আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মহান আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ ও সামষ্টিক আত্মনিবেদনের স্থান ‘মসজিদ’, ‘বায়তুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর ঘর’। পবিত্র কোরআনে আছে—‘নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহর। ’ (সুরা: জিন, আয়াত: ১৮)
মসজিদকে ভালোবাসা, মসজিদে বেশি সময় অবস্থান, মসজিদ পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, মসজিদের উন্নতি সাধন, মসজিদের আদব রক্ষা করা ইত্যাদি মসজিদের হক ও মসজিদ আবাদ রাখার শর্ত। বিশ্বের মসজিদসমূহ মানবসভ্যতার জীবন্ত স্মারক।
পৃথিবীর প্রথম মসজিদ পবিত্র কাবা শরিফ। পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রচীনতম মসজিদ—মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস। আলোচ্য মসজিদদ্বয়ের উল্লেখ পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরান ও সুরা বনি ইসরাঈলে আছে। পৃথিবীর সর্বত্র আছে দৃষ্টিনন্দন লাখ লাখ মসজিদ।
মসজিদের পূর্ণাঙ্গতার সঙ্গে তিনটি বিষয় পারস্পরিক সম্পৃক্ত। যেমন—জুল্লাহ বা নামাজঘর, সাহান বা চত্বর, রিত্তয়াক বা ছাউনিযুক্ত বারান্দা।
মসজিদ-স্থাপত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ ও নামাজঘরের মর্যাদাপূর্ণ স্থান মিহরাব। মসজিদের অগ্রভাগ এবং সাধারণ স্থাপনা থেকে পার্থক্য নির্দেশক হলো মিহরাব। মিহরাব তাওহিদ ও কিবলামুখিতার পরিচায়ক এবং মসজিদের বাড়তি অংশ। মিহরাবে ইমাম মহোদয় ইবাদতের নেতৃত্ব ও ধর্মীয় নির্দেশনা দেন। মিহরাবের মধ্যেই থাকে মিম্বার। মিম্বারের ধাপ তিনটি। রমজানের বিদায়ে জিবরাঈল (আ.) তিনবার তিনটি কথা বলেন, প্রিয় নবী (সা.) মিম্বারের তিনটি ধাপে তিনবার আমিন বলেন।
সুরা আলে ইমরান, সুরা মারিয়ামসহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মিহরাব শব্দের উল্লেখ আছে। খ্রিস্টান, ইহুদিদের প্রাচীন উপাসনালয়সংলগ্ন সমতলভূমি থেকে যথেষ্ট উঁচুতে থাকা বিশেষ কক্ষকেও মিহরাব বলা হতো, যেখানে সেবক ও পুরোহিতরা অবস্থান করতেন। তবে ইসলামের মসজিদ-স্থাপত্যের মিহরাব অন্যদের থেকে আলাদা। এখন মুসলমানদের মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে মিহরাব দেখা যায় না।
আরবি শব্দমূল ‘হরব’ থেকে মিহরাবের উৎপত্তি। হরবুন অর্থ বর্শা ও যুদ্ধ। কথিত আছে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মিহরাবে অত্যাবশ্যকীয় জীবনোপকরণ ও যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি রাখা হতো। তবে ইতিহাসজ্ঞ ইবনে দুকমাক ও মাকরিজির মতে, মসজিদ-ই-নববীতে মিহরাব ছিল না। খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ হিজরি ৯৯ সালে মসজিদ-ই-নববীর মিহরাব নির্মাণ করেন। এটিই ইসলামী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি প্রথম মিহরাব।
পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসের মিহরাবেই মারিয়াম (আ.) বেহেশতি খাদ্য, ফলফলাদি লাভ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় ‘...যখনই জাকারিয়া মিহরাবের মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই তিনি কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন ‘কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?’ তিনি বলতেন, ‘এসব আল্লাহর কাছ থেকে আসে...। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৭)
এমন জবাবে জাকারিয়া (আ.) ওই মিহরাবে সন্তান লাভের জন্য দোয়া করেন। দোয়াটি সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮-এ উল্লেখ আছে। সুসন্তান ইয়াহিয়া (আ.) ওই মিহরাবের মোনাজাতের নগদ প্রতিফল।
বর্তমানে মসজিদ-ই-নববীর অনন্য আকর্ষণ তার মিহরাব। তবে যেখানে প্রিয় নবী (সা.) সিজদা করতেন, ওই স্থানটি সর্বসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.)-এর নামাজের স্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমার মিম্বার ও ঘরের (রওজা শরিফ) মধ্যখানের জায়গাটি হলো জান্নাতের বাগান এবং আমার মিম্বার হলো আমার ঝরনার ওপর। ’ (বুখারি)
মসজিদ-ই-নববীর মিহরাবের স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণ-সৌন্দর্য শিল্পসুষমার অনুপম নিদর্শন। শিল্পীর সুনিপুণ স্পর্শে আঁকা হয়েছে ফুল ও অন্যান্য নকশা, যা নবিপ্রেমীদের অন্তরে জাগিয়ে তোলে রাহমাতুললিল আলামিনের শাফাআত ও সাক্ষাতের দুর্নিবার আকর্ষণ। ১৪০৪ হিজরিতে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ মসজিদ-ই-নববীর মিহরাবের অলংকরণ সম্পন্ন করান। মিহরাবগুলো হলো—
ক) মিহরাবে নববী, খ) মিহরাবে ফাতেমি, গ) মিহরাবে তাহাজ্জুদ, ঘ) মিহরাবে উসমানি, ঙ) মিহরাবে সুলাইমানি, চ) মিহরাবে শাইখুল হারাম।
ইবাদতে একাগ্রতা ও কিবলামুখিতা তৈরিতে মিহরাবের গুরুত্ব অসাধারণ। ইবাদতে পরিতৃপ্তি সৃষ্টির জন্য নেকের কাজে দ্রুত ধাবিত হওয়ার জরুরি আহ্বান জানানো হয় মসজিদের মিহরাব থেকেই।
সূত্র: ইকনা
-এটি