আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সদ্য চালু হওয়া ‘ইসলামিক ব্যাংকস লিক্যুডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)’-এর আওতায় ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা দিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানত তুলে নেওয়ার চাপে তারল্য সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে।
গত সোমবার এ সুবিধা চালুর দুদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে শরিয়াহভিত্তিক সাত ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ‘আইবিএলএফ’ বিষয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওইদিন থেকেই কার্যকর ঘোষণা করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার পাঁচটি ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা ধার চেয়ে আবেদন করে এবং তাতে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এর থেকে ৭০০ কোটি টাকা নগদ নিয়েছে। বাকি টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সাত ব্যাংক মিলে আরও ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ধারের জন্য আবেদন করলে তাও মঞ্জুর করা হয়। বরাদ্দ অনুমোদনের পর ব্যাংকগুলো তাদের প্রয়োজন মতো ভাগে ভাগে টাকা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে বুধবার সন্ধ্যায়ও কয়েকটি ব্যাংক টাকা নিতে আসে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো ইসলামি সুকুক বন্ডের বিপরীতে ৪ হাজার কোটির আবেদন করে। পরে ব্যাংকগুলোকে ৭০০ কোটি টাকা নগদ ও বাকি টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। বুধবার ব্যাংকগুলো ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। তবে কত নগদ নিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারেননি তিনি।
জানা যায়, এতদিন শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রেপো, বিশেষ রেপো ও লিক্যুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটির (এলএসএফ) আওতায় প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো তারল্য সুবিধা নিতে পারত। ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা দেওয়ার বা ব্যাংকগুলোর তা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। সরকারের ‘ইসলামিক সুকুক বন্ড (বিজিআইএস)’ চালু হওয়ার পর শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে তারল্য সুবিধা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কাজ শুরু হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ‘আইবিএলএফ’ সুবিধা নিতে সপ্তাহের যেকোনো কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তারল্য সুবিধা চেয়ে আবেদন করতে পারবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো। এর মুনাফার হার হবে ব্যাংকগুলোর তিন মাসের জন্য ‘মুদারাবা মেয়াদি আমানতের’ বিপরীতে ঘোষিত মুনাফার সমান। তবে এ হার হবে সাময়িক। বছর শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঘোষিত চূড়ান্ত মুনাফা অনুযায়ী তারল্য সুবিধার মুনাফা সমন্বয় করা হবে। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মুনাফা কম বা বেশি হলে তাও মেনে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের (ইসলামিক উইন্ডো ও শাখাসহ) আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বা ঋণ দিয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
দেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে প্রচলিত (সুদ ব্যবস্থা) ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংক শাখা হিসেবে ৯টি ও ইসলামিক উইন্ডো পরিচালনা করছে ১৪টি ব্যাংক। এসব ব্যাংক শুধু ‘আইবিএলএফ’ সুবিধা নিতে পারবে।
-এসআর