||জাওয়াদ আহমাদ||
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৩ উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মুসুল্লি একত্রিত হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ তীরে৷ আগত মুসুল্লিদের মধ্যে আছে নাবালেগ শিশু তাগড়া যুবক ও বয়োবৃদ্ধ ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
ইজতেমার ময়দানে সাময়িক সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে মাঠের উত্তর পশ্চিম সাইডের রাস্তার পাশে একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ ও চিকিৎসা সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যম্পেইন। যা সম্প্রীতি ও ভাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। কামারপাড়া লোহার ব্রিজ থেকে দশ মিনিট হাঁটলেই হাতের বাঁ দিকে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিল উচ্চ বিদ্যালয় এরিয়া জুড়ে অবস্থিত এই ফ্রি মেডিকেল ক্যম্প।
এখানে অংশ নিয়েছে গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন,বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম,হামদর্দ, সিকেডি এন্ড ইউরোলজি হাসপাতাল, আল মারকাজুল ইসলামি, হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি, ইবনে সিনা, আল কমর ব্লাডব্যংকসহ প্রসিদ্ধ অপ্রসিদ্ধ মোট ২৭ টি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংগঠন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সারাদিনই বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মুসুল্লিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জ্বর, সর্দি, মাথাব্যাথা, পেটব্যাথা, ডাইরিয়া, গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিক পরীক্ষা, পেসার মাপা, ফ্রী ব্ল্যাড গ্রুপিং সহ নানাধরণের রোগের প্রাথমিক সেবা ও পরামর্শ মিলছে এই মেডিক্যাল ক্যাম্প থেকে।
তাছাড়া ইমারজেন্সী রোগীর তাৎক্ষণিক ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসার স্বার্থে রাখা হয়েছে ৭-৮ টি ফ্রী আ্যম্বুলেন্স।
ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি সেবা কেন্দ্রের সাথে কথা বলি আমরা। হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ রাজের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনদিনের জন্য পাঁচজন এমবিবিএস ডাক্তার নিয়ে তারা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। সারাদিন তাদের থেকে সেবা নিয়েছে ইজতেমায় আগত প্রায় এক হাজার মুসুল্লি। প্রত্যেককেই ফ্রি ট্রিটমেন্ট ও ফ্রি ওষুধ প্রদান করা হয়েছে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দ্বায়িত্বরত ডা. অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, ৫ জন এমবিবিএস ডাক্তার ও তিনজন প্যারামেডিস নিয়ে সারাদিনে প্রায় ৬০০ মুসুল্লিকে সেবা দিয়েছেন তারা। ফ্রি ওষুধ হিসেবে আছে যেমন ১ টাকার নাপা ওষুধ তেমনই আছে ৯০-১০০ টাকা দামের দামী ওষুধও।
চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় খুবই ভালো সেবা পাচ্ছেন এই ক্যাম্পেইন থেকে। কুড়িগ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ জায়েদ নূর হাঁটুর ব্যাথার জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন এখান থেকে৷ ডাক্তারদের আচরণ ও পরামর্শ খুবই আন্তরিক ছিল বলে জানান তিনি। একই কথা বলেন নারায়ণগঞ্জের আমির হামজা। এছাড়াও আরো অনেকের সাথে কথা বলে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানা যায়। আগত মুসুল্লিরা এমন আয়েজনের জন্য প্রশংসা ও দোআ করেন।
রোগ-বালা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনিই রোগমুক্তি ও সুস্থতা দান করেন। এটা সকল ঈমানদারের আত্মিক বিশ্বাস। একজন মুমিন রোগমুক্তির ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা রাখে। এতদাসত্বেও ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সাময়িক কষ্ট নিরসনের জন্য ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরী করা ভালোবাসা ও সম্প্রীতির মহান উদ্যোগ বলেই বিবেচিত হবে।
এই ইজতেমা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে সাম্য ও শান্তির বিশেষ অবস্থা তৈরি হয়। সবাই যার যার স্থান থেকে ত্যাগ ও সাহায্যের মানসিকতা লালন করে। বিশ্ব ইজতেমার এটাও একটি প্রাপ্তি বললে ভুল হবে না।
ইজতেমা কেন্দ্রিক সকল সেবা কার্যক্রমের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের মহান আল্লাহ পরিপূর্ণ প্রতিদান দান করুন। আমিন।
কেএল/