আদিয়াত হাসান: সিলেট বিভাগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচশো’র অধিক মাদরাসায় প্রায় এক কোটি পনেরো লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
জানা যায়, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বাের্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’র আয়োজনে বেফাকের সহসভাপতি হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গহরপুরির সভাপতিত্বে ও বেফাকের শুরা ও আমেলা সদস্য, বেফাক সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান জকিগঞ্জির সঞ্চালনায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া গহরপুরে এ মুহতামিম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুদান প্রদান পূর্বে উপস্থিত মুহতামিমদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখে অনুষ্ঠানের প্রধান মেহমান বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান, বিশেষ মেহমান বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান, সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, সহসভাপতি মুফতি ফয়জুল্লাহ, সহসভাপতি মুফতি মনসুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক, মজলিসে খাসের সদস্য মুফতি নিয়ামতুল্লাহ ফরিদী।
মুহতামিম সম্মেলনের সভাপতি হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গহরপুরি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের আকাবির হযরত বছরের পর বছর যেসব ফেতনার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন, যেসব ফেরাকে বাতেলার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন, বিশেষ করে মওদুদী ফেতনার বিষয়ে যেভাবে বারবার সতর্ক করেছেন, আজকে আমরা সেগুলোকে ফেতনা বলে মনে করি না। মৌদুদী ফেতনার বিরুদ্ধে আমাদের আকাবীররা যে সংগ্রাম করেছেন সেই সংগ্রাম সঠিক ছিল কিনা সে বিষয়েও এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে! আজকে আমরা কাদিয়ানী ফেতনার বিরুদ্ধে কথা বলি না। শিয়া ফেতনার বিরুদ্ধে কথা বলি না। আজকে আমাদের মধ্যে তাদের এজেন্ট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ওলামায়ে কেরামের সম্মান নষ্ট করার জন্য নাস্তিক মুরতাদরা একত্রিত হয়েছে। সেই মিছিলে বুঝে না বুঝে আমরাও গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। বড় কস্ট লাগে, যখন দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোট ছোট ছাত্ররা মুরব্বিদের ভুল ধরে, আবার দাবি করে তারা কওমির সন্তান! আমাদেরকে এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যাকালীন সময়েই বেফাক কর্তৃপক্ষ মাদরাসাগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে কোন মাদরাসা কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পরিমাণ কেমন? এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে কিছু সময় লেগেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখতে পেয়েছি কিছু মাদরাসা তেপায়া নেই, কিছু মাদরাসার আবাসিক ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, কিছু মাদরাসা আরো নানানভাবে ক্ষতির মুখোমুখী। বেফাক তার সামর্থ অনুযায়ী আজ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা আশ্চর্যন্বিত হয়েছি, আমাদের ধারারই কিছু মানুষ নিজেদের প্রয়োজন পূরণে এমন দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন যেটা আমাদের আকাবিরদের পথ নয়, যেটা আমাদের আকাবিরদের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য নয়। আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাচ্ছি না। আশা করি, জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। আমি সবার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করব এ কাজ না করার জন্য। আমাদের তো কত সময় বেতন বাকি থাকে। না হয় আরো এক বছর একটু বেশি বেতন বাকি থাকলো। কিন্তু সেই বকেয়া বেতন আদায় করার জন্য এমন কোথাও হাত পাতবো না যেখানে হাত পাতা আমাদের আকাবিরদের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী।’
এছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা বেফাকের দায়িত্বশীলবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পরে বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহিউসসুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ির দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
কেএল/