শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আল্লাহ তায়ালা আদম আ.কে দুনিয়াতে মলমুত্র ত্যাগ করার জন্য পাঠিয়েছেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী।।

মুফতি ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাইয়ের একটি বক্তব্য শুনলাম। যেখান তিনি বলছেন, আল্লাহ তায়ালা আদম আ.কে দুনিয়াতে মলমুত্র ত্যাগ করার জন্য পাঠিয়েছেন!

তিনি আর একটু আগ বাড়িয়ে বলেছেন আদম আ. কোথায় মলমুত্র ত্যাগ করা যায় পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বললেন, ও ফেরেস্তারা, আদম কোথায় মলমুত্র ত্যাগ করবে? জান্নাতের মধ্যে? সেটা তো পবিত্র।

জমিনে? সেটাও তো পবিত্র। গাছের ছায়ায়? সেটাও তো পবিত্র। কোন জায়গায় মলমুত্র ত্যাগ করবে? জান্নাতে মলমুত্র ত্যাগের জায়গা নাই। সুতরাং ওরে পাঠায়া দেও দুনিয়ায়। ও দুনিয়াতে গিয়া মলমুত্র ত্যাগ করুক।

এ বক্তব্য সঠিক নয়। ভুল। একজন আজিমুশশান নবীর ব্যাপারে এমন কথা মোটেও মানানসই নয়। আশা করি ওসমান রা. এর ব্যাপারে যেমন তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করেছেন এ ব্যাপারেও তিনি তাই করবেন।

আদম আ.কে আল্লাহ তায়ালা কেন দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন কোরআন হাদীসে তা সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। লক্ষ্য,উদ্দেশ্য,কর্মসুচি সব কিছুই সেখানে উল্লেখ করা আছে।

মল ত্যাগ করা বিষয়ক প্রচলিত কথাটি কিছু অগ্রহণযোগ্য ও বহুল প্রচলিত কথার উপর ভিত্তি করে লোক সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১ম খন্ডে নিষিদ্ধ গাছের আলোচনা করতে যেয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বিভিন্ন মতামত নিয়ে এসেছেন। তন্মধ্যে আবুল আলিয়া রহ.এর একটি মতামতও তিনি আলোচনা করেছেন।

وقال أبو جعفر الرازي عن الربيع بن أنس عن أبي العالية: كانت الشجرة من أكل منها أحدث، ولا ينبغي أن يكون في الجنة حدث. তিনি বলেন,গাছটি এমন যা খেলে হদস (মল-মুত্র ত্যাগের প্রয়োজন) হবে। আর জান্নাতে এটা করার সুযোগ নেই। তিনি শুধু এতটুকুনই বলেছেন।

কিন্তু আদম আ. কোন গাছ/ফল খেয়েছেন কিনা? খাওয়ার পর মলমুত্র ত্যাগের প্রয়োজন হয়েছে কিনা? এসব নিয়ে তিনি কোন আলোচনাই করেননি।

আর গাছের গুনাগুন বয়ান সম্বলিত মতামতটিও একান্তই আবুল আলিয়া রহ. এর। এর পক্ষে কোরআন ও হাদীসের কোন নির্ভরযোগ্য দলীল পাওয়া যায়না।

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. এতদ সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা করার পর বলেছেন-
قَالَ الْإِمَامُ الْعَلَّامَةُ أَبُو جَعْفَرِ بْنُ جَرِيرٍ، رَحِمَهُ اللَّهُ(١٤) : وَالصَّوَابُ فِي ذَلِكَ أَنْ يُقَالَ: إِنَّ اللَّهَ جَلَّ ثَنَاؤُهُ نَهَى آدَمَ وَزَوْجَتَهُ عَنْ أَكْلِ شَجَرَةٍ بِعَيْنِهَا مِنْ أَشْجَارِ الْجَنَّةِ، دُونَ سَائِرِ أَشْجَارِهَا(١٥) ، فَأَكَلًا مِنْهَا، وَلَا عِلْمَ عِنْدِنَا بِأَيِّ شَجَرَةٍ كَانَتْ عَلَى التَّعْيِينِ؟ لِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ لِعِبَادِهِ دَلِيلًا عَلَى ذَلِكَ فِي الْقُرْآنِ وَلَا مِنَ السُّنَّةِ الصَّحِيحَةِ
সারমর্ম হল,নিষিদ্ধ ঘোষিত গাছ/ফল কোরআন হাদীসে নির্ধারিত নয়/সুনিশ্চিতভাবে বিবৃত নয়। সুতরাং এটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারিনা,প্রয়োজনও নেই।

সুতরাং আমারও এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা অধিকতর নিরাপদ। আল্লাহ আমাদেরকে সিরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল অবিচল থাকার উপর তাওফিক দান করুন।

সূত্র: মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ