আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি কর্মসূচিই প্রধান। একটি হল তা'লিম বা পাঠদান। অপরটি হল তাম্বিহ বা শাসন করা। তাম্বিহ ব্যতীত তা'লিম বেকার। বরং তা'লিমের কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে যায়।
তা'লিমের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা অজানা বিষয় জানবে। যথা- হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ ও ইহকাল-পরকাল ইত্যাদি। আর তাম্বিহ বা শাসনের মাধ্যমে তারা শিখবে আদব-আখলাক, মু'আমালাত-মু'আশারাত, আচরণবিধি ও মানবতাবোধ।
মাতা-পিতার মর্যাদা, উস্তাদ ও গুরুজনদের শান, বড়দের প্রতি ইজ্জত-সম্মান ও ছোটদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এসব গুণাবলি একজন আদর্শ মানুষের জন্য অপরিহার্য।
তাম্বিহ বা শাসন যদি পূর্ণাঙ্গ থাকে তাহলে তাহলে তা'লিম বা পাঠদান কম হলেও চলবে। সুতরাং তা'লিম বা পাঠদান এবং তাম্বিহ বা শাসন একটি অপরটির সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। আপনি বাচ্চাদেরকে শাসন করতে হবে ভয় ও আশা এই দুটির সমন্বয়ে। কথিত আছে "শাসন করা তারই সাজে সোহাহ করে যে জন।" তার কারণ হল জিদ্দি মন কখনো নসিহত কবুল করে না।
১. সোহাগ ব্যতীত শাসন করলে বাচ্চারা বেপরোয়া হয়ে যায়। ২. শাসন ব্যতীত সোহাগ করলে বাচ্চারা বে-আদব হয়ে যায়। ৩. বেশি-বেশি কৈফিয়ত তলব করলে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। ৪. জরিমানা করলে চুরি করা শিখে।৫. অতিরিক্ত চাপ দিলে পলায়ন করে। ৬. চাপ না দিলে পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হবে। ৭. প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে বে-হায়া ও নির্লজ্জ হয়ে যাবে। ৮. শাস্তি প্রদানের পর কাছে রাখবে। না হয় বে-তাছির হয়ে যাবে।
শাসন করার পূর্বে অবশ্যই তাকে তার অপরাধ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। যেন সে তার নিজের অপুরাধ বুঝতে পারে।
মনের মধ্যে জিদ বা গোস্বা নিয়ে কখনো শাসন করবে না। শিশুরা আল্লাহ তা'আলার পবিত্র আমানত। এই দায়িত্ববোধ মাথায় রেখে শাসন করতে হবে। আপনার শাসনের কারণে যেন ছাত্র-ছাত্রীরা পালিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
তাম্বিহ বা শাসন পাঁচ পর্যায়ে করতে হবে। যথা- ১. বুঝানি-সুঝানি ২. সতর্কবাণী ৩. চক্ষু রাঙ্গানি ৪. ডাট ধমক ৫. বেত্রাঘাত
কখনো ভুলেও অন্যান্য বাচ্চাদের সামনে বেত্রাঘাত করা যাবে না। কারণ বাচ্চাদের ইগু খুব প্রকট। তাই এতে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই অধিক। সুতরাং একান্তই যদি বেত্রাঘাত করতে হয় তাহলে অন্য বাচ্চাদের সামনে থেকে আড়ালে নিয়ে পরিমিতভাবে বেত্রাঘাত করতে হবে।
আমাদের দেশে শাসন বলতে বেত্রাঘাতকেই বুঝায়।
আসলে এমন ধারণা করা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। আমাদের থিউরি হল বেত থাকবে কিন্তু বেত্রাঘাত চলবে না। বিশেষ করে মাসুম বাচ্চাদের গায়ে কখনো বেত লাগাবে না।
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেশি বেশি বেত্রাঘাত করা মূলত শিক্ষকের অযোগ্যতারই লক্ষণ। কন্ট্রোলিং পাওয়ার (নিয়ন্ত্রণ শক্তি) কৌশলগত ক্ষমতা থাকলে মারপিট বা বেত্রাঘাত করার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং অহেতুক মারপিট বা বেত্রাঘাত না করে তাম্বিহ বা শাসনের উল্লেখিত পাঁচ পর্যায়ের কৌশল অবলম্বন করতে হবে। নিজের ও ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্বলতার জন্য আল্লাহ তা'আলার দরবারে বেশি বেশি দু'আ ও কান্নাকাটি করতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ নাদিয়াতুল কুরআন শিক্ষাবোর্ডের মু'আল্লিম প্রশিক্ষণের চতুর্থ সবকের সারসংক্ষেপ)
-এটি