আবু তালহা তোফায়েল: কোনো ব্যক্তি পাহাড় সমপরিমাণ পাপ করে যদি পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, এই পাপ অথবা গুনাহ নিয়ে শেষ বিচারের দিন তার রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়া নিয়ে ভয় করে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা সেই ব্যক্তির পাপ সমূহকে মাফ করে দেন।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিলো, যে পাপে নিমজ্জিত হয়ে নিজের উপর সীমালঙ্ঘন করেছিল,নিজের উপর অবিচার করেছিলো; মৃত্যুর পূর্বে তার সন্তানদের ডেকে বললো, হে আমার সন্তানেরা আমি তোমাদের কেমন বাবা? তারা বললো, আপনি আমাদের উত্তম পিতা।
সে বললো, হে আমার সন্তানেরা মৃত্যুর পূর্বে আমি তোমাদের একটা অছিয়ত করছি, তোমরা আমার এই অছিয়তটি রক্ষা করবে তো? তারা বললো হ্যাঁ, অবশ্যই করবো। তিনি বললেন, তোমরা আমার মৃত্যুর পরে আমার দেহটি আগুনে জ্বালিয়ে ছাই বানিয়ে দেবে অতঃপর সেই ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিবে, যাহাতে আল্লাহর সামনে আমার এই পাপগুলো নিয়ে দন্ডায়মান হতে না হয়। অতঃপর তার মৃত্যুর পর সন্তানেরা শত কষ্টের পর বাবার অছিয়ত অনুযায়ী দেহ জ্বালিয়ে ছাই করে বাতাসে উড়িয়ে দিলো এবং অছিয়তটি বাস্তবায়ন করলো।
হাদীসের মধ্যে এসেছে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত দিবসে বাতাসে উড়িয়ে দেয়া ছাইগুলো একত্রিত করবেন। ইন্নাল্লাহা আ-লা কুল্লি শায়'ইন ক্বাদির (কেননা আল্লাহ তায়ালা ত সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তার সকল অংশকে একত্রিত করে তাকে পুনর্জিবিত করবেন, এবং সে ভয়ে কাঁপতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, হে আমার বান্দা তুমি এই কাজটি কেন করলে? তুমি কি ধারণা করেছ আমি আবার তোমাকে পুনর্জিবিত করতে পারবো না? এই কথা শুনার পর সে ভয়ের কণ্ঠে বলবে, হে আমার পালন কর্তা, মূলত আমার পাপের বোঝা নিয়ে আপনার সামনে দন্ডায়মান হওয়া আমার কাছে লজ্জিত লাগছিলো। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতাদের ডেকে বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।
প্রিয় পাঠক! পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে,এবং নিজেকে গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখেছে, জান্নাত-ই হচ্ছে তার একমাত্র আবাসস্থল।
আল্লামা ইবনুল জাযী রাহিমাহুল্লাহ আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন, এক আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে তিনি তার সন্তানকে ডাকলেন এবং সন্তানকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার আদরের সন্তান, তুমি আমার কথা শুন, আমি যেভাবে যে কাজ করতে বলি, তুমি সেভাবে তা পালন কর। তুমি দড়ি দিয়ে আমার গাড়টিকে বাঁধো, তারপর আমাকে টেনে হেচড়ে শাস্তি দিতে থাকো৷ এবং আমাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকো এটাই হচ্ছে তার প্রতিদান যে তার রবের অবাধ্য হচ্ছে।
বাবার কথা মতো ছেলে তাই করল। তখন সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, হে আমার রব, হে আমার মুনিব! আমি পাপি আর আপনি দয়ালু, আমি জঘন্য অপরাধী আর আপনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু, আমি গোলাম আর আপনি মুনিব। আপনি চাইলে এখনি আমার মৃত্যু আসবে, কিন্তু আমি আমার পাপের বোঝা নিয়ে কীভাবে আপনার সামনে দন্ডায়মান হবো?
সুতরাং আমার পাপগুলো আপনি ক্ষমা করে দিন, আপনি ছাড়া আমার আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই। এমন আকুতি মিনতি করতে থাকলো তার রবের কাছে। আর এমন অবস্থাতেই তার রূহ বেরিয়ে গেলো।
তখন বাড়ির কোনো এক প্রান্ত থেকে একটি আওয়াজ আসলো এবং উপস্থিত সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পেলো যে, বান্দা তার রবের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে আর রব তাঁর বান্দাকে নিকটবর্তী করে নিয়েছেন, ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জান্নাতের উচ্চ আসনে তাঁকে সমাসীন করেছেন।
প্রিয় পাঠক! আসুন আমরাও পুণ্যবান ব্যক্তির মতো তাওবা করি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি এবং বলি, "হে আমার রব! আমি জানি আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশী, তবে আমি তাও জানি তোমার দয়া তারচেয়েও আরও বেশী। যদি নেককাররাই শুধু তোমার দয়ার আশা করতে পারে, তবে আমার মতো পাপীরা কার কাছে যাবে?
কার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে? হে আমার রব! তুমি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছ, সেভাবে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। দু'হাত তোলে ফরিয়াদ করছি, হে আল্লাহ! তুমি যদি ফিরিয়ে দাও, তাহলে কে আমায় রহম করবে? হে আল্লাহ! আমার বুকভরা আশা আর তোমার অনুগ্রহ ছাড়া আমার কাছে আর কোনো ওসীলা নেই। হে আমার রব! আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করছি, তুমি আমায় ক্ষমা করো।"
আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দিবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাকো, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদ-৩)।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক।
-এটি