জাওয়াদ আহমাদ
ইজতেমা ময়দান থেকে
দীর্ঘ দুই বছর পর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ জমায়েত ঐতিহাসিক বিশ্ব ইজতেমা। মহান আল্লাহ তায়ালার মহান বাণী 'তোমরা সৎ কাজে আদেশ কর ও অসৎ কাজে বাঁধা প্রদান কর' (সূরা আলে ইমরান) ও প্রিয় নবীর পবিত্র হাদিস ' আমার পক্ষ হতে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও' এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা তাবলীগ জামাতের এই ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
বাংলাদেশে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। তবে টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদের উত্তর-পূর্ব তীরসংলগ্ন মাঠে বিশ্ব ইজতেমার এই ধারাবাহিকতা শুরু হয় ১৯৭২ সালে।
ইজতেমার মূল অনুষ্ঠান শুক্রবার ফজর পর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মুসুল্লিরা মঙ্গলবার হতেই ইজতেমার মাঠে জমায়েত হতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর টঙ্গীর ময়দান আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে মুখরিত হতে থাকে।
স্বেচ্ছায় নিজ খরচে ছোট-বড় দলে যুক্ত হয়ে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে দ্বীন অনুরাগী মুসলমানরা এখানে সমাবেত হন মহান রবের সন্তুষ্টির আশায়। এখানে থাকেনা পার্থিব কোন উদ্দেশ্য কিংবা কোন ব্যক্তি বা দলের মনোরঞ্জনের আশা।
ইজতেমার মাঠের মিম্বার থেকে মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতের বয়ান হয়। কীভাবে অধিক নেক আমলের মাধ্যমে আখেরাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যায় এবং ছোটো বড়ো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করেন বিজ্ঞ আলিম মুরুব্বিগণ। পাশাপাশি হয় কিছু আমলের অনুশীলন ও দাওয়াতি কাজের প্রশিক্ষণ।
তিনদিন বিছানা কাঁথা নিয়ে থাকার জন্য আগত মুসুল্লি ছাড়াও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জুমআর জামাতে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে থেকে মুসুল্লিরা শুক্রবার সকাল থেকেই আসতে শুরু করে। তাছাড়া প্রায় ১০০ টি দেশ থেকে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন ধর্মপ্রাণ বিদেশি মুসুল্লিগণ।
চলতি বছর ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৩ তারিখ শুক্রবার সকালে শুরু হয়ে ১৫ তারিখ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে৷ এ সময়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ আলিমগণ আত্মসংশোধন মূলক নসিহতমূলক বয়ান পেশ করবেন।
বিশ্ব ইজতেমায় কী রয়েছে বা এখানে মানুষ কেন সমাবেত হয় এমন প্রশ্ন করলে তাত্বিক কোন উত্তর মিলবেনা হয়ত! তবে পরষ্পর সহযোগিতা ও সহমর্মিতার যে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরী হয় এই মাঠ থেকে, সাধারণ মানুষ নিজের ইমান আমল হেফাজত ও পাপ পঙ্কিলতামুক্ত জীবন গড়ার যে অনুপ্রেরণা লাভ করে এখান থেকে তা কলমের কালি দিয়ে লিখে ব্যক্ত করা সম্ভব না।
সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যে ভরপুর ইজতেমার এই গণ জমায়েত থেকে মানুষ শান্তি ও শৃঙ্খলার দীক্ষা গ্রহণ করে। সঠিক আমলের দিশা খুঁজে পায়। পায় সৎ পথে চলার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা।
পরিশেষে বিশ্ব ইজতেমায় আগত সকল মুসুল্লিকে মহান আল্লাহ কবুল করুন। ইজতেমা থেকে প্রাপ্ত দীক্ষার আলোয় আমাদের পরিবার সমাজ ও দেশ আলোকিত হোক।
-এসআর