আবু তালহা তোফায়েল
মানব জীবনে আদব বা শিষ্টাচার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ আমাদের সমাজে নেই সুসম্পর্কের সবুজ আচ্ছাদন। বাক্যবিনিময়ে নেই কোমলতার কোনো চিহ্ন। কথোপকথন ও গালাগালের প্রাবাল্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে। কারও সঙ্গে প্রথম দেখাতে সালাম, আদাব জ্ঞাপন ও কুশলাদি জানার আগ্রহ ছিল শিষ্টাচার।
আজ যেন এর সবই নির্বাসিত। ইসলামে ফরজ বিধানগুলো পালনে যেভাবে তাকিদ দিয়েছে, তেমনি আচার আচরণে বা ব্যাবহারেও দিক নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামের সর্বশেষ নবীকে উদ্দেশ্যে করে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে ইরশাদ করেছেন "ইন্নাকা লা-আলা খুলুকিন আজিম" অর্থাৎ আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজে বলেন, اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاقِ ‘আমি তো প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য।’ (কানযুল উম্মাল)। শুধু তাই নয়, কুরআন-হাদীসের বাইরে ইসলামের সর্বশেষ নবীকে নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী মক্কার কাফির-মুশরিকরা তাঁর শিষ্টাচারে মন্তব্য করেছে "আল-আমীন" তথা বিশ্বাসী। (নবুওত প্রাপ্তির পূর্বে)।
উত্তম চরিত্র ও ভাল ব্যবহার নিয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদীছে নববীতে। আহার-পানীয় গ্রহণে, অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে, সালাম আদান-প্রদানে, অনুমতি গ্রহণে, ওঠাবসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুমিনের আচরণ কিরূপ হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'তুমি ক্ষমার নীতি গ্রহণ কর। লোকদের সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের এড়িয়ে চল’ (সূরা আ‘রাফ ৭/১৯৯)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ আরো বলেন, ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (সূরা আল ইমরান ৩/১৩৪)।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) চারিত্রিক ও মৌখিক অশ্লীলতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘নবী করীম (সা.) কাউকে গালি দিতেন না, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করতেন না এবং কাউকে অভিশাপ দিতেন না। কাউকে তিরস্কার করতে হলে শুধু এটুকু বলতেন, তার কী হয়েছে। তার কপাল ধুলায় ধূসরিত হোক’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দশ বছর রাসূল (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। তিনি আমার ব্যাপারে কখনো ‘উহ’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। আর তিনি কখনো বলেননি, তুমি কেন এটা করেছ কিংবা এটা কেন করনি’?
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এতে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের নিদের্শনা নিহিত আছে। শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের সকল সমস্যার সুষ্ঠু-সুন্দর সমাধান রয়েছে ইসলামে।
ইসলাম মানবজাতিকে এমন একটি জীবন বিধান প্রদান করেছে, যা আল্লাহর কাছ থেকে ফেরেস্তামণ্ডলী ও মানবজাতি শিখে নিয়েছে। যেমন কারও সাক্ষাতে আমরা তাহিয্যাত বা অভিবাদন বলি। এর ব্যবহারিক রূপ 'আসসালামু আলাইকুম'। এটি দয়া, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, প্রার্থনা প্রভৃতি অর্থ বহন করে থাকে। ইসলামের বিধান অনুসারে শিষ্টাচারের এই পবিত্র রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতি পরস্পর ভাইয়ের মতো জীবনযাপন করে থাকে।
ইসলামের নির্দেশনা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদের সাথে ও তাঁর অধীনস্থদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতেন।
আর মহান আল্লাহ রাসূলের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আহযাব ৩৩/২১)। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠী, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী, যানবাহনে সহযাত্রীসহ ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শিষ্টাচার তথা উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করার তাওফীক্ব দান করুন। আ-মীন!
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক।
-এটি