আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ মালয়েশিয়া। এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৩২ মিলিয়ন, যার ৬১ শতাংশ মুসলিম। বহু জাতি ও বহুভাষী মানুষের বসবাস মালয়েশিয়ায়। ফলে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। শিক্ষা খাতে দেশটির উন্নয়ন ঈর্ষণীয়।
স্বাধীন মালয়েশিয়ার যাত্রা শুরু হয় ৩১ আগস্ট ১৯৫৭ সালে। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের পরও স্বাধীনতালাভের কিছুদিনের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় দেশটি। ইসলামী শিক্ষা মালয়েশিয়ার প্রাচীনতম শিক্ষাব্যবস্থা। ১৫ শতকে মেলাকা সালতানাত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দেশটিতে ইসলামী শিক্ষার প্রচলন ঘটে।
প্রাথমিকভাবে বোর্ডিং স্কুল হিসেবে শুরু হয়, যাকে মালয় ভাষায় ‘পোনডো’ বা কুঁড়েঘর বলে। পোনডোর শিক্ষককে বলা হতো টুয়ান গুরু। তিনি একাই তা পরিচালনা করতেন। নির্ধারিত কোনো বই ছিল না। শিকক্ষের চারদিকে সবাই বৃত্তাকারে বসত আর তিনি তাদের পাঠ দান করতেন। বয়সের কোনো ভেদাভেদ ছিল না, ছিল না কোনো শ্রেণিবিন্যাস। এই পদ্ধতিতেই দ্বিনি শিক্ষা চলেছে দীর্ঘ অনেক বছর।
১৯২০ সাল থেকে মালয় ছাত্ররা জ্ঞান আহরণের জন্য পাড়ি দেয় প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসরে। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আল-আজহারের সাবেক শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার ইসলামী শিক্ষার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ সময় আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় করা হয়।
মালয়েশিয়ায় ১৩টি প্রদেশের ৯টিই ভিন্ন ভিন্ন সুলতানের অধীন। প্রত্যেক সুলতানই তাঁর রাজ্যে ধর্মীয় প্রধান। তাদের সবার সমন্বয়ে সাংবিধানিকভাবেই ইসলাম শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে মালেয়েশিয়ান সরকার। কিন্ডারগার্টেন বা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ। তখন শিশুদের বয়স থাকে চার থেকে ছয় বছর। সাত বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়।
১২ বছর বয়সে তারা এই স্তর শেষ করে। সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে যেসব ইসলামী বিষয় মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক তা হলো আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, জাওয়ি। ইসলামী জ্ঞানে আরো বেশি পারদর্শী করার জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। যা ‘কাফা’ নামে পরিচিত। তবে তা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যাঁরা তাদের সন্তানদের ইসলামী জ্ঞানে অধিক পারদর্শী করে তুলতে চান তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ‘কাফা’ ক্লাসে পাঠান।
কাফা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আটটি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। তা হলো—আখলাক (শিষ্টাচার), আকিদা (বিশ্বাস), জাওয়ি (আরবির মতো এক ধরনের মালয় ভাষা লেখার পদ্ধতি), আল কোরআন, আরবি ভাষা, সিরাত (মনীষী জীবন), তাওহিদ ও আরবি বর্ণলিপি। প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয়সমূহ পাঠের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয় পড়ানো হয়। মালয়েশিয়ার শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৩ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠকাল আবার দুই ভাগে বিভক্ত। নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক। এই স্তরেও ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক। তাদের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ পড়ানো হয়।
এটা মালয়েশিয়ার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম। তবে প্রাইভেট স্কুলগুলো সরকারি কারিকুলামের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। অন্য জাতি ও ধর্মানুসারীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব পাঠ্যক্রম। এ ছাড়া ইসলামী শিক্ষার জন্য আছে স্বতন্ত্র মাদরাসা ও হিফজখানা। প্রাচীন পদ্ধতিতে পাঠদান আজও বিদ্যমান আছে মালয়েশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে। বিশেষত কেলান্টান, তেরেংগানু ও কেডাহ প্রদেশে। সূত্র: ইকনা
-এসআর