আবুল ফাতাহ কাসেমি।।
আগামীকাল দেশে আসছেন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা আবুল কাসেম নুমানি হাফি.। দীর্ঘ কয়েক বছর পর বাংলাদেশে আল্লামা নুমানির এটা সম্ভবত তৃতীয় সফর। তার সফরকে ঘিরে ফুযালায়ে দেওবন্দসহ তার ভক্ত মুরিদানদের মধ্যে বিরাজ করছে খুশির আমেজ। তাছাড়া তিনি দেওবন্দের সফল মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস হওয়ায় এ দেশের দেওবন্দি ঘরানার মাদরসাগুলোর হাজার হাজার উলামা তলাবার হৃদয়ে রয়েছে তার বিশেষ স্থান।
বর্তমান বিশ্বের আলোচিত এ আলেমের সফরকে ঘিরে তার শাগরিদ ও মুতাআল্লিকিনদের মাঝে যে আমেজ বিরাজ করছে আসুন জেনে নেই কে এই আল্লামা নুমানি?
আল্লামা আবুল কাসেম নুমানি দা. বা.। নমুনায়ে সলফ। বর্তমান বিশ্বের আলোচিত ইসলামি ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস।
পিতা হাজি মুহাম্মদ হানিফ। ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারস জেলার মদনপুরায় ১৯৪৭ সালের ১৪ জানুয়ারি মুতাবেক ২২ সফর ১৩৬৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি প্রিয় আম্মার কাছে। বেনারসের ঐতিহাসিক জামিআ ইসলামিয়ায় প্রথমিক শিক্ষা শেষ করে দারুল উলুম মেওতে ভর্তি হন।
এরপর কাফিয়া (দশম শ্রেণি) থেকে দাওরা হাদিস ও তাখাস্সুস ফিল ফেকাহ পড়েন আযহারুল হিন্দখ্যাত ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দে। ১৩৮২ হিজরিতে ভর্তি হয়ে ১৩৮৩ হিজরিতে দাওরা হাদিস (মাস্টার্স) ও ১৩৮৮ হিজরিতে ইফতা কোর্স শেষ করেন।
কর্মজীবন: ১৩৮৮ হিজরিতে ভারতের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ জামিআ ইসলামিয়া বেনারসে দীনি খেদমত শুরু করেন। ১৯৯১ খৃষ্টাব্দ মুতাবেক ১৪১১ হিজরিতে দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর দারুল উলুম দেওবন্দের ৯ম মুহতামিম হযরত মাওলানা মারুগুবুর রহমান বিজনুরি রহ. এর ইন্তেকালের পর ১৪৩৩ হিজরিতে ১০ম মুহতামিম হিসেবে নিযুক্ত হন। সর্বশেষ গত ১৪৪১ রমজানুল মোবারকে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রখ্যাত শাইখুল হাদিস মুফতি সাইদ আহমদ পালুনপুরী রহ. এর ইন্তেকালের পর মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত মতে অধ্যাবদি দেওবন্দের শাইখুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাছাড়া তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জামিআ ইসলামিয়া বেনারসের শাইখুল হাদিস পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
এ মহান মনীষী ১৩৮৬ হিজরিতে মেশকাতের বছর উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ শাইখুল হাদিস যাকারিয়া রহ. এর হাতে বাইয়াত হন। হযরতের ইন্তেকালের পর ১৩৮৮ হিজরিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফতি, ভারতের মুফতিয়ে আজম (গ্রাÐ মুফতি) ফতোয়া মাহমুদিয়ার সংকলক মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি রহ. এর হাতে বাইয়াত হন। সবশেষে ১৯৮৫ সালে খেলাফত লাভ করেন।
কালের এ মনীষী শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ. বিশিষ্ট শাগরিদ মাওলানা ইবরাহিম বালিয়াবি রহ. এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি ইতিহাসের হিরকখণ্ড মাওলানা ফখরুদ্দিন মুরাদাবাদি, দারুল উলুম দেওবন্দের দীর্ঘকালীন মুহতামিম হাকিমুল ইসলাম কারী তাইয়েব, মুফতি নিযামুদ্দিন, শাইখুল আদব ওহিদুজ্জামান কিরানভি, দেওবন্দের সাবেক শাইখুল হাদিস মাওলানা মেরাজুল হক দেওবন্দি, মাওলানা আনযার শাহ কাশমেরি রহ.সহ অসংখ্য মনীষীদের শিষ্যত্ব লাভে ধন্য হন।
বক্তৃতা, লেখালেখি ও অধ্যাপনাসহ বিভিন্ন দীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন কালের এ মনীষী। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একাধিক দীনী প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, একাধিক পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে দীনের বহুমখি খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। তিনি আত তাকরিরুল মারজি লিহল্লি সুনানিত তিরমিজি (দরস সংকলন), তরকে তাকলিদ আওর উসকা আঞ্জাম, খুতুবাতে নুমানি, মাকালাতে নুমানি, আসবাকে হাদিসসহ অসংখ্যা গ্রন্থের লেখক। অধ্যাপনা ও লেখালেখি ছাড়াও তিনি আধ্যাত্মিকতার ময়দানে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি খানকায়ে মাহমুদিয়া বেনারসের নাজেম ও মুতাওয়াল্লি।
আমরা কালের এ বরিত পুরুষ, নমুনায়ে সলফ মুফতি আবুল কাসেম নুমানি দা. বা. এর নেক হায়াত ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
লেখক: আল্লামা নুমানির শিষ্য ও জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া রামপুরার শিক্ষক