আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সৌদি আরবের মদিনায় সাতটি মসজিদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি কমপ্লেক্স। এই সাতটি মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহানবি সা. ও তার পুণ্যাত্মা সাহাবিদের স্মৃতি। বিশেষত তা খন্দক বা আহজাবের যুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করছে। মসজিদগুলোর অবস্থান মদিনার সালা পর্বতের পশ্চিম প্রান্তে।
পঞ্চম হিজরিতে এই পাহাড়ের সন্নিকটেই মদিনার মুসলিমরা আরবের সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিহত করতে পরিখা খনন করেছিল। পরিখা পাহারা দেওয়ার জন্য যেসব নিরাপত্তা চৌকি করা হয়েছিল এবং সেখানে যেসব বিশিষ্ট সাহাবি অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন পরবর্তী সময়ে তাদের নামে সেখানে মসজিদ নির্মিত হয়।
উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ধারাবাহিকভাবে মসজিদগুলো হচ্ছে আল-ফাতাহ মসজিদ, সালমান ফারেসি মসজিদ, আবু বকর সিদ্দিক মসজিদ, ওমর ইবনুল খাত্তাব মসজিদ, আলী ইবনে আবি তালিব মসজিদ ও ফাতেমাতুজ জাহরা মসজিদ।
ঐতিহাসিকদের মতে, প্রকৃতপক্ষে এখানে উল্লিখিত ছয়টি মসজিদই ছিল। পরবর্তী সময়ে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদে কিবলাতাইনকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেন এই ছয় মসজিদ পরিদর্শনকারীরা মসজিদে কিবলাতাইনও পরিদর্শন করে।
আল-ফাতাহ মসজিদ: প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদে আল-ফাতাহ। এটি সালা পর্বতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। যুদ্ধের সময় এখানেই মহানবী সা. অবস্থান করেন এবং মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের জন্য দোয়া করেন। তিনি এখানে অবস্থানকালেই সুরা ফাতাহ অবতীর্ণ হয়।
ধারণা করা হয়, ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ.-এর শাসনামলে (৯৯-১০১ হি.) এখানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তী সময়ে উসমানীয় সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন।
সালমান ফারসি রা. মসজিদ: বিশিষ্ট সাহাবি সালমান ফারসি রা.-এর নামে মসজিদের নামকরণ করা হয়। এটি আল-ফাতাহ মসজিদের দক্ষিণে অবস্থিত এবং সালা পর্বতের পাদদেশ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে এর অবস্থান। ছোট এই মসজিদের দৈর্ঘ্য সাত মিটার এবং প্রস্থ দুই মিটার। সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ মসজিদটির পুনর্নির্মাণ করেন।
আবু বকর সিদ্দিক মসজিদ: সালমান ফারসি রা.-এর মসজিদ থেকে ১৫ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল মসজিদটি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের জন্য তা ভেঙে ফেলা হয়।
ঐতিহাসিকরা বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. এখানে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন এবং আবু বকর তাঁর খেলাফতের সময় এখানে নামাজ আদায় করতেন। এ কারণেই তাঁর নামে এখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়।
ওমর ইবনুল খাত্তাব মসজিদ: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাবের নাম থেকে ধারণা করা হয় খন্দক যুদ্ধের সময় এখানে তিনি অবস্থান করেছিলেন। আয়তন বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অন্যান্য ছোট মসজিদের মতোই এবং একই সময়ে তা নির্মিত হয়েছিল।
আলী ইবনে আবি তালিব রা. মসজিদ: মসজিদ কমপ্লেক্সে ওঠার সময় সিঁড়ির ঠিক পাশেই আলী ইবনে আবি তালিব রা. মসজিদ অবস্থিত। তবে তা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। বর্তমানে মসজিদের অস্তিত্ব টিকে থাকলেও তার অবস্থা খুব ভালো নয়। যার দৈর্ঘ্য সাড়ে আট মিটার এবং প্রস্থ সাড়ে ছয় মিটার। ধারণা করা হয়, মসজিদের ফাতাহ নির্মাণের সময় মসজিদে আলী নির্মিত হয়।
ফাতেমা রা. মসজিদ: মসজিদে আলী রা.-এর কাছেই মসজিদে ফাতেমাতু জাহরা রা. অবস্থিত। এটি মাসউদ বিন মুয়াজ মসজিদ নামেও পরিচিত। সাত মসজিদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ছোট। এর দৈর্ঘ্য চার মিটার এবং প্রস্থ তিন মিটার। উসমানীয় সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদে খন্দক: খন্দক প্রান্তে অবস্থিত হলেও এই মসজিদটি আধুনিক সময়ে নির্মিত। অত্যাধুনিক এই মসজিদে চার হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। ১৪২৮ হিজরি মোতাবেক ২০০৭ সালে তা নির্মিত হয়। সূত্র: মদিনা প্রজেক্ট ডটকম
-এটি