আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইউরোপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য জাদুঘর। ইতিহাস থেকে শুরু করে হালজামানার ফ্যাশন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রায় সব বিষয়ে জাদুঘর আছে সেখানে। সংখ্যায়ও সেগুলো অগণন। ইউরোপের কিছু জাদুঘর ইসলামী নিদর্শন প্রদর্শন করে আর কিছু জাদুঘরে আছে ইসলামী শিল্পকলার জন্য পৃথক বিভাগ ও প্রদর্শনকক্ষ।
ইউরোপের এমন কয়েকটি জাদুঘরের আলোচনা তুলে ধরা হলো— ১. ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লন্ডন : ব্রিটিশ রাজশক্তি দীর্ঘদিন এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল শাসন করার সুবাদে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিপুল পরিমাণ ইসলামী নিদর্শন আছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়াভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘দ্য আল বুখারি ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ইসলামী নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রদর্শন কক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, যাতে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে বর্তমান সময়ের এবং পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বহু নিদর্শন প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এসব নিদর্শনের মধ্যে আছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে সমসাময়িক শিল্পকলা এবং রাজপরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত চিত্রকলা ও তৈজসপত্র থেকে দৈনন্দিন জীবনের আনুষঙ্গিক বহু বিষয়।
২. দ্য মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট, বার্লিন জার্মানিতে অবস্থিত এই জাদুঘরকে মনে করা হয় ‘ইসলামী শিল্পকলা’র ওপর দ্বিতীয় প্রাচীন জাদুঘর এবং পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী জাদুঘর।
জাদুঘরটি বার্লিনের ‘দ্য মিউজিয়াম আইসল্যান্ডে’ অবস্থিত পার্গামুন মিউজিয়ামে অবস্থিত। জাদুঘরের ইসলাম ও মুসলিমসংশ্লিষ্ট অংশকে পৃথক করে ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন জাদুঘর ‘দ্য মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট’। তবে সম্পূর্ণ পৃথক হয় ১৯৫০ সালে। যেখানে ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী নিদর্শন রয়েছে। যেমন উমাইয়া যুগে ব্যবহৃত তৈজসপত্র, প্রথম শতকের কোরআন, তরবারি, বর্ম ইত্যাদি।
৩. ল্যুভর মিউজিয়াম, প্যারিস : ফ্রান্সের বিখ্যাত জাদুঘর ল্যুভরের নাম শোনেনি এমন মানুষ হয়তো খুব কমই পাওয়া যাবে। এই জাদুঘরেও আছে বহু ইসলামী শিল্পকলা ও নিদর্শন। ১৭৯৩ সালে যখন জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়, তখন থেকেই ইসলামী শিল্পনিদর্শনের প্রদর্শনী হয়ে আসছে। ইসলামী নিদর্শনগুলোর জন্য পৃথক প্রদর্শন কক্ষ স্থাপিত হয় ১৮৯৩ সালে। তখন এর নাম ছিল ‘দ্য মুসলিম আর্ট’। কিন্তু ২০১২ সালে জারীকৃত রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের পর ‘স্বতন্ত্র ইসলামিক আর্ট’ বিভাগের পরিকল্পনা ও কাঠামো গড়ে ওঠে। জাদুঘরের ইসলামী শিল্পকলা বিভাগে তিন হাজারেরও বেশি বৈচিত্র্যময় শিল্প নিদর্শন আছে।
৪. বিনাকি মিউজিয়াম, এথেন্স : গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর ‘বিনাকি মিউজিয়াম’। ১৯৩০ সালে অ্যান্থনি বিনাকি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই জাদুঘরেও বহুসংখ্যক ইসলামী নিদর্শন আছে।
২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের সময় জাদুঘরের ইসলামী নিদর্শনগুলো নিয়ে পৃথক গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে ভারত, ইরান, মধ্যপ্রাচ্য, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা ও মেসোপটেমিয়ার বিপুল পমিরাণ মুসলিম নিদর্শন আছে। জাদুঘরে আট হাজারের নিদর্শন আছে।
৫. ডেভিড কালেকশন, কোপেনহেগেন : ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ওঠে। এখানেও ইসলামী শিল্পকলার জন্য পৃথক প্রদর্শন কক্ষ আছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে এটাই ইসলামী শিল্পকলা ও নিদর্শনের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা। এই জাদুঘরেও বিপুলসংখ্যক ইসলামী নিদর্শন আছে।
তথ্যসূত্র: এমভিস্লিম ডটকম ও উল্লিখিত জাদুঘরগুলোর ওয়েবসাইট
-এটি