আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে মেট্রোতে যাত্রী পরিবহন। দেশের গণপরিবহনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আজ সকাল ৮টায় সাধারণ যাত্রী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে মেট্রোরেল। এই মেট্রোতে ২০০ যাত্রী পরিবহন করা হবে।
বিরতিহীন মেট্রো আগারগাঁও পৌঁছাবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে। সেখানে ১০ মিনিট বিরতির পর ফের ২০০ যাত্রী নিয়ে ফিরবে উত্তরা উত্তর স্টেশনে। এভাবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই প্রান্ত থেকে প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটি করে ট্রেন ছাড়বে। আপাতত কোনো ট্রেনে ২০০ যাত্রীর বেশি পরিবহন করা হবে না। যদিও প্রতিটি মেট্রো রেলে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ যাত্রীর ধারণক্ষমতা রয়েছে।
মেট্রোরেল পরিচালনায় রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। গতকাল বুধবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন যাত্রী পরিবহনের জন্য কী ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে যাত্রীসংখ্যা নির্দিষ্ট করাসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত এক ট্রেনে ২০০ যাত্রীর বেশি পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। যাত্রীর চাপ থাকলেও আপাতত চার ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালানো হবে না। বর্তমানে ২০টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে। তবে প্রথম দিন কোন কোন ট্রেন কতবার কিংবা কতগুলো ট্রেন চলবে, সেটি চূড়ান্ত করা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি ১০ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় (কনকোর্স লেভেল) মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের দিকনির্দেশনা বুঝিয়ে দিতে অবস্থান করবে। টিকিট কিনতে প্রথম দিন থেকে দুটি টিকিট কাউন্টার উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া দোতলার দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি স্বয়ংক্রিয় টিকিট বুথও উন্মুক্ত থাকবে। বুথ থেকে যাত্রী নিজে টিকিট নিতে পারবে।
ডিএমটিসিএলের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, 'প্রথম দিকে যাত্রীদের মেট্রোতে চলাচলে অভ্যস্ত করার বিষয় রয়েছে। আমরা ধারণা করছি, যাত্রীরা দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এর পরই প্রকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করা হবে। মেট্রোর সব কিছু আমাদের জন্য নতুন। শুরুতে মেট্রোর প্রতিটি ধাপের সঙ্গে যাত্রীদের অভ্যস্ত করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।'
মেট্রোর ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোতে অর্ধেক ভাড়ার ব্যবস্থা থাকছে না। তবে তিন ফুট পর্যন্ত উচ্চতার শিশুরা অভিভাবকের সঙ্গে থাকলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবে। প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আপাতত উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) এবং উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আপাতত মাঝখানের কোনো স্টেশনে ট্রেন থামবে না।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনেই ট্রেন থামবে।
মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে দুই ধরনের টিকিট ব্যবহার করা যাবে। একটি 'সিঙ্গল জার্নি টিকিট' অন্যটি 'র্যাপিড পাস'। যারা র্যাপিড পাস (সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক) ব্যবহার করবে তারা ১০ শতাংশ ছাড় পাবে। মেট্রো স্টেশনে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে র্যাপিড পাস নিবন্ধন করতে হবে। কার্ডের জন্য চার্জ করা হবে ৩০০ টাকা। কোনো যাত্রী কখনো কার্ড ফেরত দিলে ৩০০ টাকা ফেরত পাবে।`
-এসআর