দিনকে দিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যে দাম, পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। ২০২৩ সালে বড় রকমের খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। করোনা সংকট কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যসংকট, এ জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে ইসলামে কী আছে? কী ভাবছেন বিশেষজ্ঞ আলেমরা। কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম।।
ইসলামে দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে অবশ্যই বলা আছে। কিভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে এ বিষয়েও বলা আছে। দুর্ভিক্ষের আগে সরকার ও জনগণ কিভাবে প্রস্তুতি নেবে এ বিষয়ে বহু আগেই জানিয়ে রেখেছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। দুর্ভিক্ষ বলতে ইসলামে এর কোনো অস্তিত্ব আছে কী না? এ প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলছিলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খে সানী মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া।
তিনি আরো বলেন, পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফে একটি রাষ্ট্রের দূর্যোগকালীন অর্থনীতি নিয়ে যে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্র ও বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য অনুস্বরণীয় হতে পারে।
বাংলাদেশেও যদি এ ধরণের কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কুরআনে বর্ণিত ইউসুফ আ. এর নির্দেশিত পথ অবলম্বন করলে এ দুর্ভিক্ষ থেকে আল্লাহ পাক আমাদেরকে রক্ষা করতে পারেন। হজরত ইউসুফ আ. মিশরের দুর্ভিক্ষের সময় আল্লাহর নির্দেশে জানান, মিশরে সাত বছর প্রচুর শস্য ও ফলফলাদি উৎপাদন হবে, বাকী সাতবছর ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ নেমে আসবে। এ থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে প্রথম সাতবছরের বাড়তি শস্য জমা রাখা। তাহলে দুর্ভিক্ষের সাতবছর অনায়াসেই কাটিয়ে দেয়া যাবে।
তিনি দেশের মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন, পৃথিবীতে আসা সব বালা মুসিবত মানুষের গুনাহের কারণেই হয়। তাই সর্বোপরি আমাদেরকে সব ধরণের গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠনের সহ-সভাপতি, মাদারাসায়ে আশরাফিয়া দারুল উলুম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মফতি শামছুল ইসলাম জিলানী এ বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশে আল্লাহর রহমত ও বরকত আছে। ইনশাআল্লাহ এ দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার কোনো আলামত নেই। বিশ্বের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে এমন কিছুর আভাস আমরা পাই না। যদি দুর্ভিক্ষ আসেও মূলত এর থেকে জনগণকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকেই খাদ্যশস্য মজুদ করতে হবে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আলোকে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের মাঠ পর্যায় পর্যন্ত দায়িত্ব দিতে হবে।
তার সাথে সাথে অনাবাদ জায়গাগুলোও আবাদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধা দিতে হবে। তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কিনে নিতে হবে। দুর্ভিক্ষ অপর্যাপ্ত উৎপাদনের কারণে নয় বরং খাদ্যশস্যের সুসম বন্টনের অভাবে হয়। তাই রাষ্ট্রের পূর্বপ্রস্তুতি ও যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব দেশের মানুষকে দুর্ভিক্ষ বা অনাহার থেকে রক্ষা করা। আবার খেয়াল রাখতে হবে যেনো অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য মওজুদ করে সংকট তৈরি না করে।
তিনি আরো বলেন, সর্বোপরী আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর দিকে রুজু হতে হবে। গুনাহ ছেড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন। আর আমাদের অবশ্যই সুরা ওয়াকিয়ার আমল বাড়াতে হবে। সুরা ওয়াকিয়া যে নিয়মিত পড়বে আল্লাহ তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন। আর দারিদ্রতা তাকে কখনো স্পর্ষও করতে পারবে না। ইস্তিগফারের আমল বেশি বেশি করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে উত্তরণের পথ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাতলে দিয়েছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের শিকার না হয়, সে জন্য খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে।
এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশ স্বস্তিতে রয়েছে। বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সরকার থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
-এটি