ফরহাদ খান নাঈম।।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভিক্ষাবৃত্তি একটি নিকৃষ্ট কাজ। তীব্র অভাব-অনটনের কারণে নিরুপায় হওয়া ব্যতিত ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। নবীজী সা. বহু হাদীসে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিন্দা করেছেন এবং এ কাজের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি (অকারণে) ভিক্ষা করতে থাকে, বিচার দিবসে তার চেহারায় কোনো মাংস থাকবে না।-বুখারি ও মুসলিম।
ইসলাম মুসলমানদেরকে ভিক্ষার বদলে কঠোর পরিশ্রম করে, খেটে অর্থ উপার্জন করতে আদেশ দিয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সেই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কারো কাছে কোনো কিছুর জন্য হাত পাতার চেয়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে তা নিজের পিঠে বহন করে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা আমার নিকট অধিক উত্তম। কেননা (যার কাছে চাওয়া হচ্ছে) সে তাকে কিছু দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। - সহীহ বুখারি।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, কারো কাছে কোনো কিছুর জন্য হাত পাতার চেয়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে তা নিজের পিঠে বহন করে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা আমার নিকট অধিক উত্তম। এতে করে সে স্বাবলম্বী হবে ও অন্যকেও দান করতে পারবে। কেননা (যার কাছে চাওয়া হচ্ছে) সে তাকে কিছু দিতেও পারে আবার ফিরিয়েও দিতে পারে। নিশ্চয়ই নিচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম। আর দান করার ক্ষেত্রে নিজের অধীনস্তদেরকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
তবে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম তিন শ্রেণির মানুষের জন্য ভিক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে। এ ব্যাপারে নবীজী সা. এর একটি হাদীস সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য।
রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর এক সাহাবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- হে ক্বাবিসাহ! ভিক্ষা করা তিন প্রকার মানুষ ব্যতীত অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। প্রথমত ঐ ব্যক্তির জন্য বৈধ, যে অন্যর ঋণের বোঝা নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসেছে; যতক্ষণ না উক্ত ঋণ পরিশোধ হয়। দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তির জন্য বৈধ, যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে, অর্থাৎ তার সমস্ত সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে; যতক্ষণ না তার আবশ্যকীয় প্রয়োজনাদি পূর্ণ করার মতো সক্ষমতা অর্জিত হয়।
তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তির জন্য বৈধ, যে নিতান্তই গরীব হয়ে গিয়েছে, এবং এ ব্যাপারটি তার প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে তিনজন জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির স্বাক্ষ্য দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। (আর সে ততক্ষণ পর্যন্ত ভিক্ষা করতে পারবে) যতক্ষণ না সে তার আবশ্যকীয় প্রয়োজনাদি পূর্ণ করার সক্ষমতা অর্জন করে। এই তিন শ্রেণির মানুষ ছাড়া যারা ভিক্ষাবৃত্তি করবে, তারা হারাম ভক্ষণ করবে। সহীহ মুসলিম: ১৮৩৭। আল্লাহ তা’য়ালাই ভালো জানেন।
-এটি