আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে বেশ কিছু দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এ সময় নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। বিশ্বরাজনীতিতে যে দেশগুলোর ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন কয়েকটি দেশ নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।
১. কাতার : পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার। এটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত কাতার উপদ্বীপে অবস্থিত। দেশটির বেশির ভাগ লোক রাজধানী দোহায় বসবাস করে। মোট আয়তন ১১ হাজার ৫৮৬ বর্গ কিলোমিটার।
সিআইএর তথ্যমতে দেশটির মোট জনসংখ্যা ২৫ লাখ ৮১ হাজার ৮২ জন, যার মধ্যে ৬৫.২ শতাংশ মুসলিম। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ থাকায় এর অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। ১৯ শতকের শেষভাগ থেকে আল-থানি গোত্রের লোকেরা অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে। ১৮৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর শেখ জাসিম বিন মুহাম্মদ আল-থানি স্থানীয় গোত্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আধুনিক কাতার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অঞ্চলটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাতার পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে কাতার।
২. বাংলাদেশ : দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহ ভাগ অঞ্চলজুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। এর মোট আয়তন এক লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭০৮ জন, যার ৯১ শতাংশ মুসলিম। বখতিয়ার খলজির গৌড় অঞ্চল জয়ের পর এবং দিল্লি সালতানাত আমলে এই অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। একসময় শাহী বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে মনে করা হতো।
৩. আরব আমিরাত : সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। স্বাধীন সাতটি রাজ্য হলো আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্ম আল-কাইওয়াইন, ফুজাইরাহ ও রাস আল-খাইমাহ। আবু ধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী ও দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর। দেশটির মোট আয়তন ৮৩ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬১২ জন। যার মধ্যে ৭৬ শতাংশ মুসলিম। দেশটি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে প্রতি বছরের ২ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।
৪. গিনি-বিসাউ : গিনি-বিসাউ উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার একটি প্রজাতন্ত্র। এটি আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্র দেশগুলোর একটি। এর সীমানায় রয়েছে সমুদ্রে অবস্থিত প্রায় ৬০টি দ্বীপ। দেশটির আয়তন ৩৬ হাজার ১২৫ বর্গকিলোমিটার। সিআইএর তথ্য অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ২০ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৮। যার মধ্যে ৪৬.১ শতাংশ মুসলিম। ১৯৭৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দেশটি পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর পার্শ্ববর্তী দেশ গিনির নামের সঙ্গে পার্থক্য করতে রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বিসাউয়ের নাম যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। কৃষিনির্ভর দেশটির অধিকাংশ জনগণ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে।
৫. কোমোরোস : ভারত মহাসাগরে অবস্থিত চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কোমোরোস (ঈড়সড়ত্ড়ং)। মোজাম্বিক চ্যানেলের উত্তর প্রান্তে এর অবস্থান। দেশটির চারটি দ্বীপ হলো গ্র্যান্ড কোমোর, আনজুয়ান, মোহেলি ও মায়োত্তি। এর রাজধানীর নাম মোরোনি। কোমোরিয়ান (শিমার), আরবি ও ফরাসি কোমোরিয়ান ফেডারেশনের সরকারি ভাষা। সাধারণ জনগণের মধ্যে আরবি ভাষার চর্চাই বেশি। ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম। মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার ৬৩৭। যার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ মুসলিম। দেশটির মোট আয়তন এক হাজার ৮৬২ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে তা আফ্রিকার সবচেয়ে ছোট দেশ। ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই ফ্রান্সের শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে তা জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। দেশটির মায়োত্তি দ্বীপটি এখনো ফরাসি শাসনাধীন।
৬. ইরান : পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ ইরান। ইউরেশিয়ার কেন্দ্রে এবং হরমুজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি ভূকৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর তেহরান। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পৃথিবীর সপ্তদশ বৃহত্তম রাষ্ট্র। তা ছাড়া পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহরও এটি। দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ৮৩ লাখ এবং তা বিশ্বের ১৭তম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। এর মোট আয়তন ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়। বলা হয়ে থাকে, ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান পশ্চিমাবিশ্বের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে স্বাধীনসত্তায় বিকশিত। ইরান দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে।
-এসআর