আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের যখন সংসারের চাকা সচল রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে, তখন সমাজের একটি শ্রেণির আয় ও সঞ্চয় বেড়েছে।
এই শ্রেণির মানুষরা নতুন করে কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬০টি। সব মিলে ২০২২ সালের জুন শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। তিন মাস আগেও গত মার্চে যা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭টি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে কোনো দুর্যোগ ও সংকটকালীন সময়ে একটা শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য একটা শ্রেণি এ সুযোগে প্রচুর মুনাফা করে। হঠাৎ করে তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারী বাড়ার সেটা একটা কারণ। তবে এর মাধ্যমে প্রকৃত কোটিপতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে না, কারণ অনেকে টাকা পাচার করে বিদেশের ব্যাংকে জমা রাখে।
এ ছাড়া ক্যাশ টাকা ব্যাংকে না রেখে বিভিন্ন খাতে যারা বিনিয়োগ করছে, তাদের সম্পদের পরিমাণটাও এখানে আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি বিশেষ শ্রেণির কাছে দিন দিন আয় ও সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। এর ফলে ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বড়রা বেশি বড় হচ্ছে আর নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের আয় কমে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই ছোটরা বৈষম্যের শিকার। কোভিডের সময়ও বড় ব্যবসায়ীরা বেশি সুবিধা পেয়েছেন,
এখনো পাচ্ছেন। দেশের ব্যবসা থেকে শুরু করে বৈদেশিক বাণিজ্য সব জায়গায়ই বড় ব্যবসায়ীরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পান।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুন শেষে এক থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮৪১টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৮৬৫টি হিসাবে। তাদের অ্যাকাউন্টে মোট টাকার পরিমাণ ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১০ থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৭৬৩টি অ্যাকাউন্টে। ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা রয়েছে এক হাজার ৭১৯টি অ্যাকাউন্টে। এক হাজার ১৫১টি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা। ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার মধ্যে হিসাব রয়েছে ৮৮৩ জনের।
৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০২টি। ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩০৭ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৬২১টি। আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৮০৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরুর সময় দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। এর দেড় বছর পরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি এবং ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।
-এটি