||জাওয়াদ আহমাদ||
মানুষ যেখানে থাকবে প্রয়োজন পূরণের সার্বিক ব্যবস্থাপনাও স্বাভাবিকভাবেই সেখানে গড়ে উঠবে। এমনটাই খোদাপ্রদত্ত প্রকৃতির নেজাম। বিশ্ব ইজতেমা ২০২৩ উপলক্ষ্যে টঙ্গীর ময়দানে সমাবেত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাথে সারা দেশ থেকে ছোট-বড় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশে ইজতেমা প্রাঙ্গনে এসেছেন।
ইজতেমা মাঠের বাইরে চতুর্দিকেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান-পাট। মুসুল্লিরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করছে দোকানগুলো থেকে। সাধারণত আতর তসবিহ টুপি জায়নামাজ পাঞ্জাবি বোরকা হিজাব ও খাদ্যদ্রব্যের দোকান বেশি। তবে এছাড়াও বই-পুস্তক, জুতা-স্যান্ডেল,শাড়ি, থ্রীপিচসহ বাহারি আইটেমের দোকান বসেছে টঙ্গী এলাকা জুড়ে।
এমনিতেই টঙ্গী-গাজিপুর শিল্প এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। তবে ইজতেমা কেন্দ্রিক স্থানীয় ও বহিরাগতদের বিভিন্ন ব্যবসা এই শহরকে দেশের বৃহৎ বাণিজ্যিক এরিয়া হিসেবে জানান দিচ্ছে।
ব্যবসার বাহ্যিক অবস্থা রমরমা দেখা গেলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ীদের হতাশা ও ভারাক্রান্ত অবস্থা। মূলত ব্যবসার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার ভাড়া ও মালপত্র ক্যারি করার খরচই হতাশার মূল কারণ।
অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত দোকান সমূহের মধ্য হতে একজন ব্যবসায়ী আবুল কাসেম। তিনি ওয়াহেদ বেডিং হাউজের মালিক। প্রায় ২০ বছর ধরে ইজতেমা কেন্দ্রিক বাণিজ্য করছে আবুল কাসেম। এবছর মোট তিনটা দোকানে তার লোক খাটছে ১৮ জন। ব্যবসা বাণিজ্য কেমন হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ব্যবসা প্রথমদিন একটু কম তবে আমাদের প্রফিট খুব একটা থাকে না। একটা দোকানের জন্য ৭০ হাজার ভাড়া গুনতে হবে। তারপর কর্মচারীর বিল, মাল ট্রান্সপোর্টের খরচ এগুলো দিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন সরকারিভাবে এই বিষয়গুলো তদারকি করলে ব্যবসায়ীদের জন্য একটু উপকার হত। যায়গার মালিকরা খুব বেশি ভাড়া নেয়। এতটাকা ভাড়া দেওয়ার পরও এই মার্কেটে নাই কোন বাথরুমের ব্যবস্থা! দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তরুণ উদ্যদোক্তাদের জন্য কিছু বলতে বললে তিনি বলেন, সৎভাবে ব্যবসা করলে সফল হওয়া সম্ভব। তবে ভাড়া ও ট্রান্সপোর্ট খরচ ম্যানেজের সাহস রেখে মাঠে নামতে হবে।
একই ধরনের কথা বলেন অলিম্পিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী লালবাগের আব্দুল্লাহ। তবে তার আক্ষেপের মাত্রা ছিল আরো বেশি! আব্দুল্লাহ বলেন যা লাভ হয় টঙ্গীওয়ালাদেরকেই সব দিয়ে যেতে হয়।
তবে একেবারেই ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতার কথা বলছেন ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। চট্রগ্রাম থেকে আসা ইসমাইল হোসেন কাজ করছেন টুপি নিয়ে। শুধু টুপি। একটি টুপির দাম মাত্র বিশ টাকা। এক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে পুলিশ উঠিয়ে দিলেও তাকে গুণতে হয় না এক্সট্রা কোন ভাড়া। আজ সারাদিনে সে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকার টুপি বিক্রি করেছে৷ আগামী দুদিনে মিনিমাম দেড় লাখ টাকার টুপি বিক্রি করতে পারবে বলে সে আশাবাদী। ভ্রাম্যমাণ আরো কয়েকজন ব্যবসায়িও এরকম সন্তুষ্টজনক কথা বলে।
বিক্রেতার অবস্থা যেমনই হোক ক্রেতাদের থেকে মিলছে নানা ধরণে অভিব্যক্তি। সাধারণত শীতের কাপড়গুলো ফুটপাত থেকে কম মূল্যে পাচ্ছেন তারা। তবে কিছু জিনিসের দাম নিজ এলাকার থেকেও বেশি বলে জানান কেউ কেউ। তবে আজকে কেনাকাটা কম করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। আজ তারা পুরো মার্কেটগুলো ঘুরে দেখছে৷ আগামীকাল বা শেষদিন সব কিনবে বলে জানান তারা।
যেখানে সমস্যা থাকে সেখানেই সমাধানের নতুন পথ সৃষ্টি হয়। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে আগত ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে ক্রিাশীল হওয়া দরকার। যেহেতু বাণিজ্যিক বড়সড় ব্যাপার রয়েছে এখানে সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কর্তৃক বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সমাধান কাম্য। তাছাড়া সরকারি হস্তক্ষেপে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধির একটি ক্ষেত্র হতে পারে বিশ্ব ইজতেমা।
কেএল/