মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত আব্দুর রহমান বিন জায়েদ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, হজরত আতা বিন ইয়াসার ও হজরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রাহিমাহুমাল্লাহু তায়ালা একসাথে হজ করার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওয়ানা হলেন।
তাদের সাথে অন্যান্য সাথীবর্গও ছিলো। ‘আবওয়া’ নামক স্থানে তাঁরা সকলেই যাত্রা বিরতি করলেন। হজরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রাহিমাহুল্লাহু তায়ালাসহ তাঁর সাথীরা প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য বের হয়ে পড়েন। হজরত আতা রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা সেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে শুরু করেন।
হঠাৎ গ্রাম্য এক সুন্দরী মহিলা তাঁর কাছে প্রবেশ করলো। যখন তিনি বিষয়টি বুঝতে পারলেন, তখন মনে করলেন, হয়তো মহিলার কোনো প্রয়োজন আছে।
তাই তিনি নামাজ সংক্ষিপ্ত করে নেন। তারপর বললেন, আচ্ছা! আপনার কী কোনো প্রয়োজন আছে? উত্তরে বললো, হঁ্যা। কী প্রয়োজন তিনি জানতে চান। মহিলা বললো, আপনি আমার সাথে সহবাস করুন। আমি গর্ভ ধারন করতে চাই। অথচ, আমার স্বামী নেই।
মহিলার কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি ধ্বংস হও। তুমি আমার থেকে দূর হও। তুমি নিজেকে ও আমাকে জাহান্নামের আগুনে প্রজ্জ্বলিত করো না। কিন্তু মহিলা তাঁকে নিজের দিকে ফুঁসলানোতে ব্যস্ত ছিলো। সে তার চাহিদা পুরনে নাছোড়বান্দা।
বর্ণনাকারী বলেন, এইদিকে হজরত আতা রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা কেঁদেই চলছিলেন। আর বলতেছিলেন, তুমি ধ্বংস হও। তুমি ধ্বংস হও। তুমি আমার থেকে দূরে যাও। আমার থেকে দূর হও। যখন মহিলা তাঁর কান্না এবং পেরেশানী দেখলো, তখন মহিলাও কান্না শুরু করলো। কান্না অবস্থায় হজরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা প্রবেশ করেন।
যখন দেখলেন দুইজন কান্না করতেছে তখন এককোণে বসে তিনি নিজেও কান্না শুরু করেন। কিন্তু কেনো কান্না চলছে তিনি নিজেও জানতেন না। এইভাবে একের একজন আসে আর কান্নায় শামিল হয়। কেউ কান্নার কারণ জানতে চায় না। একসময় সকলের কান্নার আওয়াজ বেড়ে যায়। গ্রাম্য মহিলা যখন এই অবস্থা দেখলো তখন আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা বের হয়ে যাওয়ার পর আমরা ভিতরে প্রবেশ করি। কিন্তু হজরতের সম্মান আর ভয়ের কারণে ঘটনা কী ঘটেছে জানতে সাহস করিনি। আর তিনি বয়সেও হজরত সুলাইমান রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার চেয়ে বড় ছিলেন। তারপর তাঁরা দুইজন প্রয়োজনে শহরে বের হলেন।
রাতের বেলায় হজরত আতা রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা স্বপ্নে দেখে সজাগ হয়ে কান্না শুরু করেন। হজরত সুলাইমান রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, আমি কান্নার কারণ জানতে চাই। আমার কথা শুনে তিনি আরো বেশি কান্না শুরু করেন। আমি আবারো কান্নার কারণ জানতে চাই। উত্তরে তিনি বলেন, গতরাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি।
স্বপ্নটি কী আমি জানতে চাই। উত্তরে তিনি বলেন, বলতে পারি তবে একটি শর্ত। শর্ত হলো, তুমি স্বপ্নের কথা আমার জীবদ্দশায় কাউকে বলতে পারবে না। আমি বললাম, ঠিক আছে। আমি শর্ত মেনে নিলাম। তারপর তিনি বলেন, গতরাতে আমি হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে দেখি। আমি তাঁকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেছিলাম।
আমার দৃষ্টি যখন তাঁর সুন্দর্যের দিকে পড়ে, তখন আমি কান্না শুরু করে দিই। আমার কান্না দেখে তিনি বলেন, হে ভাই! তুমি এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কান্না করছো কেনো? আমি উত্তরে বলি, আমার মা—বাবা আপনার জন্য কোরবান হোক। আপনাকে দেখে আপনার সাথে ঘটা জুলেখার ইতিহাস মনে পড়ে যায়। আপনি যে বিপদে পড়েছিলেন সেই কথা মনে পড়ে যায়। জেলখানায় আবদ্ধ ছিলেন।
আপনার পিতা হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সাথে আপনার দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার কথা মনে পড়ে যায়। আপনার মোজাহাদা ও ধৈর্যের কথা মনে পড়ে যায়। তাই মনের অগোচরে আমার কান্না চলে আসে। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, তোমার সাথে আবওয়া নামক স্থানে মহিলার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কি আশ্চর্যের না? তখন আমি বুঝতে পারি, তিনি আমার বিষয়টি জেনে গেছেন। তাই স্বপ্নে কান্না শুরু করি। জেগে দেখি আমি কান্নাই করতেছি।
হজরত সুলাইমান বিন ইয়াজিদ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, এইবার আমার উক্ত মহিলা সম্পর্কে জানতে সুযোগ হলো। জানতে চাই সেই মহিলার ঘটনাটি। তারপর তিনি সেই দিনের ঘটনাটি আমাকে বিস্তারিত বললেন।
তিনি মারা যাওয়ার আগে আমি উক্ত স্বপ্নটি কারো কাছে বর্ণনা করিনি। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর স্ত্রীর কাছে ঘটনাটি বলেছিলাম। আর মদিনায় এই বিষয়টি তাঁর ইন্তিকালের পরই প্রচার—প্রসার হয়েছিলো। সূত্র: আর-রিক্কাতু ওয়াল বুকা
-এটি