আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মাদকের ছোবল থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলব।
তিনি বলেন, 'আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, স্বপ্ন দেখছি তাদেরকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদক যে ভয়ঙ্কর, এটা যে একটা সমাজকে, পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় এটা মানুষকে বুঝাতে হবে। শুধু সরকার কঠোর হলেই মাদক বন্ধ হবে না। মানুষকে বুঝিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যেমন করে আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। মাদকের হাত থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলব।’
আজ সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নতুন ভুল্লি থানা উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সাথে সমাজের সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের কাঙ্খিত উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।’
এর আগে মন্ত্রী ভুল্লি থানার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ ও স্থানীয় ভুল্লি থানা বাস্তবায়ন কমিটি পৃথকভাবে উদ্বোধন ও সমাবেশের আয়োজন করে। ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যেদিন রাজারবাগ পুলিশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশগ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের কথা ঘন্টার পর ঘন্টা বললেও শেষ হবে না। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি সেখানে পুলিশ বাহিনীর দুই একজন সাথে থাকতেন। থানা থেকেই আমরা অস্ত্র পেয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময়। কাজেই পুলিশের বাহিনীর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস রয়ে গেছে। ৭৫ সালে রাজারবাগে ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘তোমরা জনগনের পুলিশ, তোমরা মানবতার পুলিশ। তোমাদেরকে নিয়ে যেন গর্ব করতে পারি। আজ কিন্তু আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটাতে আসছে।’
পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আজ থেকে বারো বছর আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন নেতৃত্বে। তিনি জনগনের পুলিশ হওয়ার জন্যই এই পুলিশকে তৈরি করেছেন। আজকে জনগনের যে কোন প্রয়োজনে পুলিশ সর্বাগ্রে এগিয়ে আসছে। জঙ্গী দমন বলেন, বন দস্যু বলেন, সন্ত্রাস দমন বলেন, সব জায়গায়ই পুলিশ আজকে তাদের দক্ষতার সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা কিছু করেন ৫০ বছর পরের চিন্তা করেই করেন। ৫০ বছর পরে বাংলাদেশের কি দরকার হবে ।। কোথায় যাবে বাংলাদেশ। এই চিন্তা থেকেই পুলিশের জনবল, সক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণসহ অবকাঠোমো সকল কিছুর উন্নয়ন করছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ শুধু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন না। মানবিক কাজও করছেন। তারা কোভিডের সময় এর সাক্ষর রেখেছে। যখন সন্তান তার মাকে হাসপাতালে ফেলে এসেছেন। লাশের কাছে যাননি। পুলিশই তখন প্রথম এগিয়ে এসে দাফন কাফন করেছে। কোভিডের সময় পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করে মানবতার সেবার দাঁড়িয়েছে। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা কোভিড মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। যখন সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু পথ হারায়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পথ হারাইনি বলে এই মহামারি আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি। ফলে কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।’
অনুষ্ঠানে বরেণ্য অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঠাকুরগাঁও -১ আসনের সংসদ রমেশ চন্দ্র সেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহা. সাদেক কুরাইশি, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, ঠাকুরগাঁও সদর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো ও সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভুল্লি থানা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক আশরাফুল হক চৌধুরি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভুল্লি থানা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ জুলফিকার আলী।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাম আহমেদ চৌধুরি রিংকু, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল মজিদ আপেল, সাধারণ সম্পাদক বোশিষ দত্ত সমীর, বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টো।
এর আগে জেলা পুলিশ বিভাগের আয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল্লি থানা প্রাঙ্গণে ফলক উন্মোচন করে নবনির্মিত থানা ভবনের উদ্বোধন করেন। এসময় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, ডিইআইজি আব্দুল আলীম, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেএল/