আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: অফিসে যেতে-আসতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করতেন মো. এমদাদুল হক (৬৫)। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে তিনি আগের বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের সব ভাড়া পরিশোধ করলেন।
মো. এমদাদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকায় বসবাস করেন। তিনি দুদুকের অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল।
সোমবার দুপুরে ‘দি ট্রেন’ নামে এক ফেসবুক পেজে এ যাত্রীকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন সোহেল রানা ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি।
পেজটির অ্যাডমিন সোহেল রানা ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, এমদাদুল হক সততার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি যখন কাউন্টারে বসে আগের বিনা টিকেটে ভ্রমণের টাকা পরিশোধের জন্য কথা বলছিলেন, তখন আমি কাউন্টারের পাশেই ছিলাম। ব্যস্ততার কারণে, সময়ের অভাবে কিংবা ইচ্ছাকৃত বহুভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত বিনা ভাড়ায়, বিনা টিকেটে, ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকি। এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই এটা নিয়ে ভাবেন না যে বিনা ভাড়ায় ট্রেনের ভ্রমণ করাটা কতটা অনৈতিক বা গুনাহর কাজ। তবে কিছু মানুষ এখনও আছে যারা এগুলো নিয়ে ভাবেন ও বিবেকের তাড়নায় অনুশোচনায় ভোগেন। ইদানিং বেশ কয়েকজন যাত্রীকে পেয়েছি যারা কাউন্টারে এসে আগে ভ্রমণ করা ভাড়ার দায় কিভাবে দেয়া যায় এ নিয়ে কথা বলতে বা ভাবতে। মানুষের মধ্যে অনুশোচনা জেগেছে। এটাই বড় বিষয়।
ট্রেনের আগের ভাড়া পরিশোধকারী মো. এমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেনা রেখে যতই ভালো কাজ করি না কেন, এই দেনার দায় তো কোনো ভালো কাজ দিয়ে শোধ করার উপায় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরির সুবাদে প্রায়শই রাজধানী ঢাকায় ট্রেনে আসা যাওয়া করতাম। এতে অনেক সময় ব্যস্ততা, ভিড় বা সময় স্বল্পতার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে পারি নাই। জীবনের শেষ বয়সে এসে আগের ট্রেনের ভাড়া না দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি অনুশোচনায় ভুগছিলাম। সেই অনুশোচনা থেকেই আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে এসে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর ২ হাজার ৫৩০ টাকার সমমূল্যের আসন বিহীন টিকিট কেটে দায় মুক্তি হলাম।’
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার জানান, ‘ভুলভ্রান্তি করে এক সময় উনি টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। এখন রেলওয়ে থেকে দায় মুক্তির জন্য আজ তিনি ট্রেনে আগের ভ্রমণের ভাড়া দেন। তিনি ২ হাজার ৫৩০ টাকা রেলওয়েকে দিয়েছেন। উনি শেষ বয়সে এসে এই কাজ করাতে আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ খুবই খুশি। এখন থেকে ট্রেনে যাতায়াতে উনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন তাদের জন্য বিষয়টি অনুকরণীয় হতে পারে।
কেএল/