আবদুল্লাহ তামিম।। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো আরব-মুসলিম রাষ্ট্র ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। তাই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা দর্শক ও ভক্তদের স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে সেজেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ কাতার। বিশ্বকাপ ভক্তদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরে অভিনব কায়দায় অভ্যর্থনা জানাতে রাজধানী দোহাসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে মহানবী সা.-এর হাদিস সম্বলিত ম্যুরাল। এসব কিছু ছাপিয়ে দেশ-বিদেশে টক অব দ্যা টাইম হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিম দেশে বিশ্বকাপ। এটাকে অনেকে মুসলমান ও ইসলামের জয়ও বলছেন। এ খেলাকে ঘিরে ইসলাম ও মুসলিমদের জয় বলার কোনও সুযোগ আছে কি? এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেশে দুই প্রান্তের বিজ্ঞ দুই আলেম।
পূর্ণত মানবকল্যাণে নিবেদিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, খেলার হার জিত দিয়ে মুসলিম জাতির জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় না। সৌদি আরব বা কোনো মুসলিম দেশ খেলায় জিতলে ইসলাম জেতে না, তারা হারলে ইসলাম হারে না।
মুসলিমের প্রকৃত সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে শয়তানের বিছানো জাল থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর দাসত্ব করতে পারা ও না-পারার ওপর।
তিনি টুইটারে আরো লিখেন, ‘খেলা’ মানসিক রিফ্রেশমেন্ট ও শরীর চর্চার উপকরণ মাত্র। শরীয়ার সীমানায় থেকে তা থেকে উপকৃত হবেন একজন ঈমানদার। কিন্তু আখিরাত বিশ্বাসী মানুষ, যার প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যার প্রতিটি কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ হচ্ছে হিসাবের খাতায়, 'খেলা'র মতো তুচ্ছ বিষয়ে মেতে থাকা তাকে মানায় না।
যুবকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, হে যুবক, রাত তিনটার ফুটবল ম্যাচের জন্য যে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করো, আল্লাহর সামনে তাহাজ্জুদে দাঁড়াবার জন্য অমন প্রতীক্ষা কয়দিন করেছ? দুনিয়ার তারকাদের জন্য রাত্রিজাগরণের ভেতর কোনো সফলতা নেই; সফলতা আল্লাহর জন্য রাত্রিজাগরণের ভেতর।
নবীজী সা. সুস্বাস্থ্যের জন্য দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। বর্শা নিক্ষেপ, ঘোড়দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি যার মাধ্যমে শারীরিক কসরত ও মানসিক রিফ্রেশমেন্ট হয়-সেসব প্রতিযোগিতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আমরা রাত জেগে অন্যের খেলা দেখে স্বাস্থ্য নষ্ট করছি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘রাসুল সা. ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, কিয়ামতের আগে চোখ ধাঁধানো ফিতনার প্লাবনে অনেক নামধারী মুসলমানের ঈমান ভেসে যাবে। মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও যারা ঈমান বা ঈমানি চেতনাহীন হয়ে যাবে, তারা কতই না দুর্ভাগা! মহান আল্লাহ আমাদের ঈমান ও আমলের ওপর অটল রাখুন, ফিতনা থেকে হেফাজত করুন।’
সিলেটের আম্বরখানা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব, সিয়ানা ট্রাস্টের পরিচালক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, মুফতি জিয়াউর রহমান বলেন, খেলায় ইসলামের নামে সৌদিকে সাপোর্ট করাই তো জায়েয না৷ কারণ সৌদি জিতলে ইসলাম জিতবে না৷ সৌদি হারলে ইসলাম হারবে না৷ খেলার সাথে ইসলামের হারজিতের কোনো সম্পর্ক নেই৷
ফুটবল বিশ্বকাপ তো বারবার আসে, বারবার যায়৷ কিন্তু এবারকার বিশ্বকাপের মতো হারামের 'নরমালাইজেশন' আর কখনো হয় নি৷ এটাই মুসলিম মিল্লাতের জন্য সবচে বড় ফিতনার কারণ৷
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার সন্তান রাতভর খেলা দেখছে৷ ফটকা বাজিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে৷ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে৷ ফজরের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়ছে৷ আর আপনি বসে বসে তার খেল-তামাশা দেখছেন৷এমন উদাসীন অভিভাবকের জন্যই শেষ বয়সের দীর্ঘশ্বাস৷
তিনি জায়েজ না জায়েজের বিষয়ে বলেন, ইসলামে কিছু শর্তের আলোকে খেলা জায়েয আছে৷ কিন্তু কোনো শর্তেই আন্তর্জাতিক খেলার টুর্নামেন্ট দেখা জায়েয নয়৷ নিজে খেললে শারীরীক ফিটনেসের উপকার হয়৷ কিন্তু বিভিন্ন দেশের খেলা দেখলে সময়, অর্থ ও ইবাদতে মনোযোগ নষ্ট হয়৷
-এটি