষ্মকালে রিরিয়া সফর করত।
পক্ষান্তরে ইয়ামেন গনম দেশ ছিল বিধায় তারা শীতকালে সেখানে বানিজ্যিক সফর করত এবং মুনফা অর্জন করত। অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকাল অধিক প্রিয়। মুমিনের জন্য এটা ঋতুরাজ বসন্ত।
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল। (মুসনাদে আহমাদ) শীতকালে ইবাদরেত বিশেষ সুবিধা থাকে। যেমন শীতকালে দিন ছোট হয় এবং সুর্যের প্রখরতা কম থাকে ফলে পানির পিপাসা লাগে না। তাই সহজেই শীতকালে রোযা রাখা যায়। অপরদিকে রাত হয় দীর্ঘ। একজন মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের পরেও শীতকালে রাতের আরো কিছু অংশ বাকী থাকে। ফলে অতি সহজেই রাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে তথা শেষ রাতে তাহাজ্জতের নামায, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার,দোয়া-দরূদ ইত্যাদি আদায় করা যায়। শরীর ঘামে না, ক্লান্তি আসে না। শরীর ও মন থাকে সতেজ।
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ ফরমান,শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমির ব্যক্তি রাত্রিকালীন নফল নামায আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় মুমিন ব্যক্তি রোযা রাখতে পারে (বায়হাকী) হযরত আমের ইবনে মসউদ (রাঃ) হলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শীতল গণিমত হচ্ছে, শীতকালে রোযা রাখা। (তিরমিযি)
সুতরাং কারো যদি কাযা রোযা বাকি থাকে তার উচিত এখনই তা আদায় করে নেওয়া। এছাড়া বেশি বেশি নফল রোযা রাখার এটি সুবর্ণ সুযোগ বটে। হাদীসে শীতকালের রোযাকে ‘শীতল গণিমত’ বা গণিমতে বারেদাহ বলা হয়েছে। কারন,কষ্ট ছাড়াই সাওয়াব হাসিল করা যায়। হযতর আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য একদিন রোযা রাখবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে দোযখ থেকে এত দূরে রাখবেন,যেমন একটি কাক ভূমিষ্ঠ থেকে অতি বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত যতদূর উড়তে পারে, ততদূরে অর্থাৎ বহু বহুদূরে। (মুসনাদে আহমদ) অন্য হাদীসে আছে,রোযাদারদের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য,তার নীরব থাকা তাসবীহ পড়ার সমতুল্য,অর্থাৎ রোযাদার যদি চুপ থাকে তাতেও সুবহানল্লাহ পড়ার সমান সাওয়াব হবে।
রোযা অবস্থায় সামান্য ইবাদত করার সাওয়াব অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তার দুআ কবুল করা হয় এব গোনাহ মাফ করা হয়। (বায়হাকী) শীতকালে কিয়ামুল লাইল তথা সালাতুত তাহাজ্জদ ও রোযা রাখার পাশাপাশি সাধ্যমত শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাকে শীত নিবরনের জন্য মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন, তার শুকরিয়া আদায় করা।
সাথে সাথে ইয়অতীম,মিসকীন,অসহায়,বিধাব প্রভৃতি দুস্থ-ছিন্নমূল মানুষদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী শীতবস্ত্র দান করা। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে একটি কাপড় দান করবে সে আল্লাহ তায়ালার হিফাযতে থাকবে ,যে পর্যন্ত কাপড়ের একটি টুকরাও তার গায়ে থাকবে। (মিশকাত) অন্যত্র আছে, যে মুসলমান অন্য বিবস্ত্র মুসলমানকে কাপড় পরাবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতের সবুজ (কাপড়) জোড়া পরাবেন। (তিরমিযী)
মানবিক এবং ধর্মীয় উভয়দিক লক্ষ্য করেই সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। সাহায্য-সহযোগিতা না করতে পারলে, তাদের কষ্টে দুঃখী হওয়া,সান্তনা দেওয়ার মধ্যেও রয়েছে সাওয়াবের ভান্ডার। নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইবে কোনো মসিবত বা বিপদে সান্তনা দিবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন সন্মান ও মর্যাদার জোড়া (কাপড়) পরাবেন। (ইবনে মাজাহ) শীতকালের আরেকটি স্বরণীয় হলো,অযু ও গোসলের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। শীতকালে মানুষের শরীর শুষ্ক থাকে এবং শীতের তীব্রতায় তাড়াহুড়া করা হয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ শুষ্ক থাকে। অথচ যথাযথভাবে ধৌত না করলে অযু-গোসল আদায় হয় না।
আর অযু-গোসল ঠিকমতো আদায় না হলে নামায শুদ্ধ হবে না। তাই এবিষয়ে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। মহানবী (সাঃ) বলেন,আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু আমল সম্পর্কে বলব,যে গুলোর বরকতে আল্লাহ তায়ালা গোনাহসমূহ মছে দেন এবং মর্যাদা উন্নীত করেন,উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম বললেন,অবশ্যই বলুন।
তখন নবীজি সা. বললেন, কষ্ট ক্লেশ হওয়া সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অযু করা,মসজিদের দিকে বেশি বেশি কদম পড়া,এবং এক ওয়াক্ত নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই হলো মূলত দীনের প্রহরা। (মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে যে ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার গোনাহসমূহ তার শরীর থেকে একেবারে সরে যায়, এমনকি নখের নিচে থেকেও বের হয়ে যায়। (বুখারী)
-এটি