আবদুল্লাহ তামিম।।
সৌদি আরবে প্রথমবার উদযাপিত হয়েছে হ্যালোইন উৎসব। গত বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ও শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রিয়াদের একটি বিনোদনকেন্দ্রে আয়োজন করা হয় কস্টিউম পার্টির। ‘ভয়ংকর পোশাক’ পরার শর্তে বিনোদনকেন্দ্রটিতে দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
‘মৃত আত্মাদের স্মরণে’ প্রতি বছর অক্টোবরের শেষে ইউরোপ, আমেরিকারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব। তবে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই হ্যালোইন উৎসব তেমন দেখা যায়নি।
এবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি বিনোদনকেন্দ্রে এমন উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রথমবার অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকে।
এ উৎসব ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে। বাংলাদেশেও ইসলামের প্রাণকেন্দ্র সৌদিতে এ ধরণের উৎসবে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্যোসাল মিডিয়ায় দেখা গেছে হেল্যোইনের ছবি পোস্ট করে নানানভাবে মত প্রকাশ করেছেন।
প্রবাসী সাঈদ আবদুল্লাহ। তিনি লিখেন, সৌদি আরবে হ্যালোইন পার্টি উদযাপন নিয়ে যারা ইসলাম গেলো, ইসলাম গেলো বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন, তাঁরা নিজেরাই কি নিজেদের দেশে হ্যালোইন উদযাপন, মূর্তিপুঁজা, বিধর্মীদের নানান উৎসব সহ অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড থেকে মুসলিমদের বিরত রাখতে পেরেছেন?
সৌদি আরব মানেই যে সেখানকার হানড্রেড পারসেন্ট মুসলিম হানড্রেড পারসেন্ট সঠিক ইসলাম ধারণ করেন, পালন করেন, তা তো নয়। ইসলাম শুধু সৌদিদের জন্য কেনো, ইসলাম তো সকল দেশের সকল মুসলিমদের জন্য অভিন্ন।
বাংলাদেশের সরকারের কর্মকাণ্ডের সাথে বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের যেমন কোনো সম্পর্ক নেই তেমনি সৌদি শাসক আর সৌদিতে বসবাসরত আলেম ওলামাদের সাথেও সৌদি সরকারের অনৈসলামিক কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। আলেমরা বোঝান, ম্যাসেজ দেন। আর কিছু করার নেই। তাঁরা তো যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না।
মক্কা, মদিনার উপর সৌদি সরকারের শতভাগ কর্তৃত্ব নেই। মক্কা, মদিনা পুরো সৌদি আরব থেকে সতন্ত্র। হারামাইন শরিফাইন ও মসজিদে নববী পুরোপুরি সতন্ত্র। তবে বাংলাদেশ সরকার বাই ডিফল্ট যেমন বাংলাদেশের কিছু কাজ করতে পারে তেমনি সৌদি সরকারও বাই ডিফল্ট কিছু কাজ করে।
ভিসা, যাতায়াত, আবাসন, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ইত্যাদি। সুতরাং সৌদি সরকারের প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্তে আলেমদের কিছু করার নেই। আলেমরা শুধু ফতোয়া দিতে পারেন এবং তাঁরা তা দেনও।
তাছাড়া সৌদি আরবে ৪-৫% অমুসলিম বসবাস করে। তাঁদের জন্য তো তাঁদের ধর্ম পালন ইসলাম নিষেধ করেনি। করেছে কি? করেনি। তাহলে সৌদি আরবে হ্যালোইন উদযাপন নিয়ে ইসলাম গেলো ইসলাম গেলো রব উঠানোর কারণ কি?
সৌদি আরবে কিছু লোক হ্যালোইন উদযাপন করছে বলে এতোটা উত্তেজিত হয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো উচিত নয়। একজন মুসলিম হিসেবে আরও একটু ধৈর্যধারণ করা উচিত। বেহুঁশে নয়, হুঁশে কথা বলা উচিত।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র কাজী সাঈদ বলেন, সৌদি আরবে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে হ্যালোইন উৎসব। মূলত প্যাগান বা পৌত্তলিকরা মৃত আত্মাদের স্মরণে দিনটি পালন করতো। তবে আস্তে আস্তে এটি গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গতকাল সৌদি আরবে শত শত মানুষ ভুত ও আত্মা সেজে হ্যালোইন উৎসবে যোগ দেন।
সৌদী আরবরে দলিল বানাইয়া যারা ইসলাম পালন করে এগুলো কি তোমাদের চোখে পড়ে না? এগুলো কী মুশরিকী কালচার না?
ফটোগ্রাফার ও শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম লিখেন, সৌদি আরবে পালিত হচ্ছে খৃষ্টানদের হ্যালোইন উৎসব। নাউজুবিল্লাহ। তারা ইংগিতে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা প্রস্তুত এখন আমাদের সজাগ হবার পালা। সৌদি আরবের দলিল দিয়ে যারা বিভিন্ন আমেজে মেতে উঠেন তারা কি এবার থেকে হ্যালোইন পালন করবেন! আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হাসান শাওন লিখেন, হ্যালোয়িন মুখোশ পরে সৌদি রিয়াদে অনুষ্ঠিত হলো হ্যালোয়িন উৎসব৷ চিন্তা করেন একবার! আমাদের নবীর পছন্দের ড্রেসের সাথে শয়'তানের মুখোশ পরে এরা উৎসব পালন করছে৷ তাও কিনা সৌদি আরবের মতো দেশে, যেখানে আমাদের প্রিয় নবী শুয়ে আছেন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ৩১ অক্টোবর পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী হ্যালোইন উৎসব। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বর্তমানে পালিত হয় দিবসটি। তবে পশ্চিমা বিশ্বে জাঁকজমকতার সঙ্গে পালন করা হয় হ্যালোইন।
মধ্যযুগ থেকেই হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের উচ্চ ভূমি ও ফ্রান্সের উওর অংশ জুড়ে তখন কেল্টিক সভ্যতার বিস্তার ছিলো। প্রাচীন কেল্টদের পালিত ‘সাহ উইন’ উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইনের সূত্রপাত।
১৮০০ দশকের শেষের দিকে আমেরিকায় হ্যালোইন ছুটির দিনে পরিণত হয়। শতাব্দীর শুরুতেই শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক সবাই ঘটা করে হ্যালোইন উদযাপন শুরু করে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, মৌসুমী খাবার ও উৎসবমুখর পোশাক পরা হতো।
বর্তমানেও হ্যালোইন পালন করা নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় মাতামাতির শেষ নেই। রাতটি উদযাপন করতে সেখানে প্রস্তুতি চলে মাসজুড়েই। এ ছাড়াও কানাডা, আয়ারল্যান্ড, পুয়ের্তো রিকোসহ এশিয়ার জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও হ্যালোইন পালিত হয়। এমনকি বাংলাদেশেও পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব।
এই উৎসবে হ্যালোইন পোশাক পরে পার্টিতে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে কুমড়ো খোদাই করা, মুখোশ পরা, ভয় দেখানো, ভুতুড়ে গল্প বলা, ভৌতিক সিনেমা দেখা ও ভুতুড়ে সাজসজ্জায় সবাই ব্যস্ত থাকে।
-এটি