হাফেজ নাঈম উদ্দীন ।।
রিসালাতের শুভসূচনা থেকে সুন্দর সমাপ্তি পর্যন্ত যত ঐশী প্রত্যাদেশ নাযিল হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রূপই হচ্ছে আল কোরআনুল কারীম। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নতুন কিতাব নাযিলের প্রয়োজন দেখা দিবে না। কিয়ামত পর্যন্ত আগত অনাগত সকল জাতি-গোষ্ঠীর সামনে কোরআন চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছে যে, কোরআন অনন্য এবং যার রহস্যময়তা অনতিক্রম্যও বিকল্প সৃষ্টি করা মানবীয় প্রজ্ঞার আওতাবহির্ভূত।
কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের উদ্ভাবনীশক্তি যত অগ্রসর হবে, কোরআনের অশেষ রহস্য ও সেই পরিমাণেই মানুষের সামনে উন্মুক্ত হতে থাকবে।
প্রতিটি প্রজন্মের সামনে পবিত্র কোরআনের অলৌকিকত্ব ও রহস্যময় দ্বার উন্মুক্ত হতে থাকবে।
কোরআনের শৈল্পিক সৌন্দর্য, তার সাহিত্যমান, চরম বিষ্ময় হয়ে থাকবে। অতীত বর্তমান ও অনাগত ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়ে কুরআন তার আগামবাণী সারা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এ যুগেও অলৌকিক জ্ঞানের মহাসাগর এবং বর্তমান ও বিজ্ঞানের মধ্যে মিল ও সামঞ্জস্যতা যে কোনো বিচারে বিস্ময়কর। এক্ষেত্রে আল কুরআন বিশ্ববাসীর সামনে একটি চ্যালেঞ্জ।
ঈমানদার হওয়ার অপরিহার্য শর্ত হলো। অন্য দুটি বিষয়ের সাথে আল কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। কোরআনের উপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে এর প্রতিটি শব্দই মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার পক্ষ হতে নাযিলকৃত বা অবতীর্ণ তা মনে প্রাণে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা।
এর বর্ণিত প্রতিটি বাক্য ঘটনা কাহিনী নির্ভুল বলে মেনে নিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র হেদায়েতের বাণী হিসেবে গ্রহণ করা। আল কোরআন হঠাৎ করে নাযিল করা কোন গ্রন্থ নয়।
বরং মহানবী সা. ২৩ বছর ব্যাপি বিপ্লবী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পেক্ষাপটে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং নানা প্রয়োজনে আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া নির্দেশিকা।
কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন রমজান মাস, এ মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে। গোটা মানবজাতির জন্য জীবনযাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলীতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে। ( সূরা বাকারা ১৮৫)
দীর্ঘ ২৩ বছর কোরআন নাযিলের পর মহানবী সা. একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এর সবদিকে পরিপূর্ণতা সাধন করেছেন। তখন আল্লাহতালার পক্ষ হতে ঘোষণা নিম্নরূপ; আজ আমি আমার দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করে দিয়েছি। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) হিসেবে কবুল করে নিয়েছি। সূরা মায়েদা ৩
আমাদের পিতা, স্বামী বা সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি প্রবাসে থাকে এবং সেখান থেকে চিঠি লিখে তখন আমরা নিজেই খুব আগ্রহের সাথে পড়ি।
কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের সবার স্রষ্টা মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি যে চিঠি দিয়েছেন তা বুঝে শুনে পড়া এবং সে অনুযায়ী জীবন চলার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু আন্তরিক??
অথচ কুরআনের সাথে মুমিনের আচরণ কেমন হওয়া উচিত আল্লাহ তাআলা নিজেই বলে দিয়েছেন। আমরা যাহাদিগকে কিতাব দিয়েছি, তারা তার যথার্থভাবে পড়ে (অর্থ ও ব্যাখ্যা সহকারে)এরা এর প্রতি ঈমান আনে। এর প্রতি যারা কুফরি করে মূলত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা ১২১)
কোরআনের আয়াত শুনে মুমিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও কোরআন কি বলেছে? প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই যাদের দিল (অন্তর) খোদার স্বরণে কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াতসমূহ যখন তাদের সামনে তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের খোদার উপর আস্থা ও নির্ভরতা রাখে। ( সূরা আনফাল ২)
সুতরাং এই গ্রন্থ থেকে হেদায়েত পেতে হলে এই কিতাবের প্রদর্শিত সেই মহানবীর আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে হবে।
-এটি