হুসাইন আহমাদ খান।। মক্কায় ইসলামের আবির্ভাবের প্রথমভাগেই যারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের অন্যতম হলেন হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা.।তিনি ষষ্টতম ইসলামগ্রহণকারী হিসেবে কথিত।
বয়সে তিনি তখনও পর্যন্ত কিশোর।তার জন্ম আনুমানিক ৫৯৪ খৃষ্টাব্দে। সবাই তাকে ইবনে উম্মে আবদ বলে ডাকতো। মক্কা নগরী থেকে দূরে উকবা বিন আবু মুয়িতের ছাগল চড়াতেন তিনি।
একদিনের ঘটনা। বালক আবদুল্লাহ মরুভূমিতে ছাগল চড়াচ্ছিল। দূর থেকে দু’জন ব্যক্তিকে তার দিকে আসতে দেখলো। তারা ছিলো ক্লান্ত-শ্রান্ত।পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। তারা তার কাছে এসে বললো, ‘হে বালক! তোমার বকরিগুলো থেকে সামান্য দুধ দোহন করে আমাদেরকে পান করাও। আমরা খুবই পিপাসার্ত।’ কিন্তু বালক আবদুল্লাহ তা করতে অস্বীকৃতি জানালো।
সে বললো, ‘এই বকরিগুলো আমার নয়।মালিকের অনুমতি ব্যতিত আমি তা করতে পারি না।’এ কথা শুনে আগন্তুকদ্বয় অসন্তুষ্ট হলেন বলে মনে হলো না। বরং তার সততা ও আমানতদারিতা দেখে খুশিই হলেন।এরপর তাদের একজন বললেন, ‘তাহলে আমাকে এমন একটি ছাগল দেখিয়ে দাও যেটা এখনো দুধ দেয়নি।’
সে একটি ছোট ছাগল দেখিয়ে দিলো, যার স্তনের বোঁটাও ফোটেনি। লোকটি বিসমিল্লাহ বলে ছাগলের স্তনে হাত বুলাতে লাগলেন। এটা দেখে বালক আবদুল্লাহ বেশ আশ্চর্য হলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন ছাগলটির স্তন ফুলে উঠলো এবং তীব্র বেগে দুধ দিতে লাগলো তখন তার বিস্ময়ের আর সীমা রইলো না! লোকটি দুধ দোহন করে উভয়ে পান করলো এবং তাকেও পান করালো। দুধ দোহনকারী এই ব্যক্তি ছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তার সাথে ছিলেন হযরত আবু বকর রা.।
এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা. ইসলামগ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি রাখালী ছেড়ে নবিজীর খাদেম হিসেবে জীবনযাপন শুরু করেন। তার পর থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্য পর্যন্ত তিনি তার সেবায় নিয়োজিত থাকেন।
হযরে-সফরে সবসময় তিনি তার সাথে থাকতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাদর, বালিশ, মিসওয়াক ও জুতা মোবারক সংরক্ষণ করা ছিলো তার দায়িত্ব।এজন্য তার লকব হয়ে যায় ‘সাহিবুল ভিসাদাতি ওয়ান না’লাইন’। এছাড়াও তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের একান্ত সহচর। রাসূলের সকল বিষয় জানার অনুমতি ছিলো তার। এজন্য তাকে সাহিবু সিররির রাসূল (রাসূলের গোপন বিষয়ের অধিকারী)ও বলা হতো।
তিনি বদর, ওহুদ, খন্দকসহ প্রায় সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জাহেলের মাথা কেটেছিলেন তিনিই।
তাঁর সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কুরআন যেভাবে সিক্ত সতেজ নাযিল হয়েছে, যে সেইভাবে পড়তে চায় সে যেন ইবনে উম্মে আবদ(আবদুল্লাহ বিন মাসউদ)এর মতো করে পড়ে।‘
ইবনে মাসউদ রা. নবী-গৃহে বেড়ে উঠেন, নবিজীকে মনেপ্রাণে অনুসরণ-অনুকরণ করতেন এবং তাঁরই মতো আচার-আচরণ ও চারিত্রিক-বৈশিষ্টের অধিকারী হন- এজন্য তার সম্পর্কে বলা হয়, হেদায়াতপ্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্টের দিক থেকে তিনিই হলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।
তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট ক্বারি, মুহাদ্দিস ও ফকিহ।আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৮৪৮টি। ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে্ও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।
হিজরি ২০ সনে খলিফা উমর রা. তাকে কুফার কাজি (বিচারপতি) হিসেবে নিয়োগ দেন।এছাড়াও বাইতুল মাল, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগ এবং কুফার গভর্নরের উযিরের দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত হয়।
৩২ হিজরির ৮ রমজান তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। হযরত উসমান রা. তার জানাজা নামাজের ইমামতি করেন।জান্নাতুল বাকিতে তাকে সমাহিত করা হয়।
-এটি