মুফতি আমিমুল ইহসান: আলহামদুলিল্লাহ আম্মাজানকে সুন্দরভাবে অনন্ত অসীম সফরের জন্য বিদায় জানিয়ে ঢাকার বাসায় ফিরে এলাম। আমি, মেঝো ভাই ও আব্দুল জাব্বার আম্মাকে খাটিয়া থেকে কবরে নামাই। সর্বশেষ আমি আম্মার নূরানী চেহারায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উপরে উঠে আসি।
আম্মা বলতেন তাঁকে রাতে দাফন করতে, কেউ যেন আম্মার আকৃতি না দেখে। মরহুম মামা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মক্কির দেয়া একটি চাদর যত্ন করে আলমিরাতে রেখে দেন। আর বলেন, সে চাদর দিয়ে যেন খাটিয়া আবৃত করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ আম্মা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই হয়েছে। আইসিইউতেও বেহুশ অবস্থায় হিজাবের কথা ভুলে যান নি। বারবার ওড়না টেনে চেহারা আবৃত করতেন।
আম্মা আমাদেরকে একটু স্বপ্নে জানাবেন আপনি কেমন আছেন!
আপনি আল্লাহকে বলুন : [رب ابن لي عندك بيتا في الجنة ] হে আল্লাহ জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর বানান।
আপনি বলুন, আমার স্বামী একজন নিভৃতচারী বুজুর্গ। যিনি সারাক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকিরে মত্ত্ব থাকেন।
আমার পুত্ররা আলেম হাফেজ দাঈ মুবাল্লিগ। আমার পুত্রবধুরা কুরআন তিলাওয়াত করছে।আমার নাতিরা হাফেজে কুরআন। আমার কন্যাদের জামাইরা হাফেজ আলেম।
আমার নাতনিরা কুরআন তিলাওয়াত করছে। আমার নাতনি জামাইগণ কুরআন তিলাওয়াত করছে। আমার স্বামীর ছাত্ররা কুরআন তিলাওয়াত করছে।
কুরআনময় একটি পরিবার আমি রেখে এসেছি। কুরআনের বরকতে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
اللهم اغفر أمنا ببركة القرآن.........
বাসার সব ঠিক আছে শুধু আম্মাজান নেই, এ আম্মাজানের কত স্মৃতি কি করে ভুলবো। আম্মা কয়েকদিন আগে বলছিলেন আমি চলে যাবো। আমি বললাম কোথায় যাবেন? বাড়ীতে যাবেন?
আম্মা: না
মোকেনার বাসায় যাবেন?
আম্মা: না
আল্লাহর কাছে যাবেন?
আম্মা এ কথা শুনে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন!
আমি আম্মাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করি। আম্মা আপনি এত দ্রুত চলে যাবেন বুঝতে পারি নি।
আম্মার জানাযা যেন এক রাজকীয় মহীয়সীর বিদায়।
ঢাকা ফিরে এলাম-পথে পথে কেউ মোবাইল করেনি কতটুকু গিয়েছ, আর কতক্ষণ লাগবে
اللهم الطف بأمنا كما الطف بنا صغارا.....
লেখক: কর্ণধার, মাদানি কুতুবখানা, বাংলাবাজার ঢাকা